somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদের জীবনের গতিপথ

২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ূন আহমেদের জীবনের গতিপথ
বোরহান উদ্দিন রুবেল

বাংলাদেশের অন্যতম একজন কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখার মতো যোগ্যতা বা অধিকার কোনটাই আমার নেই । তবু কেন জানি অজানা এক তাড়না বার বার আমাকে তাড়া করছে যে তাঁকে নিয়ে কিছু লেখার জন্য । আজ তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’ পড়া শেষ করলাম । শেষ করে মনে হল দেয়ালের উপর একটি রিভিউ লেখি কিন্তু লেখতে গিয়ে মনে হল ইহার স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আগে কিছু লিখে নেই । তাহলে অন্তত তাঁর সৃষ্ট দেয়াল নিয়ে কিছু লেখার অধিকারটুকু পাওয়া যাবে । এই প্রখ্যাত লেখক জন্মগ্রহণ করেন নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের কুতুবপুরে । তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে এসএসসি (SSC) পাস করেন ,ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি (HSC) আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন এবং পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসবে যোগ দেন । ছোটবেলা থেকে তাঁর লেখালেখির উপর চর্চা ছিল । ১৯৭২ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ নন্দিত নরকে ’ প্রথম প্রকাশিত হয় আহমদ ছফার উদ্যোগে । ১৯৯৪ সালে তাঁর প্রথম ছায়াছবি ‘ আগুনের পরশমণি ’ মুক্তি পায় । তিনি ২০১২ সালের ১৯ শে জুলাই নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে মৃত্যু বরন করেন । তাঁকে তাঁর প্রিয় জায়গা নুহাশপল্লিতে কবর দেয়া হয় । তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুইশতেরও বেশী । বই ছাড়াও তাঁর অনন্য একটি সৃষ্টি হল চল্লিশ বিঘা জমির উপর শিল্পকলার ছাপসহ নুহাশপল্লি । নুহাশপল্লি দেখলে মনে হয় তিনি যেন ইহার প্রতিটি জায়গা নিজের মত করে তৈরি করেছেন । আর তাঁর সর্বশেষ বই হল দেয়াল যদিও তা সমাপ্ত করে যেতে পারেননি । যা লিখেছেন তাও তাঁর ভক্তরা হুবুহু পাননা । কারন যা আমদের কাছে এসেছে তিনবার সংস্করণের পর আমরা পেয়েছি । ভাল তিনি মারা গেছেন তা না হলে তাঁকে হয়তো বিচার করা হতো ইতিহাস বিকৃত করার অপরাধে । যদিও তিনি যা লিখেছেন আমাদের দেশের এবং বিদেশের অনেক লেখক এর আগে তা লিখেছেন কিন্তু তবুও কেন জানি তাঁর লেখাটা নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে হয়ত হুমায়ূন আহমেদ বলেই । দেয়ালের ভূমিকায় আনিসুজ্জামান বলেছেন যদিও এটা সংস্কারের পর বাহির হয়েছে তবুও এটা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাবে । তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় বাঙ্গালী কথা সাহিত্যিকদের অন্যতম । বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হয় । তিনি একেধারে ঔপন্যাসিক , ছোট গল্পকার , নাট্যকার ও গীতিকার । বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে তাঁকে পথিকৃৎ বলা হয় । তাঁর কিছুকিছু সৃষ্টি মানুষকে আজীবন নাড়া দিবে । যেমন , হিমু , মিছির আলী ও বাকের ভাই । তাইতো মারা যাবার পর The Times of India ১৬ আগস্ট Tears for Humayun Ahmed : The Shakspear of Bangladesh নামক একটি শিরোনামে Humayun was a custodian of Bangladeshi literary culture whose contribution single handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution . তবে তাঁর প্রথম জীবনের লেখার সাথে শেষ জীবনের লেখার অনেক পার্থক্য রয়েছে । এমনকি তাঁর ধর্মীয় চিন্তা ভাবনায়ও তিনি শেষ জীবনে এনে ছিলেন পরিবর্তন । তিনি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা) এঁর জীবনীও লেখার জন্য সকল নথিপত্র ঠিক করে রেখেছিলেন । তাঁর শেষ জীবনে রচিত কিছু গানেও ধর্মীয় ভাব রেখেছিলেন । সাধারণত তাঁর লেখার যে ধরন ছিল তা হল সাধারন মানুষের কথাগুলো তাঁর গল্প উপন্যাসে এমনভাবে লিখতেন যে , যে কোন ধরণের মানুষ এটা পড়লে মনে করত এটা তাঁকে নিয়ে লেখা । তাঁর লেখা বুঝতে কাউকে মাথা খাটাতে হতনা এভাবেই বুঝতে পারত । তাঁর লেখা ছিল এরকম যে, চকলেটের মত যতক্ষণ মুখে থাকে ততক্ষণ মিষ্টি তেমনি তাঁর লেখা যতক্ষণ পড়া হয় ততক্ষণ ভাল লাগে তাঁর পর আর কোন চিন্তা ভানায় অথবা শিক্ষামূলক খুব বেশি কিছু থাকেন । তবে তিনি তাঁর সহজ সরল সাবলীল ভাষার উপন্যাস দিয়ে বাংলা ভাষার কিছু পাঠক তৈরি করে গেছেন । তিনি যখন শেষ জীবনে এসে বুঝতে পারলেন যে , তাঁর এই লেখাগুলো কালের উত্থান পতনে হয়তো হারিয়ে যাবে , তাঁকে কেউ আর হয়ত নজরুল রবীন্দ্রনাথের মত মনে রাখবেনা তখন তিনি ইতিহাস ও বাস্তব ভিত্তিক কিছু বই রচনা করার পরিকল্পনা করেন ।তাই তাঁর শেষের দিকের প্রকাশিত বই , মুক্তি পাওয়া ছায়াছবিতে এবং গানে আমরা পরিবর্তন দেখতে পাই । যার একটি অন্যতম উদহারন হল ‘দেয়াল’ যা তিনি শেষ করতে পারেন নি । তবুও তিনি যা লিখেছেন তার জন্য তাঁকে বাঙ্গালী জাতি যতদিন থাকবে ততদিন মনে রাখবে । তিনি বাংলা সাহিত্যের বররপুত্র হয়ে এসেছিলেন বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য । বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ তাঁকে নিয়ে গর্ববোধ করে এবং করবে ।

শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×