somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখা নিয়ে ঝক্কি

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখকের দৌড় কতদূর? মুক্তচিন্তার সীমা কতটুকু? কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। আইনি বিবেচনায়ও কোনো স্থির সংজ্ঞা নেই। অবশ্য বিধি-নিষেধ কিছু রয়েছে। তাই এ নিয়ে যত মামলা হয়েছে সেগুলোর রায়ের ব্যাপারে বিচারকের বিবেকের ওপর অধিক নির্ভর করতে হয়েছে। আমরা বিখ্যাত লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার, ফ্যানি হিল কিংবা টপিক অব ক্যানসারের মামলার কথা জানি। এগুলো মূলত ছিল শ্লীল-অশ্লীলতার প্রশ্নে। প্রথম মামলাটি চিন্তার ক্ষেত্রে যেমন বড় ধাক্কা দেয়, তেমনি নতুন ভাবনার পথ খুলে দেয়। যুগে যুগে মুক্তচিন্তা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে অথচ কোনো যুগই সেই অর্থে মুক্তচিন্তার পরিসর মেপে দেয়নি।
দেশ-বিদেশে লেখা নিয়ে প্রচুর মামলা হয়েছে দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিধিতে। কপিরাইট, পাইরেট, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অশ্লীলতা, উত্তেজক লেখা নিয়ে ভূরি ভূরি মামলার নজির রয়েছে। সব মামলা যেমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না, তেমনি সব লেখাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। আমাদের দেশে ছাপাখানার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে ব্রিটিশ জমানায়। প্রথমে যন্ত্রটি এসেছিল পর্তুগিজ মিশনারিদের হাত ধরে। উদ্দেশ্য দেশীয় ভাষায় পুস্তক রচনা করে খ্রিস্টধর্মের বাণী প্রচার। কালক্রমে ছাপাযন্ত্রটি ভারতীয় উপমহাদেশে চিন্তা ও মননে বিপুল পরিবর্তন বয়ে আনে। অগুনতি সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। সৃজনচর্চার ব্যাপ্তি বাড়ে। তবে নন্দনচর্চার পাশাপাশি নিন্দাচর্চার কমতি ছিল না। উনিশ শতকে ‘রুচিবিকার’ নামে এক কবিতা নিয়ে হয় মামলা। তখন সনাতনপন্থী আর ব্রাহ্মসমাজ ছিল যথাক্রমে অনাধুনিক ও আধুনিকতার প্রতীক। ব্রাহ্মসমাজে কুসুম কুমারীর জনপ্রিয়তা ছিল। তার মেলামেশা ছিল অবাধ। জনশ্রæতি ছিল উপেন্দ্রলাল মজুমদারের সঙ্গে মেয়েটির প্রণয় ছিল। হেরম্বচন্দ্র মিত্রের সঙ্গে বিবাহের পরও পূর্বসম্পর্ক অটুট রয়েছেÑ এটা ছিল সনাতনী হিন্দুদের মুখরোচক আলোচনার বিষয়। ঠিক এমনি সময় হিতবাদী পত্রিকায় ১৮৯৬ সালের ২৪ জুলাই ‘রুচিবিকার’ প্রকাশিত হয়Ñ
শুনিবে না শুনিবে না মধুপ ঝঙ্কার/কুসুুমে কুরুচি মাখাÑ/ভ্রমরে লুকায়ে রাখা... কুসুমের কোমলতা মাধুরী অপার/ কিন্তু তার পবিত্রতা/ শুধু কল্পনার কথা...।
ব্রাহ্মসমাজ পত্রিকার কর্ণধার বাবু কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদের বিরুদ্ধে মানহানিকর মামলা ঠুকে দেয়। ইংরেজ বিচারকের বোধগম্যতার জন্য কবিতাটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়। ভাবার্থ বের করার জন্য ডাকা হয় শ্রেষ্ঠ কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের। অতঃপর জুরিগণের সর্বসম্মত রায়ে আসামি কালীপ্রসন্ন নয় মাসের কারাদÐে দÐিত হন। মামলার পুরো কাহিনীটি জেনে আমার মনে হয়েছে, রায়টি যথার্থ। কেননা লেখাটি ছিল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এবারের একটি জাতীয় দৈনিকের নববর্ষ সংখ্যায় হাসনাত আবদুল হাই লিখেছিলেন ‘টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি’। গল্পটি নিয়ে মামলা হয়নি; কিন্তু হামলে পড়েছিল অনেকে। এটিকে জনজাগরণ ও নারীর মর্যাদাহানিকর বিবেচনা করা হয়েছে। প্রতিবাদ যে প্রবল ছিল সেটি ওই পত্রিকা ও লেখকের ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যেই প্রমাণ। পাশাপাশি মুক্তচিন্তা ও লেখকের স্বাধীনতার প্রশ্নটিও উচ্চকিত হয়। নিজস্ব বোধতাড়িত রেখা যদি কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যায়, সেটি কি নিছক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে দেখলেই চলবে?
কয়েক বছর আগে একজন আমলা (সচিব) একটি কবিতা লিখে ওএসডি হন। পরবর্তী হেনস্তার কথা আমরা জানি না। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেয়াল’ প্রকাশের আগে আদালত কর্তৃক সংশোধনের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় টকশো ও কলাম লেখার কারণে অনেককেই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। এগুলো তো ইঙ্গিত। আল মাহমুদ যখন লেসবিয়ানদের নিয়ে ‘পুরুষসুন্দর’ লেখেন তখন আমার সেটি অশ্লীল মনে হয়েছিল। কিন্তু একসময় আবিষ্কার করলাম সমাজের অতলে চলছে সম্পর্কের ক্ষয়। এ সমাজে সমকামিতার সংখ্যা নেহাত কম নয়। আশপাশেই আছে। তাদের নিয়ে আমি লিখলাম ‘চন্দ্রবালক’ উপন্যাস। লেখাটি উদার মননের কয়েকজন সম্পাদক লুফে নিলেন; কিন্তু ছাপাতে পারলেন না। কারণ সময়টা নাকি খারাপ! আমরা কবে সেই সমাজ পাব যেখানে যুক্তিটাই বড়, বাস্তবতাই সত্য।

ফকরুল চৌধুরী
১৮/০৪/১৩
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×