গতকাল আদালত হতে বইতে শুরু করেছে সুসংবাদের ফোয়ারা। কতদিন পর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
সবাই বলছে এ আন্দোলন করে বিএনপি জামাত তিন মাসের আন্দোলনে কিছুই পায় নি। এটা ভুল কথা। কোন কিছুই নিষ্ফল যায় না। কারণ বিনা যেমন কার্য্য হয় না, তেমনি ফল বিনা কাজ হয় না। এবারের আন্দোলনে একটি সুদূরপ্রসারী সুফল জাতি পেয়েছে।
তাছাড়া আন্দোলনের কারণে তাৎক্ষণিক সুফলও এসেছে, তা হলো, দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর ঢাকায় এলো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই সুদীর্ঘ সময় সিটি নির্বাচন ছিল ক্ষমতাসীনদের জন্য একটি অলাভজনক এবং নিশ্চিত লোকসানের খাত। এবার নানাবিধ কারণে সরকার মনে করেছে 'নির্বাচনটা দিয়েই দেই', তাতে ঘোলাজলে মাছ শিকারও হবে, আন্দোলনেও জল ঢালা যাবে। নির্বাচনে হারুক আর জিতুক, নির্বাচন-পূর্ব জয় গিয়েছে সরকারের পক্ষে।
সুদুরপ্রসারী সুফলটি সত্যিই আকর্ষণীয় এবং জাতির অনেক আরাধ্য। অভাগা জাতি সবসময় চেয়েছে আত্মবিধ্বংসী হরতাল দেশ থেকে বিতাড়িত হোক। কিন্তু সরকারি দল বা বিরোধী দল কেউই হরতাল নামক 'গণতান্ত্রিক অধিকারটি' ছাড়তে রাজি ছিল না। দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় অনেক চেষ্টা তদবির করেছে হরতালকে আইন করে নিষিদ্ধ করতে। হরতাল দেশের অর্থনীতিকে খুঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছিল এতটি বছর ধরে। সরকারি দল একে বন্ধ করতে চায় না, কারণ ভবিষ্যৎ মওকার সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যাবে। সবমিলিয়ে হরতালকে বন্ধ করা যখন প্রায় অসম্ভব ঠেকলো, তখন বিএনপি জোট এগিয়ে আসলো তাদের প্রাকটিকেল পদ্ধতি নিয়ে। তারা নজিরবিহীন দীর্ঘ এক হরতাল কর্মসূচি দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হরতালকে সকলের কাছে 'অজনপ্রিয়' করে তোলে। হরতাল আজ এতই অনাকাঙ্ক্ষিত যে, হরতালকারী দলের নেতারাও নিজেদের অফিস খুলে রেখেছে। এমনকি আন্দোলনকারীরাও এখন আর হরতাল চায় না। দেশবাসী তো কোনকালেই একে চায় নি। এ হলো তিনমাসব্যাপী আন্দোলনের সুফল, যা জাতিকে বিশেষভাবে উপকৃত করবে।
আদালত থেকে প্রাপ্ত প্রথম সুখবরটি হলো, দু'টি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন লাভ এবং তাতে প্রসিকিউশনের অনাপত্তি। ফলে খালেদা জিয়া আর গুলশানের অফিসে না গিয়ে আন্দোলনে এক প্রকার ইস্তফা দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। এতে দেশের মানুষ এবং বাংলাদেশের সকল শুভাকাঙ্ক্ষী স্বস্তি প্রকাশ করেন।
আদালত থেকে প্রাপ্ত দ্বিতীয় সুখবরটি আসে আজ। একটি বাক্যে 'ডিসমিসড' বলে দেশের প্রধান বিচারপতি ফাঁসির বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের আবেদনকে খারিজ করে দেন। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে কুখ্যাত ঘাতক-ধর্ষক সংগঠন আল-বদল বাহিনীর প্রধান মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কেবল সময়ের ব্যাপার। এ খবরটি শুধু নির্যাতিত পরিবারগুলোর জন্য সুসংবাদ নয়, ত্রিশ লাখ শহিদের পরিবারগুলোর জন্যও বিশাল বড় আনন্দের সংবাদ।