somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : আজরাইল

৩০ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফেসবুকে এক মেয়ে স্ট্যাটাস দিল - " I am waiting for Death ."
এমন ঘোষণা দিয়ে কেউ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে নাকি ..!!
আজব তো ..
দেখি একটু বাজিয়ে ..
মেসেঞ্জার এ নক্ করলাম ...
- " Hii "
- " Hlw . কে আপনি .?? আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না । "
- " আমি আজরাইল । তোমার জান নিতে এসেছি । "
- "তাই নাকি । "
মেয়েটা এতক্ষণে বুঝে ফেলেছি আমি মজা করছি । আজরাঈল কখনো ফোন ব্যবহার করে না । মেসেঞ্জার এ নক্ দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না । সোজাসুজি এসে গলায় পা দিয়ে প্রাণ নিয়ে চলে যায়।
কোনো বদমাশ ছেলে খেজুরে আলাপ জমানোর উদ্দেশে নক্ করেছে তাকে এটা বুঝতে এতটুকুও বাকি রইলো না ।
রিপ্লাই দিল...
-এত লোক থাকতে আমার প্রাণ নিয়ে এত টানাটানি কিসের আপনার ?
- তুমিই তো ফেসবুক এ স্ট্যাটাস দিয়েছ," মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি । " তাহলে যে অপেক্ষা করবে তার কাছেই তো আগে যাওয়া উচিত । তাইতো .?
-হুম্ । তাহলে আসেন জান টা নিয়ে যান । এই জীবন আর ভালো লাগে না ।
একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম মেয়েটি প্রথম থেকেই আমাকে আপনি আপনি করে কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু আমি ওকে তুমি বলছি ।
আমি তুমি বলেছি তারও কারণ আছে ।
ও যে ধরনের স্ট্যাটাস দিয়েছে সেই রকম স্ট্যাটাস বেশিরভাগ চোদ্দো থেকে ষোলো বছরের মেয়েরা ব্যবহার করে ।
কেউ লেখে , " I am Dead " ।
ইংরেজি তে অগাধ জ্ঞান তাই বাক্য গঠনের এই অবস্থা ।
কেউ লেখে , " I love my Mom "
কেউ লেখে , " Single life is the best life ."
এসব স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণ একটাই । তারা ভালোবাসতো । প্রেম করতো তাদের নিজের পছন্দের কারো সাথে । কিন্তু সেই ছেলেগুলো এদের কঠিন ছ্যাকা দিয়ে পালিয়েছে ।
অবশ্য এর সাথে এটাও জানান দিয়ে দেয় যে তারা সিঙ্গেল ।
সেই মত একটা হিসাব করে আমি ওর সাথে তুমি করেই বলছি ।
এছাড়া একে "আপনি" বললে সমস্যা ছিল । আজরাইল কখনো " আপনি" বলে না কাওকে ।
বেশি বাড়াবাড়ি করলে " তুই" তেও নেমে যেতে পারে ।
মৃত্যুদূত বলে কথা ।
অনুমান করে বোঝা যায় আমার থেকে মিনিমাম ছয় বছরের ছোট তো হবেই ।
এমনিতেই আমি ছোট বড়ো সবাইকেই আপনি সম্মোধন করেই কথা বলি ।
এটা শিখেছি বাংলাদেশের এক বড়ভাইয়ের কাছ থেকে ।
শাহ ভাই, বছর দুয়েক আগে পরিচয় ।
উনি বলতেন সবাইকে আপনি করে সন্মোধন করে কথা বলতে । উনার থেকে আমি অনেক বছরের ছোটো হওয়া সত্বেও আমাকে উনি আপনি করে বলতেন ।
ওনার কথায় ," আপনি যদি কাওকে আপনি করে সন্মোধন করে কথা বলেন , তাহলে দেখবেন উনি আপনাকে অসম্মান করার সুযোগ পাবেন না । আলোচনার মাঝে কোনো আজে বাজে কোনো আলাপের প্রবেশ ঘটবে না । "
এটা একটা দারুন ট্রিকস । কাজে লাগিয়ে ফল পেয়েছিলাম হাতেনাতে ।

ফেসবুক আইডিতে নাম দেওয়া আছে স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা । যার জ্বালায় আজ তার এমন অবস্থা সে হয়তো উল্টোপাল্টা স্বপ্ন না দেখার তাবিজ ধারণ করেছে ।তাই আজকাল তার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার কথা মনে পড়ছে না ।
কিন্তু এদিকে যে রাজকন্যা কান্নাকাটি করে শেষ পর্যায়ে আজরাঈলের জন্য অপেক্ষা করছে সেটা কি সে জানে .??
আমি মেয়েটিকে বললাম ,
- সে না হয় ঠিক আছে । তোমার জান টা তো কবজ করবোই। কিন্তু তার আগে তোমার সঙ্গে একটু আলাপ ।
- বলুন ...
- তোমার নাম কি.??
- জিহানী খান ।
- বাহ সুন্দর নাম তো ...
জিহানী বুঝতে পারছে আমি ওর সাথে ফ্লাট করছি ..
কিন্তু এর মধ্যেও আর একটা সমস্যা। ও আমার ছবি না দেখে কিছুতেই আমার সাথে কথা বলবে না।
আমিও যমরাজের হাতে কাস্তে নিয়ে কালো কাপড় ঢাকা একটা ছবি দিয়ে দিলাম আজরাইল হিসাবে ।
ও ভালই বুঝতে পেরেছে তার ছবি দেখার প্রচেষ্টা ব্যর্থ।
"হাম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গের" মত " হাম ছবি নেহি দিখায়েঙ্গে" ..
এই তো সেদিন । রাত তখন প্রায় দুটো বাজে । আমি ফেসবুক এ নিউজ ফিডে চরে বেড়াছি..
ঘুম পাচ্ছিল একটু একটু...
হটাৎ মেসেঞ্জারে ইনকামিং অডিও কল ।
স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা ।
ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ভেউ ভেউ করে কান্নাকাটি শুরু করে দিল ।
আমিতো হতভম্ব হয়ে গেছি । সমস্যা কি এই মেয়ের.??
দিল তো ঘুমের প্রস্তুতির বারো বাজিয়ে ।
এর পর থেকে মাঝে মাঝে কথাবার্তা হতো টুকটাক ।
গুড মর্নিং , গুড নাইট টাইপের এসএমএস ।
এরপর একদিন হটাত করে এসএমএস করলো," আমার প্রাণ নিতে আসবেন কবে .??? "
আমি ব্যাপার টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য রিপ্লাই দিলাম , " আজকাল খুব ব্যস্ত আছি । মহামারি চলছে । কাজের খুব চাপ । এখন তোমার প্রাণনাশ করতে পারবো না । "
বেশ পিড়াপিড়ি করতে শুরু করলো ও । আসতেই হবে । না হলে আমি যেখানে বলবো সেখানে যাবে ও ।
কিন্তু ওর প্রাণনাশ করে ওকে মুক্তি দিতেই হবে...
মনে মনে বললাম , " পাগল নাকি । মরার জন্য কেউ এমন ভাবে উঠেপড়ে লাগে নাকি .!!"
আমি রিপ্লাই দিয়ে বললাম, " ঠিক আছে । কাল বিকালের পরে হাড়োয়ার বিদ্যাধারী নদীর উপরে যে ব্রিজটা আছে সেই ব্রিজের উপরে দাড়িয়ে থাকবো । "
"ঠিক আছে " বলে অফলাইন হয়ে গেল জিহানী ...
মেয়ে টা আসবে কি আসবে না এই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লাম । ভাবলাম আমি যেমন ফাজলামি করে কথা টা বলেছি সেও হয়তো জিনিস টা সেভাবেই নেবে ।
তবুও কি মনে হলো গেলাম সেখানে ।
দাড়িয়ে আছি ব্রিজ টার উপরে । সূর্য সবে পশ্চিমদিকে পা বাড়িয়েছে ।
একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে সামনে এসে দাড়ালো । বয়সের অনুমান টা ঠিকই ছিল । ষোল সতের হবে হয়ত।
আমাকে দেখেই বললো , " ওহ তাহলে আপনিই আজরাইল ।"
মাথা নেড়ে বললাম , " হুম।"
পড়ন্ত বিকেল । ব্রিজের উপরটা একেবারে জনশূন্য । একাই দাড়িয়ে ছিলাম ওর অপেক্ষায় ।
কাওকে না পেয়ে আমিই যে আজরাইল সেটা বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি ওর ।
ব্রিজের কংক্রিটের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি । নিচের নদীতে নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া ধানের গাদার উপর বসে থাকা হাস্যোজ্জ্বল বাচ্চা ছেলে টিকে দেখছি মুগ্ধ নয়নে । নদী তীরের পীর গোরাচাঁদের মাজার থেকে ভেসে আসছে কাওয়ালি গানের সুর...
পাশে চুপ করে দাড়িয়ে আছে জিহানী ।
আমি বললাম , " নাও এবারে লাফ দাও এই নদীতে । নদী থেকে আমরা প্রায় একশো ফুট উচুতে দাড়িয়ে আছি । নিচে ব্রিজের থামের গোড়াতে পড়বে এক লাফে । তার পর ঠাস করে মরে যাবে । ওখান থেকে রূহ টেনে নিয়ে যাবো আসমানের দিকে ।"
জিহানির চোখ ছল ছল করে উঠলো ।
বললো , "আমি পারবো না । আপনিই বরং আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিন । "
এত সুন্দর একটা মেয়ে মরার জন্য উঠেপড়ে লাগা থেকে বিরক্ত হয়ে বললাম ," আমি ধাক্কা দিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আজরাইল কখনো নিজে থেকে প্রাণ নেয় না। কোনো না কোনো একটা কারণ দেখিয়ে তবেই প্রাণনাশ করে। তুমি সুইসাইড করলে সেটাই হবে তোমার মরার কারণ । "
ও বুঝতে পেরেছে আমি কখনোই ওকে ধাক্কা দেবো না । এমনিতেই ওর সাথে এতদিন ধরে কথা বলে কেমন জানি একটা মায়া পড়ে গিয়েছে ।
মেয়েটি ব্রিজ থেকে দুই ফুট উচু এবং বেশ চওড়া ব্রিজের রেলিঙে উঠে পরলো ।
আমার দিকে একটা বার তাকালো তারপর মুখ নদীর দিকে ঘুরিয়ে দাড়িয়ে থাকলো...
দাড়িয়ে আছে বেশ খানিক্ষন ধরে।
আমি নিচে দাড়িয়ে আছি ওর সোজাসুজি।
হটাৎ আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো , " আচ্ছা আমি যদি নদীর দিকটা তে লাফ না দিয়ে তোমার দিকে লাফ দেই তাহলে তুমি কি আমাকে না ধরে ছেড়ে দেবে...??"


লিখতে তেমন পারিনা , তবুও চেষ্টা করি ...
ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকিবো..
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:২৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×