ব্লগ-এ আমার একযুগ পূর্ণ হল!
আমি সাধারণত বছর শেষে বর্ষপূর্তি-মর্ষমুর্তি নিয়ে উহ আহ করি না! তবে এবছর মনে হল এক যুগ বাংলা ব্লগে কাটিয়ে দিলাম! সেই হিসেবে ডাইনোসর আমলের ব্লগার আমি! ভাবলাম দুই চারটা বাক্য নিক্ষেপ করা উচিৎ!
২০১০ সাল, আমি তখন কোরিয়াতে আন্ডার-গ্রাজুয়েট করি। সকাল থেকে রাত ১২টা-১টা একটা পর্যন্ত ল্যাবে থাকি! কোরিয়াতে ল্যাবে সবাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকে, তবে সারাক্ষণ কাজই যে করে তেমন না, খায় দায়, আড্ডা গল্প এবং কাজ সব কিছুই চলে ল্যাবে। আমি সরকারী স্কলারশিপ পেতাম, সেই হিসেবে ল্যাব কাজ না করলেও চলত তারপরও ল্যাবে কাজ করতে আমার ভাল লাগত, প্রফেসরও কিছু মালপানি দিত মাস শেষে, বিন্দাস জীবন! আসলে একভাবে চিন্তা করলে জীবনে সেভাবে পরিবর্তন আসেনি এই একযুগে, তখনও ল্যাবে কামলা দিতাম এখনো ল্যাবে কামলা দেই, শুধু স্থান বদল হয়েছে! যাইহোক, ল্যাবে বসে তখন পত্র পত্রিকা পড়তাম, ব্লগের ব্যাপারে কোন ধারনা ছিল না! কোন এক পত্রিকাতে যেন দেখছিলাম ব্লগিং এর ব্যাপারে, আমি গুগল করে একটি ব্লগ এর ঠিকানা পেয়ে গেলাম। ব্লগের নামটা এখন আর মনে নেই, সেখানে কিছুদিন ব্লগিং করলাম, তারপর খোজ পেলাম প্রথম আলো ব্লগের! প্রথম আলোতেই মূলত দীর্ঘ কাল ছিলাম বন্ধ হবার আগ পর্যন্ত! সেই হিসেবে আমার ব্লগিং এর সঠিক দিন তারিখ মনে নেই!
প্রথম আলোতে ব্লগিং করে অনেক আনন্দ পেয়েছিলাম, অনেক পরিচিত ব্লগার ছিল। আলো ব্লগ বন্ধ হয়ে গেলে আরো কিছু ব্লগে থিতু হবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোথাও সেই সাধ পাইনি। পরে সামু ব্লগে এলাম। সত্যিকার অর্থে সামুতে এসে সেই একই রকম ভাল লাগা শুরু হল, সামুতে ছয় বছর! প্রথম আলোতে যারা ব্লগিং করত তাদের বেশীরভাগকেই এই সামুতেই পেলাম। আমি ব্লগিং এর শুরুতে যেভাবে ব্লগিং করতাম এখনো একই রকম গতিতে ব্লগিং করছি মানে কিছুদিন নিয়মিত তারপর আবার গায়েব হয়ে যাই, অর্থাৎ আমি আজন্ম নিয়মিতভাবে অনিয়মিত ব্লগার!
অনেকে যারা প্রথম ব্লগিং করে এবং এক পর্যায় এসে ব্লগিং-এ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, তাদের অভিযোগ ব্লগে-এ আগের মত মজা নেই, আগে অনেক হেভি-ওয়েট ব্লগার ছিল ইত্যাদি বলে উহ-আহ করেন, তবে আমার আগেও যেমন ভাল লাগত এখনো তেমনি লাগে। আমি নিয়মিতভাবে অনিয়মিত ব্লগার তাই হয়ত! এই ১২ বছরে অনেক হেভি-ওয়েট এবং আড্ডাবাজ ব্লগার দেখেছি। অনেক প্রতিভাবান ব্লগার যারা এসেই ধুমায়া ব্লগিং করত, মানে কাঁথা বালিশ নিয়ে ব্লগেই পরে থাকত এবং তাদেরকেই খুব শীঘ্রয়ই ব্লগ থেকে হারিয়ে যেতে দেখেছি!
ব্লগের একটি চমৎকার দিক হচ্ছে এখানে ভিন্ন মতের মানুষগুলোকে এক সাথে পাওয়া যায়, তবে অন্যান্য যোগাযোগ মাধম্য যেমন ফেইসবুকেও আছে। পার্থক্য হল, ব্লগে ভিন্ন মতের মানুষগুলো মন খুলে নিজের কথা বলতে পারে, এখানে সবার মাঝে মন্তব্য আধান প্রধানে পারস্পরিক একটি মিথস্ক্রিয়া তৈরি হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ন্য দিক হল যারা ব্লগিং করেন তাদের একটি কমন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা সবাই কম বেশী শিল্প সাহিত্য চর্চা করেন, অথবা লেখালেখি করেন অথবা সংস্কৃতিতে আগ্রহ আছে, এরকম একই বৈশিষ্ট্যের মানুষ এক সাথে পাওয়া বিশাল কিছু।
যাইহোক বাংলা ব্লগিং টিকে থাক যুগ যুগ ধরে! সবার ব্লগিং আনন্দময় হোক।
আজ এ পর্যন্তই। জগতের সকল প্রানী সুখী হোক!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২২ ভোর ৫:৩৮