মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে সেদেশের সর্বদলীয় মুসলিম সংগঠন 'এএমটি' বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘন, আইনের শাসন, বিচারব্যবস্থা ও শান্তিশৃঙ্খলার প্রতি সরকারের পদক্ষেপকে হুমকি বিবেচনা করে এ ব্যাপারে চাপ সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।
সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. আগা সাঈদ স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া যেসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দবিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন আমেরিকান মুসলিম অ্যালায়েন্স,আমেরিকান মুসলিম ফর প্যালেস্টাইন, কাউন্সিল ফর অ্যামেরিকান ইসলামিকরিলেশনস, ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা, মুসলিম অ্যালায়েন্স অব নর্থআমেরিকা, মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি ফ্রিডম ফাউন্ডেশন, মুসলিম স্টুডেন্টঅ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা এবং ইউনাইটেডমুসলিমস অব অ্যামেরিকা।
স্মারকলিপিতে বাংলাদেশেরমানবাধিকার পরিস্থিতি চরম অবনতিতে বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ওসরকারি ছত্রছায়ায় বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশকরে এ ব্যাপারে আমেরিকা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। স্মারকলিপির একটিঅনুলিপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়েছে।
হিলারি ক্লিনটনের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে সংগঠনটি বলেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। ২০০৯ সালে কমপক্ষে ১৮০ জন ব্যক্তি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে হত্যার শিকার হয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী দলগুলোর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন হচ্ছে। তারা ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত করেছে। সরকারি দলের ক্যাডারদের হত্যা, সন্ত্রাস ও ধর্ধণের মাধ্যমে সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে।
বিরোধী দলকে দমনের উদ্দেশ্যে সরকার যাচ্ছেতাই পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকার দেশের প্রধান মূল ধারার ইসলামিক গণতান্ত্রিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে দমন ও পর্যায়ক্রমে নির্মূলের লক্ষ্যে কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা শুধু জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে বিচারের নামে জেলজুলুমের পাঁয়তারা করছে। এমনকি বিচারের আগেই বক্তৃতা, বিবৃতি ও তথ্যসন্ত্রাসের মাধ্যমে তাদের চরিত্র হনন করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার কর্তৃক ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। জামায়াতের কোনো নেতার নাম সে তালিকায় ছিল না। ১৯৭৪ সালে ৯ এপ্রিল ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে এক ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে সব যুদ্ধবন্দীকে বিচার ছাড়াই পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গটি শেষ হয়ে যায়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে যারা পাকিস্তানের পক্ষে দালালি করেছে তাদের জন্য দালাল আইন পাস করে। লক্ষাধিক লোককে এ দালাল আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে ৩৭ হাজার ৪৭১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ৩০ হাজার ৬২৩ জনকে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে খালাস দেয়া হয়। জামায়াতের কোনো নেতার নাম এসব তালিকায় ছিল না।
তা সত্ত্বেও মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান ৭৫২ জনকে অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত করে বাকিদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। জামায়াতের কোনো নেতা যুদ্ধাপরাধ বা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে দালালির অভিযোগে অভিযুক্ত হননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্তমানে শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় জামায়াত নেতাদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা ব্যক্তি মানবাধিকার ও আইনের শাসনের চরম লংঘন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি ছাত্র সংগঠনের একজন কমী নিহত হয়। এ দুঃখজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। সংঘর্ষের একটি পক্ষ ইসলামী ছাত্রশিবির ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছিল। কিন্তু তাদের এ দাবি আমলে না নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যেভাবে একপেশে পুলিশ গণগ্রেপ্তার করছে তাতে এ হত্যাকাণ্ডেরও নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু বিচার হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




