somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাতাসে লাশের গন্ধ..

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পিলখানা, আবেগের একটি নাম, একটি পরিচয়, আর অনেকগুলো রক্তভেজা উপখ্যান।

পিলখানার সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল সেই ছোটবেলাতেই, যখন আমার বাবা এক এক করে সবক দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের-৭১'র অনেক আবেগ নিয়ে, দরদ আর ভালোবাসার ছোঁয়াতে! ২৫শে মার্চ রাতে যখন হানাদার বাহিনী হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র-ঘুমন্ত বাঙ্গালীর উপর, তখন প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল এই পিলখানা থেকেই, পরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সদস্যরাও যোগদেন তাদের মতো করে। পরবর্তীতে প্রায় সময়ই যখন রাফেলস স্কয়ারের সামনে দিয়ে পার হতাম যায়গা, বুকের কোণা থেকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা উঠে আসতো সেই বীর সেনানীদের জন্য যারা দেশের সীমান্ত রক্ষার জন্য নিজ শরীরকে প্রাচীর বানিয়ে বুক পেতে নেন প্রথম বুলেট! রক্ত'র শেষবিন্দু দিয়ে যারা নিশ্চিত করেন দেশবাসীর রাতের নিশ্চিন্ত ঘুম!

কিন্তু হঠাৎ করেই সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল আজ থেকে ৩ বছর (২০০৯) আগের ২৫শে ফেব্রুয়ারীর সকালটি। ঢাকাবাসীর দিনটি শুরু হল অন্যরকম ভাবে, রক্ত আর জীঘাংসার মাঝে, শঙ্কা আর সন্দেহের মাঝে! দিনটি ছিলো তথাকথিত "বিডিআর বিদ্রোহের"
বিডিআর বিদ্রোহ কেন হলো, কিভাবে হলো এই উত্তরগুলো আজও খুঁজে বেড়ায় দেশের মানুষ। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু'র সঠিক ইতিহাস আজও সন্দেহ, অবিশ্বাস, রাজনৈতিক ব্যবহারের মাঝেই সীমিত। দেশের দুই রাজনৈতিক দলই চেষ্টা করেছে ঘটনাটিকে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার। সরকার নানা ধরণের আভাস পাওয়া সত্ত্বেও কোন উদ্যোগ না নেওয়াটা যেমন সন্দেহ সৃষ্টি করে, ঠিক তেমনই অন্য দলের বিডিআর বিদ্রোহীদের খাবার পৌঁছে দেওয়া, পালিয়ে যেতে সহায়তা করাও সৃষ্টি করে সন্দেহের।
বিডিআর এই বিদ্রোহীরা যে পরিমাণ নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে, তা কোন অংশে ৭১কেও হার মানায়, ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা, কাউকে হত্যার পরও স্রেফ প্রতিহিংসাবসত পুড়িয়ে ফেলা, পিলখানায় অবস্থানরত সেনা অফিসারদের পরিবারের উপর অকথ্য নির্যাতন, বয়স-বাছবিচারহীন ভাবে কিশোরী-নারীদের উপর ধর্ষণ, কৃতকর্ম ঢাকতে অফিসারদের ম্যানহোলে লাশ ঢুকিয়ে দেওয়া, পিলখানাতেই লাশ পুঁতে ফেলা সহ আরও নৃশংসতার যে পরিচয় দিয়েছে তা এককথায় অবিশ্বাস্য! ঘটনার ভয়াবহতা কতটুকু, তা বোঝার জন্য শুধু একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট- পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহে যতজন সেনা কর্মকর্তা খুন হয়েছেন, এতজন সেনা কর্মকর্তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদের সময়ও মারা যাননি!

সন্দেহ'র খাতায় অন্তত একটা জিনিস পরিষ্কার, তা হলো বিডিআর বিদ্রোহে ছিলো বিডিআর বহির্ভূত ইন্ধন! সন্দেহ খাতায় যারা পড়ে-
১। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা প্রাণপনে ঠেকাতে চায়। সরকারের বয়স তখন মাত্রই ২ মাস, যাদের নির্বাচনী ওয়াদার প্রধান অংশই ছিল, ৭১'র যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এই ঘটনা দিয়ে সরকারকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল তারা!
২। ভারতীয় ইন্ধন। যেখানে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে বসে এতগুলো মিডিয়া ছিল আঁধারে, কেউই জানতোনা কি ঘটে চলেছে ভিতরে, সেখানে ভারতীয় মিডিয়াতে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে খবর গেল তা কোনভাবেই বোধগম্য নয় এবং সেইসাথে সৃষ্টি করে ভয়াবহ সন্দেহর। কারণ বিডিআরকে দুর্বল করতে পারলে তাদেরই লাভ সবচাইতে বেশী, দুর্বল সীমান্তের সুযোগ নিয়ে তাদের কুকর্ম চালাতে কোন রকম সমস্যাই হবে না তাদের!

ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র ধানমন্ডি-নিউমার্কেটের মাঝামাঝি একটা যায়গায় আমাদের অস্তিত্বে নাড়া দেওয়া যে ঘটনা ঘটে গেল তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পাশবিকতা, নৃশংসতা কোন বিশেষণ্টে এই দিনটিকে তুলনা করা যাবেনা। ৩টি বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু বাতাসে লাশের গন্ধ যে এখনও ভাসে! ম্যানহোলের খোলা ঢাকনাগুলো দেখলে আমার এখনও মনে পড়ে যায় সেই সব হতভাগা অফিসারদের কথা, তাদের বুলেটে জর্জরিত পঁচে-গলে ওঠা শরীর গুলোর কথা! মনে হয়- দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানা এক মারাত্মক চক্রান্তের কথা, সেনাবাহিনী বিডিআরকে মেধাশূন্য করার প্রয়াসের কথা! সুশৃঙ্খল একটা বাহিনীকে ধ্বংস করার প্রয়াস নাকি, শুধুই সিপাহীদের বিদ্রোহ, নাকি দেশের বিরুদ্ধেই এটি ছিল চরম আঘাতের পূর্বাভাস মাত্র, তা বলতে পারিনা! কিন্তু একটা কথাই বরতে ইচ্ছা করে বারবার: "আমরা তোমাদের ভুলিনি-ভুলবোনা। তোমাদের লাশের গন্ধ এখনও ভাসে বাতাসে, তোমাদের চেহারাগুলো, সারি সারি কফিনগুলো আজও কাঁদায় আমাদের, তোমরা আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব"

আরও জানতে পড়ুন:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
ঘটনার বিবরণী জানতে পড়ুন:
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৫৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×