somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁয়া ধোঁয়া ভালোবাসা................. পর্ব- ৫

১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব- ১
পর্ব- ২
পর্ব- ৩
পর্ব- ৪



তিতলির পরীক্ষার আর বেশী দিন বাকি নেই। সে আদা-জল খেয়ে ধুমিয়ে রাত-দিন পড়াশুনা করছে। এই পরীক্ষায় গত পরীক্ষার চেয়েও বেশী পয়েন্ট ওঠাতে হবে।

মেয়ে যখন পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে, ইকবাল সাহেব তখন তাকে একদমই ডিসটার্ব করেন না।
তিতলির পড়ার স্টাইলটা তাঁর কাছে ভীষন অদ্ভুত লাগে।
তিতলি পড়তে বসার সময় রুমের দরজা-জানালা সব খুলে দেয়, জানালার পর্দা গুলো ভালোভাবে সরিয়ে দেয়। এরপর চেয়ারে না বসে টেবিলের ওপর বসে পড়তে থাকে। শুধু লেখার সময় চেয়ারে বসে লেখে। লেখার সময় টেবিলে মাথা রেখে লিখতে থাকে।
ইকবাল সাহেব যখনই তিতলিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন, তখন সে বলে, "শোন বাবা, সবাই একই ভাবে সবকিছু করতে পারে না। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই ইউনিক। এজন্যই মানুষ সবচেয়ে আজব এবং অদ্ভুত প্রানী। এই মানুষরাই এখন সারা দুনিয়াটাকে ভেঁজে ভেঁজে খাচ্ছে। যা বলছিলাম, প্রতিটা মানুষের চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা, কার্যক্ষমতা, চিন্তাশক্তি, মনোবল ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন। আমি বদ্ধ অবস্থায় পড়তে পারি না। কারন আমি যখনই পড়তে বসি তার ঠিক তিন মিনিট আগে থেকে আমার মস্তিষ্ক 'অক্সিজেন চাই, ফ্রেশ অক্সিজেন চাই' বলে চেঁচাতে থাকে। ভাগ্য ভালো যে বাড়ির চারপাশে প্রচুর গাছ। এগুলো না থাকলে তো মরে ভূত হয়ে যেতাম.......!!! আর টেবিলে বসে পড়ার কারন হলো, আমার সব সময় মনে হয় চেয়ারে বসে পড়লে পড়াটা ঠিক ব্রেন পর্যন্ত পৌছায় না বরং টুপ করে হাঁটুতে নেমে যায়। তাই মনের স্যাটিশফ্যাকশনের জন্য হোক বা যাই হোক আমি টেবিলের ওপর বসে পড়তে স্বাচ্ছন্দ বোঁধ করি"


মেয়ের এই বিশাল বক্তৃতার পর ইকবাল সাহেব বলার মতো আর কিছু খুঁজে পান না। পড়াশুনার ব্যাপারে মেয়ের আরেকটা বিষয় তাঁর অদ্ভুত লাগে। তিতলি সারা রাত জেগে পড়ে আর ভোরবেলা ঘুমায়। তিনি তিতলিকে বলেছেন, "ভোরবেলার পড়াটা বেশী কাজে লাগে। তখন পড়াটা দ্রুত মাথায় ঢুকে।"
তিতলি তাঁর এই কথায় বলে, "শোন বাবা, আমার ক্ষেত্রে রাত হচ্ছে পড়াশুনার শ্রেষ্ঠ টাইম এরপর ভোরবেলা ঘুম। সারারাত পড়ার পর যখন ভোরবেলা ঠান্ডা মাথায় ঘুমুতে যাই, তখন পড়া গুলো ভালোভাবে মাথায় সেট হয়ে যায়"

মেয়ের এমন কথার পিঠে তখন তিনি আর কিছু বলতে পারেন না। তিনি নিরবে তখন ভাবতে থাকেন মেয়েটা যত বড় হচ্ছে ততই দিন দিন বুদ্ধিমতী হচ্ছে।

তিতলি যখন পড়তে বসে, তখন তিতলি কে দূর থেকে দেখতে দেখতে ইকবাল সাহেবের ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি সূর্য্যসেন হলে থাকতেন। টিউশন শেষ করে সন্ধায় হলে ফিরে পড়তে বসতেন। রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা পড়তেন। রাতের খাওয়া শেষ করে আরো ঘন্টাখানেক পড়তেন। এরপর ঘুমুতে যেতেন। ভোরবেলা আযান শুনে তাঁর ঘুম ভাঙতো। নামায পড়ে আবার পড়তে বসতেন। কখনো নাস্তা করে, কখনো না করেই ক্লাসে যেতেন।

তিতলি বরাবরই বেশ ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। সে প্রতি সেমিস্টারে ফার্স্ট হয়। সে SSC এবং HSC তে গোল্ডেন এ+ পেয়েছিল। পড়াশুনার বেলায় সে সবসময় সিরিয়াস। তার অনেক ক্লাসমেট তাঁকে দেখে হিংসা করে।


মেয়ের সাফল্যে ইকবাল সাহেব সবসময়ই মুগ্ধ। তিনি বিশ্বাস করেন একদিন তাঁর মেয়ে অনেক বড় হবে। তাঁর সবসময় মনে হয়, তিতলির সাথে সবসময় তিতলির মার আর মেঝোফুপুর দোয়া থাকে। এজন্যই হয়তো আল্লাহ্ র অশেষ রহমতে মেয়েটা এভাবে এগিয়ে যেতে পারছে.................


(চলবে.........)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৪০
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×