somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে ট্রাম্প এখনো প্রেযিড্যান্ট নির্বাচিত হতে পারেন

০৮ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটি পড়ার আগে মনে রাখবেন-
অ্যামেরিকার ৫০টি স্টেইটের(state) প্রত্যেকের নিজস্ব নিয়ম কানুন আছে। অনেক ব্যাপারেই সরকারি হস্তক্ষেপ চলেনা এবং সরকার সেটা করেও না। নিজস্ব স্বাধীন প্রশাসন আছে। করিমকে হত্যার দায়ে রহিমের বিচারের রায় একেক স্টেইটে একেক রকম হবে। গম চুরির দায়ে ধলা মিয়ার শাস্তি স্টেইট ভেদে আলাদা হবে।

তাহলে দেখা যাক কি করে ট্রাম্প এখনো প্রেযিড্যান্ট হতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টঃ আমেরিকার নির্বাচনে প্রেযিড্যান্ট সরাসরি পাবলিক ভৌটে নির্বাচিত হয় না।

তাহলে এইযে সেদিন নির্বাচন হয়ে গেল সেটা তাহলে কী ছিল?
-- সেটা ছিল আসলে ইলেক্টর(elector) নির্বাচিত করা এবং তাঁদেরকে ভবিষ্যতের একটা বিশেষ দ্বায়িত্বে নিয়োজিত করার দিন যদিও ব্যালটে টিক দিতে হয়েছে ট্রাম্প বা বাইডেনকে। এর ব্যাখ্যা আসবে সামনে। আসুন এখন ইলেক্টরদের সম্পর্কে কিছু জেনে নেই।

অ্যামেরিকার ৫০টা স্টেইটে মোট elector এর সংখ্যা ৫৩৮ জন। Elector দের আবার কোটা আছে। যেমন, Nevada(লাস ভেগাসের জন্য বিখ্যাত)তে আছে ৬ জন ইলেক্টর আবার ক্যালিফোর্নিয়াতে আছে ৫৫ জন ইলেক্টর। স্টেইট ছোট হলে কম ইলেক্টর, বড় হলে বেশি ইলেক্টর।

ইলেক্টরের(elector) কাজ কি?
-- ইলেক্টরের কাজ হলো কাউকে নির্বাচিত(elect) করা।

কাকে নির্বাচিত(elect) করবে?
-- প্রেযিড্যান্ট, ভাইস প্রেযিড্যান্ট কে হবে সেটা ঠিক করবেন।

তাহলে মানুষ যে ভৌট দিল তার কী হবে?
-- অ্যামেরিকার জনগণ সরাসরি প্রেযিড্যান্ট, ভাইস প্রেযিড্যান্ট নির্বাচন করে না। এঁরা ভৌটের মাধ্যমে তার পছন্দের দলের ইলেক্টরদের উপর দেশের প্রেযিড্যান্ট, ভাইস প্রেযিড্যান্ট নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পণ করেন। স্বাভাবিকভাবেই সেই ইলেক্টররা নিজেদের লোককেই নির্বাচিত করবেন যদি জয়ী হন। যেমন এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দল জয়ী হয়েছে। কাজেই আশা করা যায় ডেমোক্রেটিক ইলেক্টররা জনগণের আকাঙ্খা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন এবং বাইডেন ও কামালা কে প্রেযিড্যান্ট ও ভাইস প্রেযিড্যান্ট হিসেবে নির্বাচিত করবেন।

ঠিক আছে। কবে উনারা ঠিক করবেন কে হবেন প্রেযিড্যান্ট, কে হবেন ভাইস প্রেযিড্যান্ট?
-- ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে এক সম্মেলনে একত্রিত হয়ে ভৌট দিয়ে প্রেযিড্যান্ট, ভাইস প্রেযিড্যান্ট নির্বাচন করবেন।

আচ্ছা, এই ইলেক্টররা যদি 'কোন কারণে' হেরে যাওয়া দলকে ভৌট দিয়ে দেন তখন কি হবে?
-- তখন সেই দল থেকে প্রেযিড্যান্ট, ভাইস প্রেযিড্যান্ট নির্বাচিত হয়ে যাবে যদি মোট ২৭০ জন ইলেক্টর একসাথে হয়ে যায়।

তাহলে তো ট্রাম্পের এখনো সুযোগ আছে।

-- ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ পর্যন্ত আছে। যদি আমাদের দেশের মতো 'চমক' দেখিয়ে ৬৬ জন ডেমোক্রেটিক ইলেক্টরের সাপোর্ট আদায় করতে পারেন, তাহলে আছে।

এটা কি আসলেই সম্ভব?
-- সম্ভব, তবে ১০-১৫ ভৌটের পার্থক্য নিয়ে পরাজিত হলে এর সম্ভাবনা বেড়ে যেতো। আগে এমন কয়েকবারই চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ এর নির্বাচনেই হয়েছে। রিপাবলিকান ৫ জন ইলেক্টর হিলারি কে সাপোর্ট দিয়েছিল, আবার ২ জন ডেমোক্র্যাট ইলেক্টর ট্রাম্পকে সাপোর্ট দিয়েছিল। আরও ৩ জন ভৌট দানে বিরত ছিল। সেবার রিপাবলিকান পার্টি ৩০৭ টা ইলেক্টোরাল ভৌট পাওয়ায় এতে কোন সমস্যা হয়নি ট্রাম্পের। অতীতের এ সমস্ত তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ৩১ টা স্টেইট এখন নিয়ম করেছে যে নিজের দলকে ভৌট না দিলে ভৌট বাতিল হয়ে যাবে। দল থেকে বহিষ্কার, জরিমানা, পদ বাতিল ইত্যাদি শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। সুপ্রিম কৌর্টও এতে সায় দিয়েছে।

এরা তো তাহলে রাজাকার!
-- বলতে পারেন। তবে ওদের একটা নাম আছে, Faithless elector. অবিশ্বাসী নির্বাচক। আমি বলি অবিশ্বস্ত নির্বাচক।

এই ইলেক্টররা আসেন কোথা থেকে?
-- এরা দলের সাথে নানাভাবে জড়িত থাকেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন, বা প্রার্থীর কাছের কেউ, বা বর্ষীয়ান ত্যাগী সমর্থক। জাতীয় নির্বাচনের আগেই সব দল কেন্দ্রীয়ভাবে বা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি স্টেইটে ইলেক্টরদের একটা প্যানেল তৈরি করে ফেলেন। আবার কোনও স্টেইটে জাতীয় নির্বাচনের সময়ই ইলেক্টরদের নির্বাচিত করা হয় একই ব্যালটে।

তাহলে বাইডেন যে ইতোমধ্যে ভাষণ দিয়ে ফেললো! আমরা কি আনন্দ করবো না?
-- মনে রাখবেন, popular vote এ বিভিন্ন স্টেইটে ডেমোক্রেটিক দল জয়লাভ করাতে সেই সব স্টেইটের সব ইলেক্টোরাল ভৌট বাইডেনই পাচ্ছেন। আর সেসব ভৌট যেহেতু তিনি পাচ্ছেন এতে করে তিনিই অফিসিয়ালি অ্যামেরিকার প্রেযিড্যান্ট এর দায়িত্ব নেবেন দুইমাস পর। এই মুহূর্তে শুধু এটা ভাবুন যে তিনি জয়ী হয়েছেন। অযথা টেনশ্যন নেবেন না।

শেষ একটা প্রশ্ন, 'ইলেক্টোরাল কলেজ'টা আসলে কি?
-- এই যে ইলেক্টরদের কথা হলো এতোক্ষণ, এই electoral college হচ্ছে তাঁদের নিয়ে শিক্ষা, গবেষণা, নিয়ম, আইন প্রনয়ণ, ইত্যাদি বিষয়ে চর্চা করার একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান।

ভালো থাকুন সবাই।

২০২০ এর অ্যামেরিকার এই নির্বাচনের মতো আনন্দমুখর high octane ড্রামা সমৃদ্ধ দেশীয় একটি নির্বাচন দিনের আলোয় মঞ্চায়নের অপেক্ষায় থাকলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×