সারাটা দিন পরিশ্রম করে এসে মাত্র
ফ্যানের নিচে গা এলিয়ে দিল জাহিদ।
আজ সারাদিন তার খুব ধকল গেছে।
সপ্তাহের শেষ দিনগুলোতে ফ্যাক্টরিগুলো
মাল এক্সপোর্ট - ইমপোর্ট বেশি করে, আর
জাহিদের মতো মানুষগুলো আছে বলেই
এত দ্রুত কাজগুলো সম্পন্ন হয়।
আজ অবশ্য এত বেশি উঠানামা করা লাগেনি
জাহিদের। মাত্র চার তলা থেকে
কাপড়ের বাক্সগুলো নামিয়েছে আর নতুন
আনা কিছু সুতা ও গার্মেন্টস এক্সেসরিস
তুলেছে। অন্যান্য দিন সাত আট তলাতেও
উঠানামা করতে হয়।
ভার্সিটির টিউশন ফি জমা দেয়ার সময়ও
চলে গেছে। যে করেই হোক, অন্তত পরীক্ষার
আগে হলেও সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে
হবে। এ মাস থেকে নাকি আবার সাড়ে সাত
পার্সেন্ট ভ্যাটও দিতে হবে ।
এ নিয়ে আবার জাহিদের বন্ধুরা মিছিল,
মিটিং মানববন্ধন ও করছে। অবশ্য জাহিদ
একদিন গিয়েছিল মানববন্ধন এ ।কিন্তু
কাকফাটা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে
বাসায় আসার পথে চায়ের দোকানে
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য শুনার পর তার
মেজাজটাই বিগড়ে গিয়েছিল।
বলে কি ব্যাটা? পাঁচ - সাত লাখ যারা দেয়,
তাদের
কাছে এ কিছুই না!
আরে বেটা সাত আট লাখ টাই চোখে পড়ল ,
বছরে দুবার দুবার করে যে টেকা দেয়া লাগে
এটা চোখে পড়ল না?
কি আর করা !!!
বাড়ি থেকে তো আর টাকা পাঠাবে না ।
মেস বিল, টিউশন ফি সব তাকেই তুলতে
হবে -- সে যতো কষ্টই হোক না কেন।
একবার ভেবেছিলো এই সেমিস্টার টা ড্রপ
দিয়ে গার্মেন্টস এ চাকরি নেবে। টাকা ও
কিছু জমা হবে, বোঝাটাও একটু হালকা
হবে। এভাবে সপ্তাহান্তের দিনগুলোতে যে
আর অন্যের বস্ত্রের বোঝা বইতে ভালো
লাগে না।
কখন যে পাশ করে বের হবে আর ফ্যাক্টরির
ইঞ্জিনিয়ার বাবুর মতো আরামে চাকরি
করবে। সিজিপিএ টাও বাঁধ সাধলো।
গত সেমিস্টার এ 3.6 না এলে অন্তঃত
একটা সেমিস্টার ড্রপ দেয়ার ডিসিশন
ফাইনাল করা যেত।
এখনো যে সিঁড়ি অনেক বাকি।
ফ্যানের নিচে চিত হয়ে পড়ে থেকে
জাহিদ ভাবতে থাকে কাপড়ের বাক্স
মাথায় একটা একটা করে সিঁড়ির ধাপ পাড়ি
দিচ্ছে আর বোঝাটা যেন একটু একটু হালকা
হচ্ছে। কিন্তু এ বোঝা যে হালকা হবার নয়,
যতই চাপ কমুক না কেন, নতুন চাপ এসে
পড়বেই।তা জাহিদ জেনেও স্বপ্ন দেখে
যায় ----
চাপমুক্তির স্বপ্ন
------
ব্লু সার্কিট