ক্ষমতায় আরোহনের বছর দুই আগে থেকেই অংসান সুচি বার্মিজ রাজনীতিতে প্রভাবশালী। তিনি শুধুই বার্মিজ রাজনীতিবিদ নন - তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। বাংলার আনাচে কানাচে তার সাক্ষাৎকার, ছবি, জীবনী ও সংগ্রামের কথা পাওয়া যাবে। দশটি পুরাতন পত্রিকা বের করুন, সেখানে অংসান সুচিকে পাবেন সসম্মানে আসীন। বাঙালি তাকে যোগ্য সম্মান দিয়ে এসেছে দশকের পর দশক ধরে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায় অথবা বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আজও কি কোন উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন কেউ? সুচির কাছে তো ধর্ম আর সম্প্রদায়ের প্রশ্ন গুরুত্ব পেতে পারে না। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
দেশপ্রেম আর রাষ্ট্রের কথা বললেই আব্রাহাম লিংকনের কথা মনে পড়ে। সুচিকে বুঝার জন্যও আব্রাহাম লিংকনের বিখ্যাত কথাটি উল্লেখ করতে হয়। লিংকন বলেছিলেন: "প্রতিকুল পরিবেশ প্রায় সকলেই মোকাবেলা করতে পারে, কিন্তু কারও চরিত্রকে পরীক্ষা করতে চাইলে তার হাতে ক্ষমতা দিন।"
শুনেছি মিয়ানমারের (বার্মার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসছেন, অথবা এসেছেন। সবাই জানেন, মন্ত্রী হলেও তিনি শুধুই মন্ত্রী নন - তিনি কিংমেকার। অর্থাৎ ভারতের বিগত কংগ্রেস সরকারের সোনিয়ার মতো তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন। কিন্তু শান্তির রাজকন্যার নিকট থেকে বিগত কয়েক মাসে কি শান্তির কোন বাণী শুনেছেন কেউ?
আফগানিস্তানের পরই মিয়ানমার ড্রাগ (হিরোইন, পপি, ওপিয়াম,) উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয়। মিয়ানমারের জিডিপি'র (মোট জাতীয় উৎপাদন) প্রধান উৎস হচ্ছে ওপিয়াম। ড্রাগ কখনও বৈধ বাণিজ্যের পণ্য হতে পারে না, হয়ও নি। ফলে এসবের বাই-প্রডাক্ট হিসেবে এসেছে মানবপাচার, নারীপাচার, শিশুপাচার, মানিলন্ডারিং ও সীমান্ত হত্যা। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ হচ্ছে প্রধান ভুক্তভোগী। কই, সুচির আগমনে বার্মিজ সীমান্তের ইয়াবা কারখানা কি বন্ধ হয়েছে?
সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি আজ দেখা দিয়েছে, সুচির সাম্প্রদায়িক মন নিয়ে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অংসান সুচির কথা বলছি! মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিমদের নাগরিক অধিকার নেই। নিজ দেশে তারা উদ্বাস্তু। রোহিঙ্গাদের কথা তো অকথ্য! তিনি কি মুসলিম বিদ্বেষী বার্মিজ জান্তাদের থেকে ভিন্ন কিছু করে দেখাতে পারবেন? সেই মনমানসিকতা কি তার আছে, বা ছিল?
এসন্দেহ আসতো না যদি এর মধ্যে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোন অগ্রগতি দেখা যেতো। কিন্তু বিশাল বড় এক প্রশ্ন দেখা দিলো, যখন বিবিসির একটি সাক্ষাৎকারে সুচি তার মেজাজ ঠিক রাখতে পারলেন না। মুসলিমদের নাগরিক অধিকার ও মৌলিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রশ্নকর্তার ব্যক্তিগত ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করেন। ঘটনাক্রমে বিবিসির সেই প্রশ্নকর্তা ছিলেন একজন মুসলিম মহিলা। শান্তির দূত সুচির মুখে অবিশ্বাস্য বাণী: 'কেউ আমাকে বললো না যে, একজন মুসলিম আমার সাক্ষাৎকার নিচ্ছে!'
এখান থেকে আমরা কী শিক্ষা পেতে পারি? কী আশা করতে পারি অংসান সুচির ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে? কী হতে পারে বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, তিনি কীভাবে শান্তির পুরস্কার পেলেন! (অথবা, আমরা এত দিন তাকে কী ভেবে এসেছিলাম?) শুধু কি ১৫ বছরের বন্দি জীবনের পুরস্কার? শান্তির পুরস্কারগুলো কি এভাবেই বিশ্ববাসীকে অশান্তি দিয়ে যাবে?
অকাট্য সত্য হলো, পশ্চিমারা কোন মতলব ছাড়া কাউকে পৃষ্টপোষকতা দেয় না। তাই প্রবন্ধের মোরালটি বলে দিচ্ছি: পশ্চিমারা যাদেরকেই পৃষ্টপোষকতা দিয়েছে, মনে করতে হবে যে, সেখানে বিশাল গাফলা আছে। আমাদের দেশেও দু'একটি দৃষ্টান্ত পেয়ে যাবেন খুঁজলেই। (রবীন্দ্রনাথকে কেন নাইট/স্যার উপাধি দেওয়া হলো, সেটি কি বলে দিতে হবে? তিনি পরে বুঝেছিলেন এবং প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।) এদের হাতে ক্ষমতা দেন, সব খোলাসা হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৬