somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিতে ঈদ

১৮ ই মে, ২০২৩ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব মিস করি ঈদগাহের ঈদের জামাত। বোগলে করে বয়ে বিছানা নিয়ে সারি সারি পেতে বসে পড়া। জুতো স্যান্ডেল এক জায়গায় গোল করে রেখে শিশুগাছের ছায়ায় ঘেষে বসা। কেউ কেউ বাহারী জায়নামাজ নিয়ে আসতো। ইকরামুলদের মাইক বাধা হতো উচু পাচিলে। সারাটা সকালজুড়ে মাইক ঠিক করতে করতে কখন যেন একসময় সবাই দাড়াতো ঈদের জামাতে।
আব্দুল করিম মাওলানা চোখে গগলস পরে হঠাৎ হঠাৎ দাড়িয়ে তাকবির পড়তো। মাকুন্দী হুজুর সৌদি আরবের আদলে মাথায় রুমাল বেধে খুদবায় দাড়াতো। ক্লিন সেভ করা (?) পৌঢ় হুজুরকে বেশ অন্যরকম লাগতো!
ঈদের সময় একটা গোলমাল কিন্তু লাগবেই সবসময়। আমরা ছোটরা এই গন্ডোগোল উপভোগ করতাম।ঈদগাহর পাশে একটা মেলার মতো ছোট জটলা বসতো। ছোট ছেলেমেয়েরা কিছু কিনতো। স্কুলটা তখন লম্বা পুরানো বিল্ডিং এ ছিল। ঈদগাহ কিন্তু তখন কয়েকটি কংক্রিটের রড বের হওয়া থামের বাউন্ডারী ছিল। সামনে এবং পাশের দেয়াল দেওয়া হয়নি। মেঝেও ছিল পুরানো ক্ষয়ে যাওয়া পাকা মাটির।
সময়টা রঙিন ছিল।
মানুষগুলো আন্তরিক ছিল।
জীবনটা সুন্দর ছিল।
জানিনা এখন কেমন ঈদ হয় পাথরঘাটা ঈদগাহে। জানিনা এখনও আমার মতো কিশোর ভাজভাঙা সাদা পান্জাবী পাজামা পরে বড়দের সাথে দাদীর রঙিন জায়নামাজ নিয়ে ছোটে কিনা, যার দুচোখে আনন্দ, সামনে পড়ে থাকে সমস্ত দিনের আয়োজন!
তখন বিনোদন বলতে টেলিভিশন এবং ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল, রেডিও ছিল, বিকেলে বলফিল্ডে তালগাছের তলায় বড়রা তাস খেলতো। ঈদের বিকেলে বলফিল্ডে ম্যারেড আর ব্যাচেলর ফুটবল খেলা হতো। গ্রামের দুলাভাইরা শ্বশুরবাড়ী এসে এসব খেলায় অংশ নিতো। অধিকাংশ সময় ব্যাচেলররা জিততো। আনন্দে কাটতো বিকেলটা।
টেলিভিশনে দুপুর পরেই বাংলা ছবি দেখাতো। তখন মাত্র বিটিভি ছিল। তাও গ্রামে হাতে গোনা ক’জনের বাড়ী টেলিভিশন ছিল। একসময় এসব টেলিভিশন ব্যাটারীতে চলতো। আমি যখন ফাইভে পড়ি তখন বিদ্যুৎ আসে গ্রামে। ছোটবেলায় দেখেছি বিশেষত অল্পবয়স্ক মেয়ে এবং নববিবাহিত মহিলারা কাজ শেষ করেই যাদের বাড়ী টিভি আছে সেখানে গিয়ে বাংলা ছবি দেখার আগ্রহে বসে পড়তো। মূলত শাবানা আর আলমগীরের ছবি সে সময় খুব পপুলার ছিল। সিনেমার মাঝে বিজ্ঞাপনগুলোও খুব আকর্ষণীয় ছিল। যতদূর মনে পড়ে জনি প্রিন্ট শাড়ী, শরিফ মেলামাইন, বাতির রাজা ফিলিপস, পচা শাবান, তিব্বতের এ্যাড বেশি দেখাতো।
যদিও আমি খুব কম বিকেলের এই সিনেমা দেখেছি মনে পড়ে। তবে একবার ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ দেখেছিলাম মনে হয়।
পাড়ার মোড়ের দোকানগুলোতে হিন্দী সিনেমার গান জোরে বাজতো। কিশোর কুমারের গান বাজতো। তখন দোকান ছিল সাকুল্যে ২/৩ টি হবে। দোকানের সামনে বালতিতে কোক পেপসি ভিজিয়ে রাখা হতো, কাচের বোতলে অরিজিনাল টেষ্ট! অন্তত এই দিন আমরা এক বোতল বা দুই বোতল কোক খেতাম। তখন টাকার মূল্য ছিল। কিশোর বা তরুনরা তাদের পরিবারের অবস্থা বুঝতো, এতটা টাকা পয়সা এবং বেহিসাবী জীবনযাপনে কেউ অভ্যস্ত ছিল না।
একটা কথা কিন্তু বলতেই হয়, সে সময় দেখেছি মুরুব্বীদের ছোটরা বা যুবকেরা প্রচন্ড সম্মান করতো। দোকানে গান বাজলে কোন সম্মানিত মুরুব্বী আসতে দেখলে ভলিউম কমানো হতো। বিড়ি সিগারেট লুকাতো, কথা নিচুস্বরে বলতো। পোষাকের বাহাদুরী ছিল না। আজকাল যখন ফেসবুকে গ্রামের উঠতি কোন তরুনের ছবি দেখি, তখন আমি তার বাপ বা দাদার মনের পর্দায় কল্পনা করি, এ এক বিস্তার ফারাক, আমি অঙ্ক মেলাতে পারিনা। যদিও সময় আমাদের চালিত করে তবে সময়ের সাথে সাথে আমরা তো বহন করি আমাদের ঐতিহ্য, নাকি!!
আমাদের সময় পাথরঘাটার খ্যাতি ছিল এলাকাজুড়ে। পড়াশুনা এবং আধুনিকতা মেশানো। ঈদে অন্য গ্রাম থেকে অনেকেই আসতো আমাদের গ্রামের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেল চালিয়ে ঘুরতে। তখন প্রায় সবার কমন বাহন ছিল সাইকেল। মোটর বাইক বলতে হাতে গোনা দুই তিনটি। অন্যগ্রাম থেকে আসা এসব মেহমানদের সেমাই দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। অল্পসল্প পরিচয়ের কেউও ঠিক আতিথেয়তা পেত।
আমি আমার বন্ধুদের সাথে বিকালে বের হতাম, ছোট বড় সম্পর্কের সবাই এই বন্ধুত্বের ভেতরে ছিল। প্রায় সময় সশ্মানঘাটের বটগাছ পেরিয়ে যেতাম। ঘরচালার কাচা রাস্তার পাশে, কালভার্টের উপরে বসতাম, গল্প করতাম, কতো আলোচনা সমালোচনা ছিল পুরাটা বিকেল জুড়ে! দুএকটা ভ্যানগাড়ি আমাদের পাশ কাটিয়ে যেত, মাঝে মাঝে সাইকেল বা হেলিকপ্টারে করে কেউ কুটিমবাড়ী যেত। দেখতে দেখতে সূর্য্যটা লাল হয়ে বটগাছের পিছনে টুপ করে ডুবে যেত, আমরা আরো কিছুক্ষণ বসতাম। দক্ষিণের বাতাসে আমাদের চুল উড়তো, একসময় অন্ধকারে কেউ কারো মুখ স্পষ্ট দেখতে পেতাম না! হয়ত হামিদ ভাই গান ধরতো হেড়ে গলায় ‘এই কুলে আমি আর ঐ কুলে তুমি’!

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২৩ দুপুর ২:৪১
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় বিএসএফের বর্বরতা: পঞ্চগড় সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২১

আরেকটি নিরীহ প্রাণের বলিদান

আবারও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের সীমান্তে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আনোয়ার হোসেন নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা এলাকাবাসীর মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্ত John Lennon-দের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জানাই।

লিখেছেন প্রগতি বিশ্বাস, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

নীল গেইম্যান (Neil Gaiman) তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "The Sandman"-এ বলেছেন:

“পৃথিবীতে কাউকে ঘৃণার জন্য হত্যা করা হয় না, কিন্তু ভালোবাসার জন্য হত্যা করা হয়।”
জন লেননকে হত্যা করা হয়েছিল তাঁর ভালোবাসা ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৭

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

এতো সোজা!
চাইলেই কেউ কোনো দেশ দখল করে নিতে পারে না- তা সে যতই শক্তিধর দেশ হোক। বড়ো, শক্তিশালী রাষ্ট্র হলেই যদি ছোট এবং দুর্বল দেশকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের জাতীয় ঐক্যের ডাকে কাদের জায়গা হলো, কারা বাদ পড়লেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩


জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসেন নোবেল জয়ী ড. ইউনূস! দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরণের আশার সঞ্চার হয়েছিল যে এইবার বুঝি যোগ্য ব্যক্তির হাতে দেশ শাসনের দায়িত্ব দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এসো বসো গল্প শুনি

লিখেছেন শায়মা, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১২


ছোট থেকেই আমি বকবক করতে পারি। তখনও আমি গল্পের বই পড়তে শিখিনি, তখনও আমি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে পারতাম। আর আমার সে সব গল্প শুনে বাড়ির সকলে হাসতে হাসতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×