somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“অশুভ ছাঁয়া”

২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নীলিমা! নীলিমা!
নীলিমা পেছন ফিরে তাকালো দেখে রনি দাঁড়িয়ে আছে।নীলিমা ডাকে রনি পাগলা।সব উল্টাপাল্টা কাজ করা রনির স্বভাব তাই তার এই নাম।সারাক্ষণ পাগলামি করে বেড়ায় যেন কোন ক্লান্তি নেয়।রনি দৌড়াতে দৌড়াতে এসে নীলিমার সামনে দাঁড়ালো।

রনিঃ কই ছিলি এতক্ষণ? তোকে খুঁজে খুঁজে হয়রান।

নীলিমাঃ সেমিনারে ছিলাম এখন স্যারের কাছে যাচ্ছি।আমার প্রজেক্ট এ কিছু ভুল ছিল ঠিক করলাম।এখন স্যারকে দেখাবো।

রনিঃ ধুর! ভুল টুল কিছুইনা সুন্দরী নীলিমা স্যারের আসে পাশে স্যার স্যার করে দৌড়া দৌড়ী করবে ,স্যার তাই চায়।

নীলিমাঃ রনি! তুই একটু বেশি বুঝিস।

নীলিমা রনিকে এডিয়ে যেই স্যারের কাছে যেতে প্রস্তুত হল,রনি নীলিমার হাত টা টেনে ধরে যাবার পথে বাধ সাধল, আর বলল আচ্ছা বিজ্ঞ নীলিমা যাবার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়া যান।নীলিমা রনির কথায় মেজাজটা এমনি খারাপ হয়ে গেল তারপরও বলল, কি প্রশ্ন?

রনিঃ আচ্ছা বলতো রোদের আলোতে যে ছায়া পড়ে আর ভরা পূর্ণিমায় চাঁদের আলোতে যে ছায়া পড়ে দুইটার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

নীলিমা চিন্তার মধ্যে পড়ে যায় কারন নীলিমা ভাল করে জানে এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রনি তার কাছে আশা করেনা এবং যে উত্তর ই নীলিমা দিবে রনি সেটা নিয়ে তুমুল হাসি তামাশা করবে।তার হাসির শব্দে চারপাশের সবাই তাদের দিকে চাতক পাখির মতন চেয়ে থাকবে।

নীলিমাঃ হুম,একটা সূর্যের আলোতে তৈরি আরেকটা চাঁদের আলোতে তৈরি সিম্পল!

রনিঃ ভয়ঙ্কর রকম অট্ট হাসি দিয়ে বললো আরে গাধী! কোন অমিল নাই বরং মিল আছে দুইটাই মাথা বিগডে দেয়ার মতন,সূর্যের আলোতে যে ছায়া তাতে গরমে মাথা বিগডে যায় আর চাঁদের আলোতে যে ছায়া তাতে ভাল লাগায় মাথা বিগডে যায়।পাশে তোমার মতন নীলিমা থাকলেতো কথাই নেই।নীলিমার থুতনিতে হাত দিয়ে খুনসুটি করে রনি হাসতে হাসতে চলে যায় বন্ধুদের মাঝে। নীলিমা রনির উত্তরে মজা পায়, মুচকি হাসি দিয়ে সেও চলে যায় স্যারের চেম্বারের দিকে।

নীলিমা আর রনির বন্ধুত্ব সেই ইউনিভারসিটির প্রথম থেকে,দুজনের চলাফেরা আর পছন্দের কোন মিল নেই।অমিলে টইটম্বুর।নীলিমা রনির ব্যাপারে কখনও মাথা ঘামায়নি যতটা না তার বন্ধুরা ঘামায়। নীলিমার ধারনা রনি নিজে ই পাগল কখন কি বলে তার ঠিক নেই।কোন ব্যাপারেই রনি সিরিয়াস না তাছাড়া রনি কখনও বলেনি সে নীলিমা কে ভালবাসে।সুতরাং যেমন আছে তেমন ই ভাল। নীলিমা শান্ত কোমল জীবন নিয়ে কোন হেয়ালিপনা নেই। তবে কি এক আকর্ষণ নীলিমার মধ্যে আছে যা সবাইকে আকর্ষিত করে।সবাই পছন্দ করে নীলিমার সঙ্গ কেমন করে যেন নিজেকে নীলিমার কাছে সমর্পণ করে দেয়। নীলিমার সবচেয়ে সুন্দর টার গভীর দুটি চোখ।

নীলিমার সাথে রনির প্রথম সাক্ষ্যাতে নীলিমা বেশ আতঙ্কিত ছিল। ইউনিভারসিটির প্রথম দিন ক্লাসের জন্য যাচ্ছে নীলিমা। ডিপার্টমেন্টে যেই ঢুকল হঠাৎ একটা ছেলে বড়সড় শরীরের অধিকারী জিম করে শরীরটা পাহাড় বানিয়েছে সানগ্লাসেস পড়া বেশ ফিল্মী ভঙ্গিমায় নীলিমার মুখের কাছে এসে স্থির।নীলিমার নিশ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছে,বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পরেছে যদিও তবুও ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে কি করবে তাও মাথায় আসছেনা।মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ইউনিভারসিটির র্যাবগিং ব্যাপারটা সম্পর্কে নীলিমার জানা আছে।ভাবছে এর পরবর্তী স্টেপ টা কি হবে??এইবার ছেলেটা একটু দূরে সরে সহজ ভঙ্গিমাতে বলছে দূর থেকে দেখলাম তোমার চোখে আমার ছবি কাছে এসে ব্যাপারটা কনফার্ম হলাম।এই বলেই একটা অট্টহাসি দিয়ে চলে গেল। নীলিমা কিছুই বুঝলনা নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ।তারপর সস্থির নিশ্বাস ফেলেমনে মনে ভাবল যাক বাঁচা গেলো র্যা গিং এততুকুই ছিল। যদিও প্রথম দিন ক্যাম্পাস এসে নীলিমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। ক্লাসে ঢুকে মেজাজ আর দিগুন তিনগুন খারাপ হল যখন দেখল ওই ছেলে সিনিয়র না তার ক্লাসেরই।তাও আবার নীলিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।পরে বহুবার ক্ষমা চেয়ে নীলিমার সাথে সম্পর্ক ঠিক করেছে। তারপর ধীরে ধীরে দুজন ভাল বন্ধু হয়ে উঠে। যদিও রনির একটা স্বভাব আগের মতই আছে নীলিমাকে খেপানো শুধু নীলিমা এখন বদলে গেছে আগে মেজাজ খারাপ হত এখন হয়না।বরং সে কিছুটা মজা পায়।

আজ ইউনিভারসিটির শেষ পরীক্ষা ছিল, নীলিমার মনে সেই প্রথম দিনের আতঙ্ক। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, পা টলছে।মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম,মনের ভেতর হাজারও প্রশ্নের ঝড়।মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা ভয় যেন শরীরে শিহরন দিয়ে যাচ্ছে অনবরত।
রনির হাতে লাল গোলাপ নীলিমার মনে কোন দোলা দিচ্ছেনা। রনি কত সরল ভাবে অবলীলায় বলে দিল ভালবাসি!!

নীলিমার বিয়ে ঠিক হয়েছে ছেলে ডাক্তার।ভবগুরে একজন রনিকে তার পরিবার কখনই মেনে নিবেনা,অপেক্ষাও করতে দিবেনা।আর পরিবাবের মতের বাইরে কোন সিদ্বান্ত নিবে নীলিমা সেভাবে গড়ে উঠেনি। নীলিমার মন জানে সেও রনিকে ভালবাসে শুধু জানতে দেয়নি রনিকে। সেদিন বিয়ের কথা জানিয়ে চলে এসেছিল।প্রতিকুলতা মোকাবেলা করার একটু সাহস করে উঠতে পারেনি।এই গ্লানি তাকে সারাজীবন কষ্ট দিবে,একবার ভাবে একটু সাহস করলে কি হতো সবাই নাই বলবে তাও তো চেষ্টা করার তৃপ্তি টুকুতো থাকতো। নীলিমার নির্লিপ্ততা রনির মনে আঘাত আনে ভীষণ ভাবে। মনের কথা জানাতে একটু বেশিই দেরীই করে ফেলল বোধ হয়, রনির বিশ্বাস ছিল নীলিমা তাকে ফিরিয়ে দিবেনা, যোগাযোগ আর করেনি সেদিনের পর শুনেছে নীলিমার বিয়ে হয়ে গেছে...।
সেই প্রথম দিনে বেগুনী জামা পরা নীলিমার ছবি রনির মনে গেঁথে গেছে চাইলেও ভুলতে পারেনা সেই চিকন কালো চুলের ঝরনা।কি ভীষণ মায়াবী নীলিমার ওই দুটি চোখ।আমৃত্যু নীলিমা তেমনই থাকবে রনির হৃদয়ে। মাঝে মাঝে ভাবে নীলিমা কি তাকে ভুলে গেছে??রনি এখন কবি অশুভ রনি সবাই ভাবে তার মাথা বিগড়ে গেছে, প্রতি পূর্ণিমায় রনি ভাবে তার মাথাটা যদি সত্যি সত্যি বিগড়ে যায়, যদি ছায়াটার দেখা মেলে!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:০২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×