somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রানজিস্টর

৩০ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাড়াহুড়োয় কলমটা ফেলে এসেছে আবীর। পাশের সুন্দরী মেয়েটির কাছে কলম চেয়ে কিছুটা লজ্জিত হলো সে, কেমন বাঁকা চোখে তাকাল মেয়েটা । যদিও কলম দিল মেয়েটি, কলমে ছিল বার্বি ডলের স্টিকার লাগানো। আমতা আমতা করে আবীর বলল , ধন্যবাদ। আমি আবীর,
বিএফ শাহীন । হা...হা...হা , অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল মেয়েটি। বি...এফ ??? এমন প্রাণখোলা হাসি আবীর কখনো দেখেনি । হাসি থামিয়ে মেয়েটি বলল , আমি রামিসা। এক্স ক্যান্ট পাবলিক ।
ক্লাসে হাতে গুনা গোটা পাঁচেক মেয়েদের মধ্যে রামিসা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। হাসিখুসি-প্রাণোচ্ছোল , অনেক ফ্রেন্ডলি। বাবা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছে। তাদের স্বপ্ন ছিল, মেয়ে একদিন ডাক্তার হবে। কি না কি, পান্তা ভাতে ঘি ।
এদিকে আবীর বাবা-মায়ের বাধ্য ছেলে। বাবা নামকরা ইঞ্জিনিয়ার, তাই তাকেও ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে – ইহাই যেন বিধির লিখন। তো বিধির লিখনকে খন্ডাতেই হোক কিংবা তাহা শিরোধার্য রাখবার জন্যেই হোক , আজ তারা দুজনই নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু ছেলে রকি। এমন কোন কাজ বাকি নাই রকি করতে পারে না। তবে অফ প্রিয়ডে পুরো ক্লাসকে মাতিয়ে রাখার জন্যে সে একাই যথেষ্ঠ । এভাবেই হাসি আড্ডা মজায় কিভাবে কিভাবে যেন চলে যায় ১ সেমিস্টার। রামিসা ও আরো ৪-৫ জন ছেলে কেবল সব বিষয়ে পাশ করতে পারল। আর বাকিরা সবাই কোনটা না কোনটাতে গেছে ।
এভাবে নিয়মিত বোরিং ক্লাস লেকচার, এসাইনমেন্ট , ল্যাবের প্যারায় তাদের প্রায় সবারই যায় যায় অবস্থা। অনেকেই মুখ ফুটে তেমন কিছু বলে না, একবার যেহেতু শুরু করেছে এর শেষ দেখেই ছাড়বে। তবে রকি আর সবার থেকে আলাদা... সে প্রতিনিয়তই ডিন স্যারকে বলে – স্যার প্রেসার ইক্যুয়েলস টু , ফোর্স বাই এরিয়া তো স্যার। আর কত ??
দিন যায় দিন আসে , ছোট ছোট কিছু হাসি আড্ডা গল্পে মুখর হয়ে উঠে এই ১৬ ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা। নানান কিছিমের মানুষে গড়া এই ১৬ ব্যাচ। কেউ এক বছর ড্রপ দিয়ে ভর্তি হয়েছে, কেউবা দু বছর। আবার কেউবা চাকুরি করে পড়ালেখা করছে। কেউ কেউ ৪-৫ টিউশনি কিংবা কোচিং এ ক্লাস নিতে ব্যাস্ত। সবচেয়ে মজার বিষয়, এই ব্যাচে বিবাহিত ছেলেই আছে দুই দুইটা, অধিকাংশ ব্যাচেলর ছেলে এদের কাছে দীক্ষা নিয়ে থাকে।
রামিসা আর আবীরের মধ্যে বন্ধুত্ব দিন দিন জমতে থাকে। যথারীতি ফাইনাল ইয়ার এর প্রজেক্ট সাবমিট করার তারিখ পড়ে ১৬ ব্যাচের, আর কাকতালীয়ভাবে আবীর-রামিসা পড়ে একই গ্রুপে। তাদের প্রজেক্টটাও খুব দারুণ হয়। প্ল্যানিং থেকে শুরু করে সবকিছুই তারা হাতে হাতে করেছে । তো অন্য সব প্রজেক্ট থেকে তাদের টাই সেরা বিবেচিত হলো ।
একদিন তাদের শেষ সেমিস্টারটিও চলে গেল, র্যা গ ডে ...। যে যার মতো কর্মক্ষেত্রে যোগ দিল।
অনেকদিন পর সমাবর্তনে দেখা হলো আবীর আর রামিসার । দুজনের বন্ধুত্ব আগের মতোই আছে , তবে কেউ কাউকে ভালবাসি কথাটি বলতে পারেনি । আবীর বলল , আচ্ছা রামিসা – একটা উত্তর দিবে ? ফাইনাল ইয়ারের প্রজেক্টের শেষে তোমাকে যে ট্রানিজিস্টর টা দিয়ে বলেছিলাম ৭ নং পিনের সাথে কমন বেস কানেকশন দিতে, দিছিলা ? একটু ভেবে রামিসা বলল, দিছিলাম তো, বাট ট্রানিজিস্টর টা তো পুড়েই গেল। অনেকটা ব্যাথা বুকে নিয়ে বিদায় নিয়ে চলে যায় আবীর। সন্ধ্যায় রামিসা সেই ট্রানজিস্টর আরেকটা বাজার থেকে এনে ঠিকঠাকভাবে সংযোগ দেয় । ডিসপ্লে তে চোখ রেখে চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারে না, I LOVE YOU লেখা। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় রামিসা। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে । আবীর অনেক আগেই ছুটি নিয়ে চলে গেছে সকল বর্তনী সংযোগ ছিন্ন করে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×