somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলবর্তী ডাঙার আখ্যান

১০ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খাদ্যান্বেষণে ঘুরে বেড়াতো। খাদ্য সংগ্রহই ছিল কর্ম, নেশা, খেলা, আমোদ। প্রকৃতি ও নিসর্গের মায়ায় এবং নৃশংসতার মধ্য দিয়ে মানুষ এগিয়ে গেছে। ঘুরে বেড়িয়েছে। তবে এ ঘুরে বেড়ানো আজকের যন্ত্রসভ্যতার উপজাত বোহেমিয়েজম নয়, প্রাণের তাগিদে এবং নিজেদের অজান্তেই প্রজন্মের সোপান নির্মাণের উছিলায়। তারা পথ চলেছিল, জলে ভেজা যে ভ্রƒণ থেকে তাদের জন্ম হয়েছিল, সে জলের পথরেখা ধরে। আজীবন মানুষ জলের অনুবর্তী হয়েই থাকে। জলকে পেলে মানুষ আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ে, এই আবেগ আত্মার আত্মীয়ের জন্য। তার নিয়তির সঙ্গে জল বাঁধা পড়ে। তাই আদিম মানুষ যতই যাযাবর হোক, জলের কাছাকাছি থাকতে চেয়েছে, শিকার শেষে নদী-নালার পাশেই আস্তানা গড়ার প্রয়াস চালিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আমরা দেখি পৃথিবীর যাবতীয় সভ্যতার বিস্তার নদীগুলোকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে।

নদী-সমুদ্রের জলহাওয়ায় যে সভ্যতার উন্মেষ ঘটলো, তার আগে হয়তো আদিমকালের কোনো সময় কেউ এক টুকরো জমিতে সীমানা ঘিরে বললো- এ জমি আমার। বলতে গেলে সেদিন থেকে আর আদিম সহজিয়া, সরলতা আর বিশুদ্ধতা রইলো না। হঠাৎ মানুষের ইতিহাস বেশিমাত্রায় বদলে গেল। আদিমকালও আর রইলো না। ঘুরতে থাকলো সভ্যতার চাকা। এক সভ্যতার পতন আরেক সভ্যতার উত্থান। সভ্যতা যতই এগিয়ে যেতে লাগলো, বাড়লো সংঘাত। রাজ্যের অভ্যন্তরের ক্ষমতা লোভ আর বাইরের শক্তির আধিপত্যের আকাক্সক্ষা। ক্ষমতাবানদের বাসনা বাস্তবায়নে চরিতার্থ করতে এলো রাষ্ট্র নামক কাঠামো। দখলদারিত্ব নিয়ে চললো অভিযান আর তথাকথিত আবিষ্কারের কাহিনী। কেউ আবিষ্কার করলো আমেরিকা, কেউ ভারতবর্ষ, কেউ অস্ট্রেলিয়া, কেউবা মধ্যপ্রাচ্য। যেন এসব ভূখ- কখনো ছিল না! এসব স্থানের মানুষ ও মানুষকেন্দ্রিক ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা হলো। এভাবে আবিষ্কৃত ডাঙা দখল করে উপনিবেশ স্থাপন করলো ইউরোপীয় শক্তি। আমরা ভারতবর্ষের অংশ হিসেবে ব্রিটিশের দখলীভূত হলাম। চললো ঔপনিবেশিক শাসন। ব্রিটিশ চলে গেল, রেখে গেল বশংবদ অনুচর। পাশাপাশি কর্পোরেট পুঁজির শাসন চলছে। আর তথাকথিত আধুনিকতার নামে মানসিক হীনমন্যতা তৈরি করে ঔপনিবেশিকদের অধিগত করে রাখার প্রকল্প বিদ্যমান। প্রান্তীয়করণের মাধ্যমে পৃথিবীর বেশি সংখ্যক মানুষকে শাসন করছে অল্প কিছু মানুষ।

গাঙেয় ব-দ্বীপ এই বাংলাদেশ যখন মানসিক, ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা-সম্পর্কের বিভিন্ন আধিপত্যের পেষণীতে ভঙ্গুর সে প্রেক্ষাপটে জলবর্তী ডাঙার শিল্পী এসএম সুলতানের জলছবিগুলো নতুন এক ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। সুলতানের ছবিগুলোকে আমরা আক্ষরিকভাবেই জলছবি বলতে পারি। জলে ভাসা গ্রাম আর মনুমেন্টাল টসটসে পুরুষ ও জলবতী স্বাস্থ্যবতী নারী এবং তাদের যাপিত জীবন- এই তো সুলতানের ছবি। কতিপয় চিরচেনা মোটিফের মাধ্যমে সুলতান তার দ্রোহ, অধীনস্থের কণ্ঠস্বর আর তাদের ঐতিহ্যগত ভাবগতি আঁকেন। গাঙেয় ডাঙ্গার ইতিহাস আঁকেন। জলবর্তী মানুষের দাঙ্গা, জমির লড়াই, ধান মাড়াই, ধান তোলা, হালচাষ, মাছ ধরা, অবসর আর নারীর জলকে চলা- এর সঙ্গে মিলেমিশে আছে বৃক্ষ, তরুলতা, চাষের গরু, প্রকৃতি ও নিসর্গ। সবকিছু মিলে যে বাস্তুসংস্থান তা যেন একক বাস্তব সত্তা। কোনো কিছুই আলাদা নয়। বিশালদেহী কর্মঠ মানুষ, কর্ম যাকে মহান করে তুলেছে, আশপাশের পরিমাপের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখে বেশিরকম বাড়ন্ত- তা কখনো অসঙ্গতি জাগ্রত করে না। অনেক ক্ষেত্রে ছবিতে পারসপেক্টিভের বালাই নয়, অন্তর্গত বোধ আর ছিন্নপত্রের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে সব উদ্ভটতা স্বাভাবিক, সঠিক।

বাকী অংশ পড়ার জন্য
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×