somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্জন কারাবাসে কেমন আছেন মাহমুদুর রহমান

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অলিউল্লাহ নোমান, কারাগার থেকে ফিরে

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দীর্ঘ চার মাস ধরে জেলে বন্দি অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন। প্রতিবাদী এই মানুষটির একমাত্র অপরাধ ছিল সত্যনিষ্ঠ থাকা। সরকার ও বিচার বিভাগ উভয়েরই বিরাগভাজন এই সাহসী সম্পাদকের জেলজীবন কতটা দীর্ঘ হবে তা এখনও অনিশ্চিত। আমার এক মাস সাতদিনের সাজার মেয়াদকালে তার সঙ্গে মাত্র তিনবার সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছি। নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে আমি ছিলাম দশ নম্বর সেলে আর তিনি আছেন সাত নম্বরে। আমার অগ্রজপ্রতিম সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাইলেই জেল কর্তৃপক্ষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে জবাব দিতেন সম্ভব নয়। যে কর্মকর্তা অনুমতি দেবেন, তারই নাকি চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা। তবে তিনবার
দেখার সময় প্রতিবারই মাহমুদুর রহমানকে বরাবরের মতোই প্রফুল্ল, হাস্যোজ্জ্বল দেখেছি। জেলজীবনের নানা রকম অসুবিধা এবং কষ্টে কষ্টে রোগা মানুষ আরও রোগা হয়ে গেছেন। হারিয়েছেন শরীরের ওজনও। কিন্তু তার মনোবল আগের মতোই অবিচল। এতগুলো শক্তিমান প্রতিপক্ষ, অথচ সামান্যতম চিন্তিতও মনে হয়নি তাকে। মাঝে-মধ্যে মা এবং স্ত্রীর কথা বলেছেন। নিজের অবস্থা নিয়ে কোনো উত্কণ্ঠা নেই। তার উত্কণ্ঠা দেখেছি দেশকে নিয়ে ও গরিব মানুষদের নিয়ে।
সাত নম্বর সেলে তার ঘরটি আন্দাজ ১০ ফুট বাই ৭ ফুট হবে। তার মধ্যেই এক কোণে খোলা টয়লেট। চাদর দিয়ে ঘিরে আব্রু রক্ষার চেষ্টা করেছেন। আসবাবপত্র বলতে ছোট একটি চৌকি, লেখার টেবিল আর প্লাস্টিকের চেয়ার। ছাদের সঙ্গে লাগানো একটি মাত্র বাতি, তাও পাশাপাশি দুই ঘরের জন্য রাতে ওটাই আলোর একমাত্র উত্স। এর মধ্যেই টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে সারাক্ষণই পড়ছেন নয়তো লেখালেখি করছেন। মুক্তি পেলে মাহমুদুর রহমানের অটোবায়োগ্রাফি বা আত্মজীবনীমূলক একটি বই পড়ার সুযোগ হয়তো আমরা পাব। এদিকে তিনি আবার এই বয়সে নতুন করে আইনের ছাত্র হওয়ার কথা ভাবছেন। বুয়েট এবং আইবিএ থেকে লেখাপড়ার পাঠ সাঙ্গ করেছেন সেই সত্তর আর আশির দশকে। এখন জেদ চেপেছে ব্যারিস্টার হবেন। বললেন, ‘আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতিদের আমার সম্পাদক হওয়ার ব্যাপারে ঘোরতর আপত্তি। পৌঢ়ত্বে এসে তাদেরই লেখাপড়ার সীমানায় পা বাড়ালে কি করেন এটা দেখার বড় শখ আমার।’ এটা বলার সময় চোখে-মুখে কৌতুক ফুটে উঠলেও কণ্ঠের দৃঢ়তা বুঝতে ভুল হয়নি আমার। তার স্থির বিশ্বাস বর্তমান সরকার আইন, আদালত ও জনমত কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাকে দীর্ঘদিন হয়তো আটকে রাখবে। সিপিজে এবং রিপোর্টার্স সান প্রন্টিয়ার্স তার ব্যাপারে বিবৃতি দেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ দেশের মার্কিন-ভারত লবি বরং সুশীল (?) সমাজও চায় আমি আটকই থাকি। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আমার ওপর অতিশয় বিরক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কিংবা মানবাধিকারের কোনো তোয়াক্কা করবে না। কাজেই শেখ হাসিনার সরকার যতদিন ইচ্ছা আমাকে আটকে রাখলেও তেমন কোনো চাপের মুখে পড়বে না। পার্থিব জীবন তো একটাই, তাই বন্দিত্বের সময়টাই বা নষ্ট করি কেন। আমৃত্যু জ্ঞানচর্চা চালিয়ে যাব।
মাহমুদুর রহমান ঘুম থেকে ওঠেন ভোর সাড়ে চারটায়। কারারক্ষী তার ঘরের তালা খোলে আরও এক ঘণ্টা পরে। ততক্ষণে ফজরের নামাজ পড়ে এক মগ হরলিক্স পাশে নিয়ে পড়াশোনা আরম্ভ করে দিয়েছেন তিনি। দরজার তালা খোলা হতেই বালতি এবং সেলের অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে সোজা চলে যান চৌবাচ্চার ধারে। রোজকার কাপড়-জামা নিজেই ধুয়ে ফেলেন। গোসল শেষ করতে করতে সেলের প্রতিবেশীরা বের হতে শুরু করে। চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় বসেই তাদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক গল্প-গুজব করেন। আটটার মধ্যেই আবার লেখার টেবিলে। মামলার হাজিরা না থাকলে প্রায় পুরোটা দিন কেটে যায় ওখানেই। দিনে ঘুমানোর অভ্যাস নেই, তাই সমস্যা হয় না। মামলার হাজিরা থাকলে অবশ্য ভিন্ন কথা। সরকারের কৃপায় মামলাও তো এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৮টি। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া কোথাও আর বাদ নেই। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পিতৃভূমি গোপালগঞ্জ ঘুরে এসেছেন। ওখানকার জেলে দুইদিনের আতিথেয়তা নাকি মন্দ হয়নি। এদিকে ঢাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, জজকোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট সম্ভাব্য সব স্থানেই মাহমুদুর রহমানের মামলা। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর একা একা বারান্দায় কিছুক্ষণ বসে থাকেন। সাত নম্বর সেলে একমাত্র তিনিই ডিভিশনপ্রাপ্ত কয়েদি, তাই অন্য বন্দিদের ঘরে ছয়টার মধ্যেই তালা পড়লেও তার ঘর বন্ধ হয় রাত নয়টায়। দশটা পর্যন্ত আর এক প্রস্থ লেখালেখি সাঙ্গ করে ঘুমাতে যান তিনি। আজ পর্যন্ত একবারের জন্যও ডাক্তারের শরণাপন্ন না হয়ে জেলে রেকর্ড সৃষ্টি করে ফেলেছেন। এখন পর্যন্ত সমস্যা বলতে মেরুদণ্ডের পুরনো ব্যথা। রিমান্ডের পর থেকেই কষ্ট পাচ্ছিলেন। মাত্র ক’দিন আগে পানি গরম করার একটা ইলেকট্রিক কেতলি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। ফলে গরম পানির সেক নেয়ার পাশাপাশি ভোরে ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল করারও সুবিধা হয়েছে। এতদিন ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করায় কোমরের সমস্যা খানিকটা বেড়ে গেছে। চিরকালের মিতহারি মাহমুদুর রহমানের কম খাওয়ার গল্প জেলেও শুনে এলাম। এর মধ্যে বন্দিদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা দেখেও অবাক হয়েছি। আর এক কথা, সুপ্রিমকোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা স্বীকৃতি না দিলেও জেলে মাহমুদুর রহমানের একমাত্র পরিচয় তিনি আমার দেশ-এর সংগ্রামী সম্পাদক। তার জ্বালানি উপদেষ্টা কিংবা বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান অথবা সিরামিক বিশেষজ্ঞ এইসব পরিচয় চাপা পড়ে গেছে সাংবাদিক ও সম্পাদক পরিচয়ের অন্তরালে। কারা অভ্যন্তরে থেকে তার সম্পর্কে এসব বিষয় দেখে ও জেনে একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আমি গর্ববোধ করেছি। কুলীনরা ইচ্ছা করলে নাক সিটকাতে পারেন।




Click This Link
২৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×