somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্য জ্ঞান

২১ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সামাজিক তথ্য ভাণ্ডারে এত বেশী অবাধ তথ্য অনুপ্রবেশ করেছে যে বহু অনুসন্ধানী মানুষ সত্য জ্ঞান লাভের উপায় নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। বহু দার্শনিক বহু পথ দেখিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হোল প্রকৃতির মধ্যেই প্রকৃতির উৎস খোঁজা। বিশ্ব জগতের সকল অস্তিত্বশীল প্রকাশের উৎসে রয়েছে তার গভীরের অন্য কিছু প্রকাশ বা প্রাকৃ্তিক উপাদান। অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিশ্ব জগতের যে কোন অস্তিত্বের উৎসের গভীর থেকে গভীরের উৎস সম্পর্কে প্রাকৃতিক তথ্যই সত্য জ্ঞান। যেখানে উৎসের গভীরে আপাতত যাওয়া যাচ্ছে না সেখানে অনুসন্ধান চলতেই থাকবে কিন্তু অপ্রাকৃতিক কোন ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা হোল উৎপত্তিগত জ্ঞান। ইন্দ্রিয় এর দ্বারা সাধারণ পর্য্যবেক্ষণের মাধ্যমেই অনেক উৎপত্তিগত জ্ঞান অর্জন সম্ভব। যেমন বীজ থেকে গাছের উৎপত্তি। বীজের মধ্যে অনুকূল পরিবেশে গাছ উৎপন্নের সুপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে বলেই বীজ থেকে গাছের উৎপত্তি সম্ভব। প্রকৃতিতে কোন কিছুই সৃষ্টি হয় না। সব কিছুই আদি অবস্থা থেকে পরবর্তি অবস্থার রুপান্তর। এই রুপান্তরের জন্য কোন কারিগরের দরকার হয় না। প্রাকৃতিক নিয়মাবলীই এই সমস্ত রুপান্তরের কারিগর। তবে মানুষই একমাত্র জীব যে প্রাকৃতিক নিয়মাবলী কাজে লাগিয়ে কোন কিছু সচেতনভাবে রুপান্তর করতে পারে। সে হোল রুপান্তরের কর্তা বা কারিগর এবং নির্মাণটি হোল তার সৃষ্টি। এভাবেই সৃষ্টির ধারণাটি সামাজিক জ্ঞানে স্থান করে নিয়েছে। এখন মানুষ মনে করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছুই এক একটি সৃষ্টি এবং এই সৃষ্টির পেছনে কর্তা রয়েছে। বিশ্বের সকল নিয়ম নীতি কোন কর্তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এভাবে মানুষ যেখানে নিজেকে কর্তা দাবী করতে পারছে না সেখানে সে অন্য কোন কর্তার অস্তিত্ব কল্পনা করে নিয়েছে। মনুষ্য কর্তার যেমন কিছু সাহায্যকারী থাকে তেমনি কাল্পনিক বিশ্ব কর্তারও সাহায্যকারী রয়েছে।
ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান হোল তুলনাগত জ্ঞান। আমরা দর্শন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কোন বস্তুর আকার ও রঙ সম্পর্কে তথ্য লাভ করি। মস্তিষ্ক এই তথ্য একটার সাথে আর একটা তথ্যের তুলনা করে বস্তুগুলোকে চিনতে পারে এবং শ্রেণীবদ্ধ করে রাখে। আমরা গোলাকার চাঁদ দেখি আবার গোলাকার আপেলও দেখি। ভাষা এই গোলাকার চাঁদ ও আপেল থেকে ‘গোল’ আকারকে পৃথক নামকরণ করেছে। এটি একটি বিমুর্ত জ্ঞান। পরবর্তিতে কোন বস্তুর আকার কি রকম সেটা ভাষার দেয়া ‘গোল’, চেপ্টা, লম্বা, এই সমস্ত বিমূর্ত সংজ্ঞার সাথে তুলনা করে চিহ্নিত করে থাকি। এভাবে প্রকৃতি থেকে অনেক বিমূর্ত জ্ঞান আমাদের ভাষার তথ্য ভাণ্ডারে অনু প্রবেশ করেছে। এই জ্ঞান সত্য নির্ভর। কিন্তু প্রকৃতি এ সম্পর্কে নির্বিকার। চাঁদ জানে না যে সে গোল। একমাত্র মানুষের পরিভাষাতেই এই গোল আকারের সংজ্ঞা রয়েছে।
জ্ঞানের আর একটি পদ্ধতি হোল পার্থক্যকে চিহ্নিত করা। আমরা দর্শন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জগতে বিভিন্ন রঙ দেখতে পাই। আমরা রঙ্গগুলোর একটার সাথে আর একটার পার্থক্য অনুযায়ী নামকরণ করে সেই তথ্য ভাষায় সঞ্চিত রাখি। রঙ আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘের পার্থক্য। এই তরংগ আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু মস্তিষ্ক রঙ এর মাধ্যমে এই তথ্য ধরে রাখে।
গণনা জ্ঞান লাভের আর একটি পদ্ধতি। প্রকৃতিতে এক এবং একাধিক বস্তুর দেখা পাই। এর থেকে আমাদের সংখ্যার ধারণা আসে। তুলনার জন্য আমরা ‘এক’ একককে ধরে নেই এবং এই এককের সাথে তুলনা করে আমরা গণনা করি কয়টি একক আছে। ‘একক’ একটি বিমূর্ত জ্ঞান। প্রকৃতি সংখ্যা সম্পর্কে নির্বিকার। কিন্তু প্রকৃতিতে এই সংখ্যা ও গণনার ভীষণ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। প্রকৃতির নিয়মাবলী সংখ্যা ও গণনার মাধ্যমে ব্যখ্যা করা যায়। প্রকৃতির সকল মৌলিক পদার্থ স্বকীয়তা লাভ করে তার পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থিত প্রোটনের সংখ্যার উপর। আবার সংখ্যা বা পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কোন পরস্পর নির্ভরশীল ঘটনার সূত্রায়নও করা যায়। যেমন শহরে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দূর্ঘটনার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। এভাবে দূর্ঘটনা একটা দৈব ঘটনা মনে হলেও পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে এটা কিছু নিয়মের অধীন।
এককের মাধ্যমে তুলনামূলক জ্ঞান দ্বারা আমরা স্থান, কাল, অবস্থান, ওজন, তাপ, গতি ইত্যাদি বিভিন্নমুখী বিমূর্ত জ্ঞান লাভ করে থাকি। এগুলো বস্তু আশ্রয়ী জ্ঞান। বস্তু নাই তো এদেরো কোন অস্থিত্ব থাকে না। আবার স্থান, কাল ও অবস্থান বস্তু বা শক্তির মত অস্থিত্ববান কোন কিছু নয়। এগুলোর ধারণা মানুষ তৈরি করে নিয়েছে। কিন্তু এগুলো পরিমাপ করা যায়। এগুলো দ্বারা বস্তুর বিভিন্ন অবস্থা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। ইন্দ্রিয় নির্ভর সকল জ্ঞানই বস্তু নির্ভর। কিন্তু এমন কিছু জ্ঞান রয়েছে যেগুলো সত্য কিন্তু যার অস্তিত্ব শুধুমাত্র মানুষের মস্তিষ্কেই রয়েছে। ইউক্লিডীয় জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি ইত্যাদি সূত্রাবলি এই ধরণের সত্য জ্ঞান। যেগুলোর সত্যতা প্রমাণ করা যায় কিন্তু এরা বিশ্ব জগত নিরপেক্ষ। কিন্তু বিশ্ব জগতের নিয়ামাবলি এই সূত্রগুলি দ্বারা প্রমাণ করা যায়। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড থাকুক বা না থাকুক এই সূত্রগুলি সর্বদাই সত্য। অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব দুটি প্রাকৃতিক অবস্থা। যে মূহুর্তে কোন কিছু অস্তিত্ব লাভ করলো সেই মূহুর্তে সে বিভিন্ন সূত্রাবলীতে জড়িয়ে পরলো এবং এই সূত্রাবলীর ফলে তারা কেবল মাত্র কিছু নির্দিষ্ট পথেই রুপান্তরিত হতে পারে।
পরিসংখ্যানগত বিমূর্ত জ্ঞান দ্বারা আমরা সামাজিক ঘটনাবলিরও সূত্রায়ন করতে পারি। প্রকৃতির একই নিয়মাবলীর অধীনে সর্বদা একই ফলাফল পাওয়া যায়। ফলে মানুষ এই জ্ঞান লাভ করে অনেক কিছুরই প্রাক ধারণা করতে পারে এবং প্রাকৃতিক জগতের একটি সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারে।
কিন্তু মানুষের আচরণে সত্য জ্ঞানের বিশেষ অবদান নেই। সেটা নির্ভর করে সামাজিক জ্ঞান সত্য জ্ঞানের কতটুকু গ্রহণ করেছে তার উপর। ভাষা আবিষ্কারের পর মানুষের আচরণ ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান বা সত্য জ্ঞানের চেয়ে সামাজিক জ্ঞানের উপর বেশী নির্ভরশীল হয়ে পরে। তাই মানুষের সামাজিক আচরণ, তার গতি প্রকৃতি, সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের মানুষের মৌলিক আচরণ সম্পর্কে জানতে হবে। প্রকৃতির কোন নিয়মাবলী যেমন দৈবাৎ ঘটনা নয় তেমনি মানুষের সামাজিক আচরণও কোন দৈবাৎ ঘটনা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:০৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×