somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যা ক্রসফায়ার হিস্ট্রি অব যুবদল নেতা দিদার

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৩ জানুয়ারী, গভীর রাত। পাশের বাড়ির দূর সম্পর্কীয় এক চাচাত ভাই নাইট কোসে ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে নামার পর সিএসনজি বেবি-টেক্সি করে চরশাহীর রামপুরের গ্রামের বাড়িতে আসছিল। তাদের গাড়িটি কামার হাট নামক স্থানের কাছাকাছি আসলে কয়েকজন পুলিশ তাদের গাড়িটির গতিরোধ করে। বলে সামনে যাওয়া যাবে না। একেতো গভীর রাতে গ্রামের নির্জন রাস্তা, তার উপর পুলিশের ব্যারিকেড, আবার পেছনে সশস্ত্র র‌্যাব সদস্যরা দাঁড়িয়ে। এমতাবস্থায় তাদের দোয়া কুনুত পড়া ছাড়া অন্যকোন উপায় নেই।

কতক্ষণ সময় এ ভাবে কেটে গেছে তার হিসেব নেই। কিছুক্ষণ পর রাতের স্তব্ধতা ভেঙ্গে ঠুশ্ ঠুশ্ ঠুশ্ গগন বিদারী আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আশপাশের জনপদ। এরপর আবারও স্তব্দতা। তবে সামনের পুলিশ-র্যাবের মধ্যে কিছুটা চাঞ্জলতা দেখা যায়। আর কতক্ষণ পর র‌্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ওদের গাড়িকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলে সামনে পুলিশ সদস্যরা এইবার তাদের রাস্তা ছেড়ে দেয় আর বলে এদিক-ওদিক না তাকিয়ে গাড়ি চালিয়ে সোজা চলে যা। তোদের এলাকার দিদাইরাকে মেরে ফেলেছি, সকালে এসে লাশ নিয়ে যাশ....

ঘটনার মাইল খানেক দূরে অবস্থিত আমাদের গ্রামের বাড়িটি অবসস্থিত। রাতে আওয়াজ শুনলেও তেমন আমলে নিই নাই। আগের রাতে বলে দেয়ায় সকালে আমার সবচেয়ে প্রিয় চিতল পিঠা বানানো দেখে রান্নাঘরে বসে বসে পিঠা খাচ্ছিলাম। এমন সময় এলাকারেএক ছোট ভাই এসে খবর দিল, ভাইয়া দিদার ভাইকে মেরে ফেলেছে র্যাব। মূহুর্তে শোকার্ত হয়ে যায় গোটা পরিবেশ। আর খেতে ভাল লগাছিল না, তাই বাড়ি থেকৈ বের হতেই রাতের ঘটনার স্বাক্ষি পাশের বাড়ির চাচাত ভাইটির সাথে দেখা হয়, এবং ক্রসফায়ারের ড্রামা শুনি।

২১ জানুয়ারী আমি বাড়িতে গিয়েছিলাম। বিকেলে বাজারে গিয়ে এলাকার মানুষজনের সাথে দেখা করছিলাম, এমন সময় কিছু ছেলে আসলে মানুষজনের মুখে কিছুটা ভীতির চাপ ভেষে ওঠে। কিছুক্ষণ ৩২/৩৩ বছরের একছেলে এসে হেন্ডশেক করলে পাশের একজন পরিচয় করিয়ে দেয় ইনি দিদার ভাই, আমাদের বড় ভাই.......।

দিদার ছেলেটির নাম চট্টগ্রামে থেকেই শুনেছি। যা শুনেছি, তাতে ওকে তেমন পছন্দ করতাম না। সৌদৈী আরব ফেরত এই দিদার যুবদলের অপর এক নেতা সোলায়মান (৯৬ সালে একে আ,লীগ সন্ত্রাসীর এতই আহত করেছে যে, এখনো সে সুস্থ নয়। এমপি এ্যানী ভাইয়ের খুবই কাছের কর্মী হিসেবে পরিচিত) এর সাথে দ্বন্দে লিপ্ত হয়ে আলাদা গ্রুপ তৈরী করে। মজার ব্যাপার হলো ২০১৩ সালের শেষ দিকে আ,লীগের ক্ষমতা শেষ হয়ে এলে আ,লীগের কয়েকটি সন্ত্রাসীগ্রুপ চন্দ্রগঞ্জের জিসান ও চরশাহীর দিদারের দলে ভীরে যায়। দিদারের সাথে ভীরে এরা সোলায়মানের সাথে একাধিক কয়েকটি সংঘাতের করে।

সে যাই হোক, ২১ তারিখ সন্ধ্যায় আমাদের দেখা হওয়ার পর যে যার গন্তব্যে চলে যাই। পরদিন সকাল ১০টার দিকে খবর পাই, রাত ৩টার দিকে দিদারকে তার শশুর বাড়ি হতে র‌্যাব গতুলে নিয়ে গেছে। সারাদিন অনেক জলপনা-কল্পনা আর অনেক তপ্লিবাহকের দরজায় দৌড়া-দৌড়ি করেও তার অবস্থান জানা সম্ভব হচ্ছে না। তাকে যেন মেরে না ফেলা হয়, সেজন্য নোয়াখালীর আ,লীগের এক এমপি একরাম চৌধুরীকে দিয়ে চেষ্টা চালানো হয়।

শেষে র‌্যাবের একটি অংশ তার পরিবার থেকে ৩০ লাখ টাকা চাওয়া হয় তাকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে। শেষে তার পরিবার বিশ লাখ টাকা যোগার করে। কিন্তু আর্মির জনৈক অফিসার যিনি দিদারের কোনভাবে আত্মীয় বা পরিচিত হন, তিনি বললেন টাকা দিয়ে কোন লাভ হবে না। তাকে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করার জন্য উপরের নির্দেশ আছে। অতএব এতগুলো টাকা দিয়ে টাকাও হারাবে ছেলেকেও হারাবে।

তারাপরও মানুষের মন! তাই ২৩ তারিখ সকালে টাকা দেয়ার মানুষিক প্র্তিুতি নেয় তার পরিবার। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি! তার আগেই গভীর রাতে ক্রসফায়ার নামক রঙ্গ নাটকের মাধ্যমে কেড়ে নেয়া হল একজন মানব সন্তানের জীবন। হত্যা করা হল এক বিরোধী দলীয় নেতাকে। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আজ হয়তো অনেকেই বেঁছে আছে, কিন্তু কাল সে আর হয়ত খুন হবে গায়ে সন্ত্রাসীর তকমা লাগিয়ে। তার অপরাধ সে বিরোধী দলীয় জোট কিংবা দলের কর্মী, সমর্থক অথবা নেতা।

একদিন এসব হত্যাকান্ডের শোধ অবশ্যই নেয়া হবে। কিন্তু তারপরও কি ফিরে আসবে? যারা চলে গেছে তারা?
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতার আসনে বেশী দিন থাকা শাসকদের মাঝে খালেদা জিয়া সর্বসেরা

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৩



আমার এক ছাত্র চাকুরীর পরীক্ষায় ৫২ নম্বর পেয়ে ৩ জনের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। দ্বিতীয় জন পেয়েছিল ৪৯ নম্বর এবং তৃতীয় জন পেয়েছিল ৪৭ নম্বর। সে হিসাবে খালেদা জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপসহীনতার নাম খালেদা জিয়া: যন্ত্রণার বিনিময়ে গণতন্ত্রের প্রাচীর

লিখেছেন জুয়েল তাজিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৭



ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে একাত্তরের বিভীষিকায় বন্দিত্ব, অল্প বয়সেই বিধবা হওয়া—বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের শুরুটাই ছিল যন্ত্রণার অধ্যায়। এরপর ইতিহাস যেন তাঁকে একের পর এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×