ছেলেটির নাম বর্ণ। এবার বিবিএ ফোর্থ সেমিস্টার এ পড়ছে। ভার্সিটি যাবে খুব তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে কারণ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় গিয়ে মুখ মুছতেই চোখ আটকে গেল বর্ণের সামনের বাসার জানালায়। পরীর মত একটি মেয়ে বসে আছে একদিকে তাকিয়ে। যেন খুব মন দিয়ে কিছু দেখছে। বর্ণও মেয়েটির তাকিয়ে থাকা দেখে তোয়ালে হাতে নিজেও বাম দিকে তাকালো। কি আছে ওখানে এত মনোযোগ দিয়ে দেখার মত। ঠিক ঐ সময় বর্ণের বাবা ডাকলেন নাস্তা করতে।
রাতে ঘরে ফিরে আলো জালিয়ে জানালার পাশে চেয়ারে গা এলিয়ে দিতেই হঠাৎ চোখ গেল আবারো সামনের বাসার সেই তার বরাবর জানালাটার দিকে। মেয়েটা মোবাইল হাতে নিয়ে কানে এয়ারফোনে গান শুনছে আর মাথা দুলাচ্ছে। যদিও সকালের মত চেহারাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। বর্ণ অপলক চেয়ে রইলো। করিম চাচার কাছে সকালে সে খবর নিয়েছে, জানুনীড় এ নতুন ঐ ভাড়াটে এসেছে। আগে দুই ছেলে আর মা বাবা যে ফ্যামিলি ছিল তারা চলে গেছে বাসা ছেড়ে নিজের ফ্ল্যাটে। এখন যারা ভাড়া এসেছেন মা বাবা আর তাদের একমাত্র মেয়ে। কলেজে পড়ছে এবার।
বর্ণ একরাতে কম্পিউটার এ তার এস্যাইনমেন্ট করছে হঠাৎ ঘাড় ডানে ঘোরাতেই তার জানালা পেরিয়ে বারান্দা দিয়ে ঐ মেয়ের জানালা তে দেখা যাচ্ছে মেয়েটি কি দারুণ নাচ্ছে। যেন একটা ময়ূর। নীল একটা গাউন পরে হাত পা মেলে মেলে নাচ্ছে সে। বর্ণ কম্পিউটারের মনিটরে তাকিয়ে সময় দেখল, রাত তখন ২টা ছুঁই ছুঁই। বর্ণ অবাক হয়ে ভাবে এইসময় কেউ নাচে?
বর্ণ চট জলদি তার ঘরের বাতি নিভিয়ে দিল। পাছে সে যে তাকিয়ে আছে মেয়েটি না দেখে ফেলে। সে তার রুমের লাইট বন্ধ করে লুকিয়ে জানালা দিয়ে মেয়েটির নাচ দেখছে।
বর্ণ এখন সুযোগ পেলেই মেয়েটির জানালায় উঁকি দেয়। মেয়েটি কখনো কাপড় গুছায়, কখনো বিছানা পরিষ্কার করে, সন্ধ্যায় বা রাতে গান শোনে। আবার ফাঁকে ফাঁকে ঢুলে ঢুলে বই খাতা নিয়ে পড়তেও দেখা যায়। আবার কখনো রাত ৩ টার সময় মাথায় তোয়ালে পেছানো সদ্য গোসল করে বেরিয়ে আসতেও দেখে বর্ণ অবাক হয়।
মেয়েটিকে সকাল বিকেল, রাতে দেখা তার একটা অভ্যেসের মত হয়ে গেছে যেন। আর মেয়েটির বাসায়ও কাউকে সেরকম দেখা যায় না। মাঝে ২দিন কি ৩দিন বুড়ো গোছের একজন লোককে দ্যাখে বর্ণ, মেয়েটির রুমে বসে কথা বলতে। ধরেই নিয়েছে যে উনি ই মেয়েটির বাবা। এছাড়া ছোট একটি মেয়েকে দেখা যায়, হয়ত তার কাছে সাহায্যকারি।
একদিন বিকেলে ভার্সিটি থেকে এসে ব্যাগটি খাটে রেখে সে তার চেয়ারে বসে ডানে তাকাতেই দেখলো মেয়েটি জানালার পাশে বসে অঝরে কাঁদছে। বর্ণের কেমন যেন অস্থির লাগতে লাগল। কি হয়েছে মেয়েটির? কেন এভাবে কাঁদছে? সে চেঁচিয়ে করিম চাচাকে ডাকল। ধড়ফড় করে দোতলায় উঠে এলেন বর্ণের কাছে করিম চাচা কি হয়েছে জানতে। বর্ণ মেয়েটিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি কি মেয়েটি সম্পর্কে কিছু জানেন চাচা?"
করিম চাচা বললেন, "কোন মেয়েটি ছোট সাহেব?" ততক্ষণে জানালা থেকে সরে গেছে মেয়েটি।
বর্ণ জানালার দিকে তাকিয়ে করিম চাচা কে বললো, "আরে জানুনীড়ের নতুন ভাড়াটিয়াদের মেয়েটি।"
করিম চাচা বললেন, "আমি কি করে জানবো ছোট সাহেব। তবে আপনি বললে খোঁজ নিতে পারি।"
"না থাক"- বলে করিম চাচা কে চলে যেতে ইশারা করল বর্ণ।
তারো এখন ভীষন খারাপ লাগছে, কেন কান্না করছিল মেয়েটি, কি হয়েছিল তার?
এমন ফুটফুটে , হাসি আনন্দে থাকা মেয়ে, এভাবে কেন কাঁদবে?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:১৩