"Real power is,... I don’t even want to use the word, fear”, said Donald Trump.
And yes, Trump loves real power and he is a master of fear.
সিংহাসনে বসে ট্রাম্প ব্যান করে দিলেন সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের তার দেশে প্রবেশ। কারণ? মুসলিমরা সন্ত্রাসী। এতে গত চার বছরে কি অ্যামেরিকায় সন্ত্রাস কমেছে? বরং FBI এর তথ্যমতে, ২০১৫ তে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ২০১৬ সালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হেইট ক্রাইম বেড়েছে ১৯%। সাম্প্রতিককালে হেইট ক্রাইম ইহুদিদের বিরুদ্ধেও আশংকাজনকহারে বেড়েছে। মোট হেইট ক্রাইমের প্রায় ৫৮% ই ইহুদি বিরোধী। ঘৃণার নাৎসিবাদের পুনরুত্থান ঘটছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে।
ইংল্যান্ডের Neo Nazi বা নব্য নাৎসি গ্রুপ Britain First এর লিডার Jayda Fransen এর অনেক প্রোপাগাণ্ডা ভিডিও ট্রাম্প নিজের টুইটারে অহরহ শেয়ার করেন। ট্রাম্পের সমাবেশ মানেই neo Nazi white supremacist দের প্রকাশ্য উৎসব।
অ্যামেরিকার ইরাক যুদ্ধে নিহত একজন পাকিস্তানি অ্যামেরিকান সৈনিকের পরিবারকেও ছাড়েননি ট্রাম্প, ধমকে দিয়েছিলেন। সারা অ্যামেরিকায় নিন্দার তুফান বয়ে গিয়েছিল কিন্তু ট্রাম্পের গলফ খেলা বন্ধ হয়নি এতে। ২০২০ এ নির্বাচিত হয়ে মুসলিমদের ভিসা দেয়ার সময়, 'আপনি কি শরিয়া নিয়মে বিশ্বাস করেন, না অ্যামেরিকার সংবিধানে বিশ্বাস করেন' - প্রশ্নটি জুড়ে দেয়ার প্রস্তাবের কাজ চলছিল।
ট্রাম্পের এই ভয় ছড়ানো বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম আমার প্রাক্তন কলিগ University of Detroit এর প্রফেসর খালেদ বাইদুন এর কাছে। তিনি আমাকে তাঁর একটা সাক্ষাৎকার পাঠিয়ে দিলেন। বিবিসি'র সাথে সাক্ষাৎকারে খালেদ বলেন, "ট্রাম্প ইসলামোফোবিয়াকে শুধু প্রচারের কাজেই ব্যবহার করছেন না তিনি ইসলামভীতি কে নির্বাচনে জেতার অন্যতম উপায় বলে বিশ্বাস করেন"।
অনেক ট্রাম্প সিম্প্যাথাইযার(sympathiser) কে বলতে শুনেছি, ট্রাম্প তো যুদ্ধে জড়ায়নি, যুদ্ধ লাগিয়ে মানুষ খতম করেনি। জনপদ ধ্বংস করেনি।
এই যুক্তি খন্ডনের আগে আপনাদের সাথে একটা থিয়োরির পরিচয় করিয়ে দেই। থিয়োরির নাম chaos theory বা বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব। এর জনক Edward Lorenz যা বলেছিলেন তার ব্যাখ্যা হলো, ঢাকায় একটি প্রজাপতি পাখা ঝাপটালে এর প্রভাবে ক্যালিফোর্নিয়ায় মরুঝড় উঠতে পারে। প্রজাপতির নামে অনেকে তাই একে বাটারফ্লাই ইফেক্ট বলেও ডাকেন।
ট্রাম্প কিন্তু এই বাটারফ্লাই ইফেক্টের আশ্রয় নিয়েই ইসলামবিদ্বেষ কে বৈশ্বিক রূপ দিয়েছেন। অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে ঘৃণার বীজ রোপণ করেছেন। শ্বেতাঙ্গশ্রেষ্ঠত্ববাদের সফল পূনরুজ্জীবন ঘটিয়েছেন বিশ্ব জুড়ে।
একজন সাধারণ মানুষ যখন বলে, 'এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে', সে বক্তব্য তার স্ত্রী, ভাই, বোন সহ দুচারজন সহমর্মির বাইরে আর কাউকে স্পর্শ করে না। কিন্তু এ কথাটিই একজন কামরুল হাসান যখন বলেন, সবাই তেতে উঠেন। এক মুখ থেকে কোনও গ্রুপে, গ্রুপ থেকে দলে, দল থেকে সমাজে, সমাজ থেকে দেশের আনাচে কানাচে প্রোপাগাণ্ডা হয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, testimonial. হাসান মাহমুদ অ্যামেরিকাকে bottomless basket বললে মন্ত্রীসভার বাইরে আর কেউ হাসবেনা, কিন্তু হেনরি কিসিঞ্জার ইতিহাস হয়ে যান। কেন? কারণ ব্র্যান্ড ভ্যালিউ(brand value).
ট্রাম্প তার বর্নবাদী 'সাদারাই শ্রেষ্ঠ' মতবাদ ও মুসলিম বিদ্বেষ কে সারা বিশ্বে রফতানিই শুধু করেননি, সাপোর্টও দিয়েছেন। জনপ্রিয় করেছেন। ট্রাম্পের উদগ্র বাসনার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে হাঙ্গেরি, ইজরেইল, ইন্ডিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, চিন সরকারিভাবে মুসলিম হেনস্থার পথে এগিয়েছে। জেরুজালেম ইজরেইলের রাজধানী হয়েছে। ক্যানাডার মত সুবোধ বালকের দেশও বাটারফ্লাই ইফেক্টের বাইরে থাকতে পারেনি।
আমাদের বিশ্ব নাগরিক হতে হবে। চিন্তা ভাবনায় প্রসারতা আনতে হবে। আমি ভালো থাকলেই হবে না, মলদোভার অনাহারী ছোট্ট শিশুটির জন্যও আমাদের হৃদয়কে কাঁদতে হবে। ব্যক্তিগত লাভক্ষতি হিসেব করে বিশ্ব নাগরিক হওয়া যায় না। আমার লাভ হচ্ছে আর যার ক্ষতি হচ্ছে তাঁকে আমি চিনি না, তাই কিছু করতে হবে না - এই ভাবনা self destructive, আপনাকে সরাসরি না খেলেও আপনার সন্তানকে খাবে। এই সন্তানরাই বড় হয়ে একটি স্বার্থপর, লোভী, ও মানবিক মূল্যবোধহীন জাতি গড়বে। সেই লক্ষণ কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না?
২০১৫ সালে আমি আমার স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে SWOT analysis করতে দিয়েছিলাম। ছোট মেয়েটি Threat analysis করতে গিয়ে বলেছিল, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প এর বর্নবাদী আচরণ ও ইসলামোফোবিয়া'।
হাজার মাইল দুর থেকে যে লোকটি অন্যদেশের, অন্য বর্ণের, অন্য ধর্মের একটি স্কুল গৌয়িং মেয়ের মনেও ভীতি সঞ্চারিত করতে পারে, সে তার নিজের দেশের জনগণের জন্য কি পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে বলে মনে হয়?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৮