somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

 বাংলা ধোলাই, তেত্রিশটা কামান নিয়ে বসে আছি -হুমায়ূন আহমেদ..!!

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা:
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সকল ব্লগারের কাছে, কারণ লেখাটিতো আমার নয়ই, এবং নিজের বলে দাবি করার ধৃষ্টতা প্রকাশ করার সামর্থই আমার নেই। লেখাটি আর কারও নয়, আমার অতি প্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর। লেখাটি প্রথম আলোর ওয়েবসাইট থেকে নামানো। আশা করি আপনাদের সকলের লেখাটি ভালো লাগবে..

বাংলা ধোলাই, তেত্রিশটা কামান নিয়ে বসে আছি
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম খেলা বাংলাদেশের। এই খেলা কীভাবে দেখা হবে, তা নিয়ে প্রথম আলোতে একটা লেখা লিখেছিলাম। লেখা ব্যাকফায়ার করল। আমার সঙ্গে খেলা দেখার জন্য পরিচিত-অপরিচিত লোকজন টেলিফোন করা শুরু করল। আমার সঙ্গে খেলা দেখতে হলে তো লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার প্রয়োজন নেই। বাধ্য হয়ে ভেন্যু পাল্টালাম। নিজের বাসা ছেড়ে প্রকাশক-বন্ধু আলমগীর রহমানের বাসায় উপস্থিত হলাম। আমি, শাওন এবং পুত্র নিষাদ। তিনজনের গায়েই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জার্সি (জার্সি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে)।
আলমগীর রহমান বললেন, ‘আপনারা তিনজন? আর কেউ আসবে না তো? আপনি তো দলবল ছাড়া চলেন না। আমি এত মানুষকে জায়গা দিতে পারব না।’
আমি ক্ষীণ গলায় বললাম, ‘আমরা তিনজনই।’
আড়াইটা থেকে খেলা শুরু। দুপুর দুইটার মধ্যে আলমগীরের বসার ঘরে ভিড় জমে গেল। আমার বন্ধুবান্ধব সবাই উপস্থিত। অপরিচিত কিছু লোকজনও আছে। সবার গায়েই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জার্সি। যারা জার্সি ছাড়া উপস্থিত হয়েছে, তারা ব্যাপার দেখে ছুটে গেল জার্সি কিনে আনতে। উৎসাহ-উত্তেজনায় সবাই ঝলমল করছে। কত আলোচনা, কত হিসাব-নিকাশ!
খেলা শুরু হওয়ার আগে ‘বাংলাদেশ কেমন খেলবে’ এই বিষয়ে আলোচনা সভা। এই সভায় প্রত্যেকেই মতামত দেবে।
বন্ধু-আর্কিটেক্ট করিম বলল, ‘গো-হারা হারবে। ইন্ডিয়ার সামনে দাঁড়াতেই পারবে না।’ করিম একজন ক্রিকেটবোদ্ধা। ক্রিকেটবোদ্ধারা খেলোয়াড়দের চেয়ে অনেক ভালো ক্রিকেট বোঝে। ক্রিকেট কমেনটেটরদের চেয়েও এরা জ্ঞানী হয়ে থাকে।
অন্যপ্রকাশের কমল বলল, বাংলাদেশ হারবে তবে হার্ড কনটেস্ট হবে। কমল ক্রিকেটবোদ্ধা প্লাস ক্রিকেট-রেকর্ড বিশেষজ্ঞ। কবে কোন খেলায় কে শূন্য রানে আউট হয়েছে, কমল বলে দেবে।
করিম বলল, কোনো কনটেস্টই হবে না। ইন্ডিয়া আগে ব্যাট করলে সাড়ে তিন শ রান করবে। রানের হিমালয় পর্বত দেখে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা চুপসে যাবে। দুই শ রানে অলআউট।
আমি মন খারাপ করে দেখলাম, ক্রিকেট-বিজ্ঞজনেরা ইন্ডিয়া জিতবে বলে দিচ্ছেন, আর আমরা যারা ক্রিকেট কিছুই বুঝি না—যেমন আমি এবং আমার চার বছর বয়সী পুত্র—বলছি ‘বাংলাদেশ জিতবে।’
পুত্র নিষাদের চেয়ে আমি তিন কাঠি ওপরে। আমি বললাম, বাংলাদেশ ইন্ডিয়াকে বাংলাধোলাই দিয়ে দেবে। দশ উইকেটে জিতবে। দশ উইকেটে জেতা মানে বাংলাধোলাই।
করিম বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তুমি ক্রিকেট বোঝো না, কেন কমেন্ট করো? প্লিজ, স্টপ।’

টস হয়ে গেছে। বাংলাদেশ টসে জিতেও নিল ফিল্ডিং।
করিম মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘সাকিব, তুই করলি কী! নিজের পায়ে নিজে ইলেকট্রিক করাত চালালি! ইন্ডিয়ার যেমন ব্যাটিং লাইন, ওরা করবে চার শ রান। তোরা তো দেড় শও করতে পারবি না!’
আলমগীর রহমান বললেন, ‘করিমের সঙ্গে আমি এক শ ভাগ একমত। সাকিবের ভুল ডিসিশনের জন্য আমরা হারলাম। পুলাপান ক্যাপ্টেন হয়ে গেলে যা হয়।’
ওদের কথাবার্তা শুনে আমিও ওদের বাতাসে পাল তুললাম। ক্রিকেট অনেকটা মানসিক খেলা। বিশাল রানের পাহাড় দেখে যেকোনো দলই ফুটা বেলুনের মতো চুপসে যাবে।
শাওন বলল ভিন্ন কথা। সে বলল, ‘দলের ক্যাপ্টেন কোনো কিছু না ভেবেই ফিল্ডিং নেবেন, তা হয় না। নিশ্চয়ই এই সিদ্ধান্ত তাঁর একার না। সবাই মিলেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে। আমার মন বলছে, আমরা এবারও ভারতকে হারাব।’
করিম বলল, ‘ইন্ডিয়া হারলে আমি কান কেটে ফেলব। ক্রিকেট বোঝে না এমন কারও সঙ্গে খেলা দেখাই ঠিক না।’

করিমকে কান কাটতে হলো না। ইন্ডিয়া জিতল।
আমি বললাম, ‘ইন্ডিয়া যেমন জিতেছে, আমরাও জিতেছি। তিন শ সত্তর রানের বিপরীতে দুই শ তিরাশি রান মানেই বিজয়। বিশাল বিজয়!’
ক্রিকেট খেলা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্যের সঙ্গে কেউ একমত হয় না। প্রথমবার সবাই একমত হলো। সবাই (অক্ষতকর্ণ করিমসহ) বলল, বাংলাদেশ হারেনি।
বাংলাদেশের বিজয় উপলক্ষে আমরা ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গাইলাম। এগারোটা মোমবাতি জ্বালিয়ে আইসক্রিম কেক কাটা হলো।
এগারোটা মোমবাতি প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ল, অনেক দিন ধরেই আমি ‘এগারো’র রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছি, পারছি না। ক্রিকেট এগারোজন কেন খেলে? বারোজন না কেন বা দশজন না কেন? ফুটবলেও এগারোজন, হকিতেও এগারো। এই এগারো কবে শুরু হলো, বা কেন শুরু হলো?
একইভাবে আমার মাথায় আরেকটি প্রশ্ন, আমরা তেত্রিশবার তোপধ্বনি করি কেন? বত্রিশবার কেন করি না, বা চৌত্রিশবার কেন করি না।
এখন বলি এগারো এবং তেত্রিশ এই লেখায় হঠাৎ কেন আনলাম। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে জিতবে এবং আমরা তেত্রিশবার তোপধ্বনি করব। এই ভেবেই তেত্রিশ তোপধ্বনি প্রসঙ্গ।
হ্যালো, বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা! আমরা কিন্তু তেত্রিশটা কামান নিয়ে বসে আছি!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×