somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামাতে ইসলামী ধর্মের প্রবক্তা মওদুদীর কিছু ইসলাম বিকৃতির নমুনা

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবুল আলা মওদুদী (১৯০৩-১৯৭৯) পাকিস্তান ভিত্তিক দল জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা যা বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের ধর্ম ব্যবসা খুলে বসেছে। প্রথম দিকে মওদুদী পাকিস্তান রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করলেও ১৯৪০ এর দশকে এসে নিজের ভোল পাল্টায় এবং তখন থেকেই সে পাকিস্তানে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। সে ইসলামকে একটি জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রচার করতে শুরু করে। ইসলামের মৌলিক নীতি ও ভিত্তি সমূহ, যেমন: তাওহীদ, এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, সালাত, সাওম, যাকাত, হ্জ্জ ইত্যাদিকে উপেক্ষা করে মওদুদী শাসন ব্যবস্থার ওপর বেশি জোর দেয়। রাস্ট্রের কর্তৃত্ব আকাংক্ষার ব্যাপারে তার মতামত:

“তাই কর্তৃত্বের আকাংক্ষা ছাড়া কোন দর্শণে আস্থাজ্ঞাপন করার কোন অর্থ নেই, এবং কোনটি আইন সম্মত বা কোনটি নিষিদ্ধ অথবা নির্দেশিত আইন, কোনটিরই কোন মানে নেই।"

- তাজদীদ উদ দ্বীন, পৃষ্ঠা ৩২ - ৩৩

অথচ হযরত মুহাম্মদ (স) পরিস্কার ভাবে কর্তৃত্বের লালসাকে পুরোপুরি নিষেধ করে দিয়েছেন; ওনার মতে কর্তৃত্ব ও শাসন করার লোভ মানুষকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। তিনি বলেন:

“নেতৃত্বের আকাংক্ষা করোনা। কেননা তোমরা যদি নেতৃত্বের আকাংক্ষা করে তা পাও তবে সে দায়িত্ব তোমাদের একাই পালন করতে হবে। কিন্তু আকাংক্ষা না করেই যদি তোমরা নেতৃত্ব পাও তবে তোমরা সাহায্য পাবে (আল্লাহর কাছ থেকে)।”

- মুসলিম, ৪৬৯২

এখানে মওদুদীর কিছু ইসলাম বিকৃতির নমুনা তুলে ধরছি। এখানে পবিত্র কুরআন, হাদীস এবং মওদুদীর বিভিন্ন লেখা ও ভাষন থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে; এখানে পরিষ্কার যে মওদুদী জেনেশুনে ইসলামের বিকৃতি ঘটানোর অপচেষ্টা করেছে। তাতেও যদি গন্ডমূর্খ জামাত-শিবিরের সমর্থকদের কিছুটা বোধ হয়।

আল্লাহ আমাদের এধরনের দুরাত্মার খপ্পড় থেকে রেহাই দিন।

“শাসন ও কর্তৃত্ব করার নামই হচ্ছে ধর্ম, শাসন ব্যবস্থার আইন হল শরিয়া এবং উপাসনা হচ্ছে শাসন ব্যবস্থার ঐতিহ্যকে অনুসরন করা’’ - খুতবা, পৃষ্ঠা ২১৭।

“লোকে সাধারণত বলে ইসলামের পাচটি স্তম্ভ: এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, নামাজ, যাকাত, রোযা এবং হজ্জ। এবং এ গুলোই ইসলাম এই ভুল ধারণার মধ্যে তারা অনেকদিন ধরে আছে। এসলে এটা একটা বড় বিভ্রান্তি যা মুসলমানদের পথ এবং কর্মকে ধ্বংস করেছে।“

(কাউসার, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫১- মওদুদীর ভাষণ থেকে উদ্ধৃত)

অথচ সহীহ বুখারী এবং মুসলিম শরীফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ইসলামের মূল স্তম্ভ পাচটি: ১. শাহাদাহ ২. সালাত ৩. বাধ্যতামূলক যাকাত প্রদান ৪. সাওম এবং ৫. হজ্জ।

শুধু তাই নয়, মওদুদী হাদীস শরিফের ও সমালোচনা করতে ছাড়েনি। মওদুদী এ সম্পর্কে বলেছে:

“কোন সত্যবাদী মানুষই এই দাবী করতে পারবেনা যে ৬ - ৭ হাজার হাদীসের (সহীহ বুখারী শরিফ) সবগুলোই পুরোপুরি ঠিক।“

(১৯৫৫ সালের ১৫ মে বরকত হলে মওদুদীর দেয়া ভাষণ থেকে; যা পরে আল-ইতেশাম পত্রিকায় ২৭ মে ১৯৫৫ এবং ৩ জুন ১৯৫৫ তারিখে প্রকাশিত হয়।)

শুধু এই নয়, হযরত মুহাম্মদ (স) চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) হারাম ঘোষনা করেছেন। কিন্তু মওদুদী হাস্যকর উদাহরণ টেনে তা হালাল করতে চেয়েছে:

“ধরেন সমুদ্রের মাঝে একটি নৌকা ডুবে গেল। একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বেচে গিয়ে এক নির্জন দ্বীপে গিয়ে ওঠে। এ অবস্থায় তাদের একসাথে থাকতেই হবে। কিন্তু ইসলামী আইন মতে তারা নিকাহ করতে পারবে না। তাই তাদের কাছে যে একমাত্র রাস্তাটা খোলা আছে তা হল নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে অস্থায়ী বিয়ে করা ততদিনের জন্য যতদিন না তারা লোকালয়ে পৌছাতে পারে বা লোকেরা তাদের খুজে পায়। অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) এ ক্ষেত্রে বা এর মত পরিস্থিতিতে জায়েজ।“

-তারজুমামুল কুরআন, ১৯৫৫, পৃষ্ঠা: ৩৭৯

যুদ্ধবন্দী মহিলাদের ব্যাপারে মওদুদীর মতামত দেখুন:

“এমনকি বর্তমান যুগেও যুদ্ধবন্দী মহিলাদের সৈনিকদের মধে বন্টন করে দেয়া উচিৎ এবং সৈন্যদেরকে তাদের (মহিলাদের) ভোগ করার অনুমতি দেয়া উচিৎ।“

অথচ পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া আছে। আল্লাহ বলেন:

“অবশেষে যখন তাদেরকে (কাফিরদের) পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও (এবং মুক্তি দাও) ।”

- সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৪

বাল্য বিবাহ নিয়ে মওদুদী বলেছে:

“নাবালিকা মেয়েদের (বয়:প্রাপ্তির আগে) বিয়ে করা যায়। স্বামীরাও তাদের সাথে সহবাস করতে পারে।“

-তাহফীমুল কুরআন, পঞ্চম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫৭১

বিভিন্ন নবী-রাসূলদের নিয়ে মওদুদীর সমালোচনার বিস্তর উদাহারণ আছে। যেমন নিচের মন্তব্যে সে হযরত ইউসুফ (আ) কে মানুষ হত্যাকারী জঘন্য মুসোলিনীর সাথে তুলনা করেছে -

“কিছু মানুষ যে ধারনা পোষণ করে যে তিনি [হযরত ইউসুফ (আ)] মিশরের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব চেয়েছিলেন শুধু সেখানকার অর্থ মন্ত্রী হবার জন্য তা আদপে ঠিক নয়; প্রকৃত পক্ষে তিনি একজন সৈরশাসক হতে চেয়েছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত ইউসুফ (আ) যে পদ পান তা বর্তমানকালের ইতালির মুসোলিনীর অবস্থার সমতুল্য।“

- তাহফিমাত, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২২, ৫ম সংস্করণ

মওদুদী হযরত সুলাইমান (আ) এর ১০০ স্ত্রী থাকার ব্যাপারে মন্তব্য করেছে:

“হয় আবু হুরাইরা (রা) নবীর কথা শুনতে ভুল করেছেন অথবা তিনি পুরো ব্যাখ্যা শোনেননি।“

-রাসাইল -ও-মাসাইল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা: ২৭

এখন বলেন কিভাবে কোন সভ্য ও বিবেকবান মানুষ এই লোকের মতবাদে বিশ্বাস করতে পারে এবং একে ইসলাম বলে দাবী করতে পারে?

(বি:দ্র: এখানে অনেক উদ্ধৃতি ইংরেজী থেকে অনুদিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৩:৪৫
৩১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×