somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুটবলার সালাউদ্দিন ভাইয়ের কাছে একটি আবেদন

০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনাব সালাউদ্দিন,

আপনাকে অভিনন্দন!

টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন, আমি আনন্দিত।

আপনার সাথে, আপনার দলের সাথে আমার সম্পর্ক সেই ক্লাস ওয়ান থেকে। যদিও স্টেডিয়ামে গিয়ে প্রথম খেলা দেখি ১৯৭৭ সালে। আপনি খেলেছিলেন সেদিন। প্রতিপক্ষ মোহামেডান। বড় ভাইয়ের সাথে গিয়েছিলাম খেলা দেখতে। শুনেছিলাম লায়নেল পিরিচ ও মহেন্দ্র পালাকে শ্রিলঙ্কা থেকে নিয়ে এসেছে আবাহনী, জিততেই হবে। খুব উত্তেজনার ম্যাচ।

স্টেডিয়ামের বাইরে কি বিশাল লাইন! বাপ রে বাপ! ব্ল্যাকারদের কাছ থেকে টিকিট কিনে লাইনে দাড়াই, এর মধ্যেই পুলিশের অতর্কিত লাঠির বাড়ি। শক্ত করে হাত ধরে আগলে রাখেন ভাইয়া। কিন্তু এই লাঠির কারণ জানিনা। হতে পারে আবাহনী বনাম মোহামেডান, এই নাম দুটোইতো একটা বড় কারণ।

আপনার শেষ খেলাটিও দেখেছিলাম। আপনাকে ফুলের মালা দিয়ে বিদায় জানানো হয়েছিল। আপনি চিরকালের প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের হয়ে খেলেছিলেন সেদিন। ওই দিনটিতে খুবই মন খারাপ ছিল কারণ ততদিনে আমি জেনে গিয়েছিলাম যে আমাদের একজন হিরো আছেন এবং তাঁর নাম সালাউদ্দিন, আজকের পর যার খেলা আর দেখতে পাব না।

তেরো বছর আগে ২০০৬ সালে যখন আপনি প্রথমবারের মতো বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হন আমি উদ্বেল হয়েছিলাম আনন্দে। দৃশ্যটা এখনো ঝকঝক করে। খবরটা পড়ে আমি সেদিন আমার ছোট্ট বড় মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে অনেক আবেগ নিয়ে স্বগতোক্তি করেছিলাম, 'এবার যদি বাংলাদেশের কিছু হয়'। মেয়েটি উদ্বিগ্ন চোখে জিজ্ঞেস করেছিল, 'বাংলাদেশের কি হয়েছে আব্বা? তুমি কি বাংলাদেশে যেতে চাও?'

কিন্তু অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়।

২০০৬ সালে নির্বাচনে জিতলেন। ৪ বছর পর যা পারেননি তা করবেন বলে আরও ৪ বছর নিলেন। এরপর ৮ বছরে যা পারেননি তা করে দেখাবেন বলে আরও ৪ বছর আদায় করে নিলেন। এই ১২ বছরে যা পারলেন না, আগামী ৪ বছরে তাই করবেন বলে ২০২০ এ নির্বাচিত হয়ে গেলেন। যে কাজ ১২ বছরে শুরু বা সমাপ্ত, কিছুই করতে পারেননি তা মাত্র ৪ বছরে কী যাদুতে সম্ভব করবেন?

একটু বলুননা, পিলে চমকানো এক কোটি টাকার সুপার কাপ দেশের ফুটবলের উন্নয়নে কী অবদান রেখেছে? কোটি টাকা খরচ করে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়াকে এনে কোথাও কি এতোটুকুও জোয়ার আনতে পেরেছেন?

আপনি সেই চার বছরে চমকে দিয়েছিলেন আশা আর আইডিয়া দিয়ে, কিন্তু চার বছর, আট বছর, বারো বছরেও পায়ের নিচের মাটিটুকুও শক্ত করতে পারেনি আমাদের জাতীয় দল। আরো কতকিছুই বললেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলবে বলেছিলেন, ফলাফল? এশিয়ার মধেই আমরা এখন সম্ভবত ৪৩/৪৪ নাম্বার ভালো দল।

আপনার এই এক যুগে নতুন কতজন মানসম্পন্ন খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে? পাইপলাইনের কি অবস্থা? সারাদেশে কি ফুটবল ছড়িয়েছে? নিয়মিত খেলা হচ্ছে কি? পেশাদার ফুটবলের চর্চা কি হচ্ছে? ক্লাবের কাছে নতজানুভাব কি কমেছে? দলবদলে অনিয়ম বিদায় হয়েছে? লিগ পেছানো বন্ধ হয়েছে? অ্যাকাডেমি তৈরি হয়েছে? চলছে? পাতানো খেলারই বা কি হিল্লে হলো?

একটু জোয়ারই তো চেয়েছিলাম, প্লাবনতো চাইনি কেউ।

আপনি কি ততখানিই ব্যার্থ সংগঠক এবং প্রশাসক নন, যতখানি খেলোয়াড় হিসেবে সফল ছিলেন?

ক্লাস ওয়ানের যে ছেলেটি বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার হেঁটে একা আবাহনী মাঠে আপনাদের খেলা দেখতে এবং নিজে খেলতে চলে যেতো প্রতিদিন বিকেলে, সেই ছেলেটির এসব কথার কোন মূল্য আপনার কাছে না থাকলেও তার আবেগের মূল্যটা অন্তত থাকা উচিত।

ফুটবল ছিল একটা উন্মাদনা, একটা ধর্ম, একটা পরিচয়। আজকে বাংলাদেশের ফুটবলের খোঁজ রাখে কয়জন?

আপনি এখনো আমার হিরো। কিন্তু বাফুফের সভাপতি হিসেবে এটাই যেনো আপনার শেষ টার্ম হয়।

ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

আমি
(বাংলাদেশের ফুটবলের দৈন্যদশায় মানসিকভাবে গুরুতর আহত একজন ফুটবল প্রেমী)
২০২০

সংশোধনীঃঃ
স্মৃতনির্ভর এই লেখাটতে একটি তথ্যগত ভুল আছে। সালাউদ্দিন শেষ ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে খেলেননি। আমার মনে হচ্ছিলো তিনি কিছুক্ষণের জন্য দল বদলেছিলেন ভালবাসার প্রকাশের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৫৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×