
অবশেষে ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তটি সরকার বাতিল করেছে। সরকারকে অনেক ধন্যবাদ।
ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তন করলে দেশের বা জনগণের ক্ষতি হতো, সেই ক্ষতি এড়াতেই সরকার তা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এল এবং সে কারণেই সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি—বিষয়টি এ রকম নয়। বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন দিবাভাগ বড় এবং রাত ছোট, তখন ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনলে বাস্তবিক কিছু সুবিধাই পাওয়া যায়। খুব বেশি না হলেও কিছু বিদ্যুতের সাশ্রয় অবশ্যই ঘটে। কিন্তু বহু যুগের অভ্যাসবশত বাংলাদেশের অনেক মানুষ ঘড়ির কাঁটাকে যেন এক অপরিবর্তনীয় বিষয় বলে মনে করে, এর পরিবর্তন চায় না—এমন অভিজ্ঞতাই দেখা গেল গত বছর, যখন প্রথমবারের মতো এই পরিবর্তনটি আনা হয়েছিল। সরকার এটি করেছিল ভালো উদ্দেশ্যেই। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা গ্রহণ করেনি। বিশেষ সমস্যা হয়েছিল ঘড়ির কাঁটা আবার পিছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্তে বিলম্ব করায়। যাই হোক, পূর্বনির্ধারিত সময়ের পরে হলেও সরকার ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ায় জটিলতার অবসান ঘটেছিল।
এ বছর আবার এপ্রিলের শুরু থেকে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনার ঘোষণা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা মহলে প্রতিবাদ উঠল। স্কুলগামী শিশুদের অভিভাবক, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মরত মানুষসহ নানা মহল থেকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হলো। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এর বিরুদ্ধে অনেক লেখালেখি চলল। এসবের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় ফুটে ওঠে। সেটা হলো: আমরা সহজে কিছু বদল করতে চাই না, চিরাচরিত অভ্যাসের ওপর আমাদের নির্ভরতা প্রায় অনড়। ইউরোপের অনেক দেশে বছরে দুবার একদমই বিনা আওয়াজে, অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে যে কাজটি সব মানুষ করে থাকে (ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনা ও পিছিয়ে দেওয়া), আমাদের দেশে সেটি নিয়ে এত জটিলতা, এত ঝামেলার কারণ হলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতার ওই অনড়তা। আমরা যেন ধরেই নিয়েছি, ঘড়ির কাঁটা স্থির করে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা; এর নড়চড় করা চলবে না।
এ রকমই যদি হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত, তাহলে আর কী করা! গণতন্ত্রে জনমতের চেয়ে বড় কিছু নেই। সরকারকে ধন্যবাদ এ জন্য যে, জনমতকে উপেক্ষা না করে বরং জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে এসেছে। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার গুরুত্ব অনেক। নির্বাচনে প্রচুর ভোট পেয়ে যাঁরা সরকার গঠন করেন, তাঁরা সাধারণত মনে করেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ম্যান্ডেট তাঁরা পেয়ে গেছেন, এখন নিজেদের ইচ্ছামতো যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, নতুন করে জনমত যাচাই করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। সরকারের বড় বড় সিদ্ধান্তের প্রতি অধিকাংশ মানুষের সমর্থন আছে কি নেই, তা যাচাই করা এবং সে অনুযায়ী বিচার-বিবেচনা করে চলাই একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সঠিক আচরণ। অনেক সময় সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলো এ রকম রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার করে যে, সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে, একবার এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, পরে তার উল্টো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এসব কথা বলা হয় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে। সে জন্য সরকারও নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অনড় থাকতে চায়, ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারতপক্ষে চায় না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




