somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সপ্তাহান্তিক চেতনা

২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সপ্তাহ কেমন করে যে হুট করে কেটে গেলো!
বউ টা ঢাকায় নতুন চাকরী শুরু করেছে, তাই কিছুটা ধানাই পানাই করেই সপ্তাহখানেকের একটা ডিউটি ম্যানেজ করলাম - ঢাকায় না, তবে কাছাকাছি। উদ্দেশ্য অতি পরিস্কার। দিনে ডিউটি টিউটি যা-ই করিনা ক্যানো, রাতে তো বউ বাচ্চার দেখা পাবো! প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা অতোটা লম্বা জার্ণি খুব ক্লান্তিকর হলেও প্রাপ্তির পরিমাণটাই বেশী মনে হলো।
কায়দা করে ডিউটি tenure টা সেট করায় বিয়ে বার্ষিকীটাও একসাথে কাটানো হবে - ফুরফুরে মেজাজে রওনা হলাম। ঢাকা পৌছলাম বেলা আটটার দিকে - প্রথমেই মেয়েদের দেখতে হবে তাই সরাসরি শ্বশুরবাড়ি। ঘুমভাঙ্গা মেয়ে দুটোর বিস্মিত আর আনন্দিত মুখ দুটো দেখেই মন ভরে গেল। মেয়েদেরকে আলসি ভাঙ্গিয়ে টেনে তুলে নাস্তার টেবিলে নিয়ে যেতে লাগলো অনেকক্ষণ।
সবাইকে নিয়ে বাসায় গেলাম। অনেকদিন পর আম্মার সাথে দেখা হলো। সন্ধ্যায় ঘুমন্ত বড়টিকে দাদীর জিম্মায় রেখে ছোট মেয়ে নিয়ে আমরা দুজন মার্কেটে। গিফট কেনা নিজের জন্য বউয়ের পক্ষ থেকে। সময় না থাকায় অঞ্জনস এ যাওয়া গেলো না, মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ওকে সেদিনের দেখে আসা ড্রেস টা গিফট দেয়ার জন্য অতো কষ্ট করে এই মাসের মাঝখানে ধারদেনা করে টাকার যোগাড় করলাম কিন্তু সময়ের জন্য কিনতে পারলাম না। এদিকে বউ তো নিশ্চিত হয়ে বসে আছে যে আমার হাত খালি তাই কিছু কিনলাম না। এমন ভাব করে থাকলো যে বিয়ে বার্ষিকী তে আমি ওকে কোন গিফট দিবোনা এটাই স্বাভাবিক। ভেতর ভেতর দগ্ধ হচ্ছিলাম। কিন্তু কী আর করা? সারাদিনে মেয়েদের জরুরী কাজগুলো সারতেই যে সময় পেলাম না।
শনিবার সকালে প্রথম কাজই হলো অঞ্জনস এ গিয়ে সেই ড্রেসটা কেনা। অন্য বাজার সেরে যখন ঘেমে নেয়ে ঘরে ফিরলাম, বউ কোন কৌতুহল দেখালোনা হাতে প্যাকেট টা দেখেও (খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা, যে মেয়ে পারলে এক্সরে স্ক্যান করে আমাকে বাইরে থেকে ফেরার পর, তার পক্ষে তো বটেই)। অনেক আগ্রহ নিয়ে ধরে বসিয়ে ড্রেসটা দেখালাম, ধারণা ছিলো ওর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, কিন্তু কই? এমন একটা ভাব করলো যেন কীট পতঙ্গ দেখছে। রাগের কারণটা বুঝতে পারছি, খারাপ লাগছে খুব, আমার একটু একটু কষ্টও হচ্ছে ও কেনো আমাকে বুঝতে চাইছেনা। কী আর করা? দু:খ চেপেই থাকতে হলো পুরোটা সপ্তাহ। আমাকে ওর গিফট দেয়া শার্টটা পরতে বাধ্য করলো কিন্তু কোনভাবেই আমার দেয়া ড্রেসটা পড়াতে পারলামনা।
প্রতিদিন ডিউটি সেরে সন্ধ্যার মধ্যে রওনা দিলেও টঙ্গী - উত্তরা - এয়ারপোর্ট - মূল ঢাকার জ্যাম ঠেলে বাসাবো পৌছাতে রাত দশটা। এরপর লোডশেডিং আর মশার রাজত্বে বসে মেয়েদের সাথে সারাদিনের জমানো গল্প বিনিময় , খাইয়ে , ঘুম পারিয়ে যতক্ষণে ফ্রি হতে পারলাম ততক্ষণে সারাদিনের চাকুরী-ক্লান্ত বউটা আমার গভীর ঘুমে হারিয়ে গেছে। আবার ভোর থাকতেই বিছানা ছাড়া, পুনরাবৃত্তি আগের দিনের। সপ্তাহটা এভাবেই কেটে গেলো, কীভাবে তা বোঝার আগেই। তাই শেষ রাত হিসেবে গতরাতটা গল্প করে কাটালাম দুজন। অনেক অনেকদিন পর। যখন ঘুম জাকিয়ে বসছে চোখে, মোবাইলের এলার্ম সশব্দে প্রতিবাদ জানালো - একদম সময় নেই। আর কী? খুব দ্রুত তৈরী হয়ে দৌড় নীলসাগর ধরতে।
সন্ধ্যার আগ দিয়ে ঘরে ফিরেছি। খুব মন খারাপ লাগছে এখন ওদের সবার জন্য। ছুটিটা খায়নি কিছু আমি ফিরে যাবো আশায়। মারে কবে যে বুঝতে শিখবি?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১২:৩০
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×