তাড়াহুড়োয় কলমটা ফেলে এসেছে আবীর। পাশের সুন্দরী মেয়েটির কাছে কলম চেয়ে কিছুটা লজ্জিত হলো সে, কেমন বাঁকা চোখে তাকাল মেয়েটা । যদিও কলম দিল মেয়েটি, কলমে ছিল বার্বি ডলের স্টিকার লাগানো। আমতা আমতা করে আবীর বলল , ধন্যবাদ। আমি আবীর,
বিএফ শাহীন । হা...হা...হা , অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল মেয়েটি। বি...এফ ??? এমন প্রাণখোলা হাসি আবীর কখনো দেখেনি । হাসি থামিয়ে মেয়েটি বলল , আমি রামিসা। এক্স ক্যান্ট পাবলিক ।
ক্লাসে হাতে গুনা গোটা পাঁচেক মেয়েদের মধ্যে রামিসা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। হাসিখুসি-প্রাণোচ্ছোল , অনেক ফ্রেন্ডলি। বাবা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছে। তাদের স্বপ্ন ছিল, মেয়ে একদিন ডাক্তার হবে। কি না কি, পান্তা ভাতে ঘি ।
এদিকে আবীর বাবা-মায়ের বাধ্য ছেলে। বাবা নামকরা ইঞ্জিনিয়ার, তাই তাকেও ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে – ইহাই যেন বিধির লিখন। তো বিধির লিখনকে খন্ডাতেই হোক কিংবা তাহা শিরোধার্য রাখবার জন্যেই হোক , আজ তারা দুজনই নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু ছেলে রকি। এমন কোন কাজ বাকি নাই রকি করতে পারে না। তবে অফ প্রিয়ডে পুরো ক্লাসকে মাতিয়ে রাখার জন্যে সে একাই যথেষ্ঠ । এভাবেই হাসি আড্ডা মজায় কিভাবে কিভাবে যেন চলে যায় ১ সেমিস্টার। রামিসা ও আরো ৪-৫ জন ছেলে কেবল সব বিষয়ে পাশ করতে পারল। আর বাকিরা সবাই কোনটা না কোনটাতে গেছে ।
এভাবে নিয়মিত বোরিং ক্লাস লেকচার, এসাইনমেন্ট , ল্যাবের প্যারায় তাদের প্রায় সবারই যায় যায় অবস্থা। অনেকেই মুখ ফুটে তেমন কিছু বলে না, একবার যেহেতু শুরু করেছে এর শেষ দেখেই ছাড়বে। তবে রকি আর সবার থেকে আলাদা... সে প্রতিনিয়তই ডিন স্যারকে বলে – স্যার প্রেসার ইক্যুয়েলস টু , ফোর্স বাই এরিয়া তো স্যার। আর কত ??
দিন যায় দিন আসে , ছোট ছোট কিছু হাসি আড্ডা গল্পে মুখর হয়ে উঠে এই ১৬ ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা। নানান কিছিমের মানুষে গড়া এই ১৬ ব্যাচ। কেউ এক বছর ড্রপ দিয়ে ভর্তি হয়েছে, কেউবা দু বছর। আবার কেউবা চাকুরি করে পড়ালেখা করছে। কেউ কেউ ৪-৫ টিউশনি কিংবা কোচিং এ ক্লাস নিতে ব্যাস্ত। সবচেয়ে মজার বিষয়, এই ব্যাচে বিবাহিত ছেলেই আছে দুই দুইটা, অধিকাংশ ব্যাচেলর ছেলে এদের কাছে দীক্ষা নিয়ে থাকে।
রামিসা আর আবীরের মধ্যে বন্ধুত্ব দিন দিন জমতে থাকে। যথারীতি ফাইনাল ইয়ার এর প্রজেক্ট সাবমিট করার তারিখ পড়ে ১৬ ব্যাচের, আর কাকতালীয়ভাবে আবীর-রামিসা পড়ে একই গ্রুপে। তাদের প্রজেক্টটাও খুব দারুণ হয়। প্ল্যানিং থেকে শুরু করে সবকিছুই তারা হাতে হাতে করেছে । তো অন্য সব প্রজেক্ট থেকে তাদের টাই সেরা বিবেচিত হলো ।
একদিন তাদের শেষ সেমিস্টারটিও চলে গেল, র্যা গ ডে ...। যে যার মতো কর্মক্ষেত্রে যোগ দিল।
অনেকদিন পর সমাবর্তনে দেখা হলো আবীর আর রামিসার । দুজনের বন্ধুত্ব আগের মতোই আছে , তবে কেউ কাউকে ভালবাসি কথাটি বলতে পারেনি । আবীর বলল , আচ্ছা রামিসা – একটা উত্তর দিবে ? ফাইনাল ইয়ারের প্রজেক্টের শেষে তোমাকে যে ট্রানিজিস্টর টা দিয়ে বলেছিলাম ৭ নং পিনের সাথে কমন বেস কানেকশন দিতে, দিছিলা ? একটু ভেবে রামিসা বলল, দিছিলাম তো, বাট ট্রানিজিস্টর টা তো পুড়েই গেল। অনেকটা ব্যাথা বুকে নিয়ে বিদায় নিয়ে চলে যায় আবীর। সন্ধ্যায় রামিসা সেই ট্রানজিস্টর আরেকটা বাজার থেকে এনে ঠিকঠাকভাবে সংযোগ দেয় । ডিসপ্লে তে চোখ রেখে চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারে না, I LOVE YOU লেখা। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় রামিসা। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে । আবীর অনেক আগেই ছুটি নিয়ে চলে গেছে সকল বর্তনী সংযোগ ছিন্ন করে।