somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নকিয়ার পুরনো সেই রিং টোন......।

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নকিয়া সেল ফোনের পুরনো সেই বহু ব্যবহারকৃত রিং টোন যখনই বেজে উঠে আবির চমকে যায়। আশেপাশে যতবারই এই রিং টোন বাজে আবিরের বুকটা ধুরু ধুরু করে।বুক শুকিয়ে মরুভূমি। তৃষ্ণার্ত আবির চারপাশে বোকার মতন চেয়ে থাকে।বেশ কয়েকদিন থেকে এমনটা হচ্ছে।কেন হচ্ছে এই প্রস্নই সে বারে বারে নিজেকে করে কোন প্রতি উত্তর পায়না। একবার ভাবল নার্ভ দুর্বল ক্লান্তি অনুভব করছে তাই এমন হচ্ছে হয়ত।বেশ কয়েকদিন রাতে ঘুমাতে পারেনি।লম্বা একটা ঘুম দিলে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে।রাত জেগে কাজটা শেষ করেছে ক্লায়েন্ট এর কাজটা পছন্দ হয়েছে। কোন কাজ শেষ করে যখন সেটা তার মনপুত হয় ক্লায়েন্ট এর পছন্দ হয় তখন আবির তৃপ্তি পায়। রাত জাগা সার্থক মনে হয়।

আবির রিং টোনটা শুনেই বিছানায় উঠে বসলো। নাহ! কোথাও বাজেনা তার পাশে কারও হাতে মোবাইল নেইতো। পাশের রুমে আবিরের রুমমেট ছেলেগুলো এসেছে।পাশের ঘর থেকে হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাদের বাসায় সবমিলে মোট চারটা রুম।একটায় আবির একা থাকে কারন তার রাত জেগে কাজ করতে হয় রুমে আলো জ্বললে বাকিদের অসুবিধা হবে। বাকি দুইটা রুমে যারা থাকে তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র। মাঝের রুমটা খাবারের কাজ চালায়।অবশ্য সবসময় না মানে নামেই শুধু খাবারের ঘর হিসেবে রাখা।সবাই এলোমেলো যার যার মত করে খেয়ে নেয়।এগারটা বাজে ঘড়িতে,একটানা লম্বা একটা ঘুম হল।বিকেল পাঁচটায় ঘরে ফিরেই বিছানায়।এখন একটু ঝরঝরে লাগছে। তবুও মন থেকে সেই চিন্তা দূর হচ্ছেনা কিছুতেই।আবিরের মনের মধ্যে গুমোট একটা ভাব| আবির ভাবতে থাকে সে কি এই রিং টোন কখনো ব্যবহার করেছে? নাহ! মনে পড়ছে না, বরাবরই সে এই রিংটোন এভোয়েড করে গেছে|এই রিং টোন তার বরাবরই বিরক্ত লাগত।

আবির ঢাকা পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে আহসানুল্লাহ থেকে বি.এস.সি করেছে| পড়াশুনা শেষে যখন চাকরির জন্য হাহুতাশ করছিল তখন আবিরের এক পরিচিত বড় ভাইয়ের সুপারিশে একটি ফার্মে তার চাকরি জীবন শুরু হয়| মাত্র আট হাজার টাকা বেতন পেত আবির| আট হাজার সে ছাত্র ছাত্রী পড়িয়েও কামাই করেছে| কিন্তু চাকরি একটা দরকার এই সমাজে চলতে গেলে চাকরি একটা আইডেন্টিটি!!অবশ্য এই চাকরিতে তার কিছু সুযোগ সুবিধা ও ছিল|পড়াশুনা শেষ করে কাজে ততটা পটু তখনো হয়ে উঠেনি | কথা হয়েছে যার অধীনে সে কাজ করবে প্রথমে আবিরকে কাজ শেখানো হবে তারপর আবিরের কাজের পার্ফরমেন্স দেখে তাকে পার্মানেন্টলি রাখা হবে এবং সেলারি ও বাড়ানো হবে| সে বড় ভাই তাকে ভাল কাজ শিখিয়েছেন |দুবছর হল আবিরের চাকুরি জীবন |আবির এখন ভাল একজন প্রোগ্রামার | ওয়েবডিজাইনার | যার অধীনে কাজ শিখেছে সে আবিরকে আন্তরিক ভাবে কাজ শিখিয়েছেন | এর ফাকে আবির অফিসের খরচে বেশ কিছু ভেন্ডর সার্টিফিকেশন ও নিয়ে নিয়েছে|

আবিরের শিক্ষা বর্তমান অবস্থা আবিরকে আজ আত্নবিশ্বাসী করে তুলেছে | একটা সময় আবির আলাভোলা ধরনের ছেলে ছিলো| বোকা সরল আবির এখন অনেক দৃঢ় আত্নবিশ্বাসী | কে বলবে পাচ বছর আগে এক সুন্দরী ছাত্রীকে পড়াতে গিয়ে তটস্থ আবিরকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে তারপর পড়ানো শুরু করতে হয়েছিলো |হঠাৎ কি এমন হল আত্নবিশ্বাসী আবিরের মনে ভয়ের আনাগোনা, তাকে একটু একটু করে ভেংগে দিচ্ছে| ভুতের মুভি দেখতে গিয়ে যেমন অশরীরি ছায়া আলো আঁধারের মাঝে হঠাৎ বিকট শব্দে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠত এত তেমন কিছুনা সামান্য একটা রিং টোন।আবির ব্যাপারটা নিয়ে এখন কারও সাথে কথা বলেনি ঠিক কি বলবে তাও বুঝতে পারছেনা।সবাই আবার পাগল টাগল ভেবে বসে থাকবেনাতো??কয়েকবার ভেবেছে ব্যাপারটা অতি তুচ্ছ মাথা না ঘামালেই মন থেকে চলে যাবে।আবির ভাবছে ব্যাপারটা লোপাকে জানালে কেমন হয়, লোপা সিরিয়াসলি নিবেনা| বরং পুরো ব্যাপারটা কে হাস্যকর করে তুলবে ।লোপার সাথে আবিরের পরিচয় এক পহেলা বৈশাখে| ঝুটঝামেলা হীন পরিচয় শেষে পরিনয়| আবির বরাবরই সুদর্শন যুবক| লোপা ও কম যায়না নাদুস নুদুস বেশ সুন্দরী|

আজ ঘটনার এগার তম দিন | আবিরের কাছে সবকিছু দুর্বিষহ লাগছে| ব্যাপারটা আবিরকে বিরক্তিকর পর্যায়ে নিয়ে এসেছে| অফিস থেকে এক সপ্তাহের. ছুটি নিয়েছে | গত দুই বছরের তেমন ছুটিও কাটায়নি| নিজের মনেই ভাবলো এ কেমন জীবন ধারন করছিল আবির|ভাবছে ডাক্তার দেখাবে পাগল টাগল হয়ে যাচ্ছে নাতো| মাঝে মাঝে রিংটোন বাজতে থাকলে সে মনে মনে ভাবে বন্ধ না হোক ভয় একটু লাগুক ভয় লাগতে লাগতে সব ভয়ের উর্ধ্বে চলে যাবে, সব অজানা আজ জানা হয়ে যাবে| ঘুম না হওয়া তে মাথা ঝিম ঝিম করছে তবুও ঘুমাতে পারছেনা| ঘুম আসছে চোখে গভীর ঘুম....
.৫ মি.গ্রা. এপিট্রা খেয়েছিল কাজ হয়নি মাঝে মাঝে খেতে হয় তাই এই অষুধের কার্যকারিতা তার উপর আর হচ্ছেনা| তাই ২৫ মি.গ্রা. ট্রিপটিন খেয়েছে |টানা ১৫ ঘন্টা ঘুমালো| সন্ধ্যা সাতটায় ঘুম ভাংলো, জেগেই দেকজলো পেটের সব রাক্ষসী রা জেগে উঠেছে এখনই কিছু না পেলে নাড়ি ভুড়ি সব খেয়ে ফেলবে| গায়ে সার্ট টা জড়িয়ে বের হয়ে গেল পেট পুজা করতে |লোপাকে একটা কল করতে হবে এই পনের ঘন্টায় লোপা মোট ছাব্বিশ বার কল করেছে| লোপা কখনো আবিরকে ফোনে না পেলে অস্থির হবেনা| রুম মেট একজনের নাম্বার রেখেছে তাকে কল করে জেনে নিবে|কিন্তু কখনো বাসায় আসবেনা | একবার এসেছিলো লোপাকে দেখে আবিরের খুব মায়া হচ্ছিলো | লোপার মন্তব্য যে বাসায় ছেলে থাকে কোন মেয়ের ছোঁয়া থাকেনা সেখানে কেমন একটা বিকট গন্ধ থাকে যা অসহনীয় |তবে আবিরের ধারণা লোপার কিঞ্চিত সুচিবায়ু আছে|

কয়েকদিন ধরে লোপা আবিরের অস্বাভাবিকতা খেয়াল করেছে তবে তাকে কিছু বলেনি শুধু একটা প্রস্ন করেছে -তোমার কি কোন সমস্যা হয়েছে আবির?
চারপাশের সবকিছু ভাল লাগছে বাইরে ঠান্ডা বাতাস বইছে মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে| কাজের চাপ না থাকাতে আবিরের কাছে কেমন যেন হালকা হালকা লাগছে | মনে হচ্ছে চারপাশের সব সৌন্দর্য খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে পারছে|হঠাৎ. করে পাশের টেবিলে বসে থাকা একটা মেয়ে এবং ছেলেকে দেখে আবিরের কি যে হল নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে| অশ্বস্থি লাগতে শুরু হয়েছে| বিলটা পরিশোধ করেই দোকান থেকে বেরিয়ে পড়লো |
হ্যা উষা! কি অদ্ভুত উষার কথা আবির ভুলেই গিয়েছিল | মনে রাখার মতো করে সে কখনোই ব্যাপারটাকে দেখেনি | সেভাবে তাকে স্পর্শ করেনি| খেলা খেলা দিয়ে শুরু খেলতে খেলতে শেষ | নেত্রকোনার মেয়ে উষা| সারারাত জেগে এই কিশোরী উষার সাথে ফোনালাপ চলতো আবিরের| লাল নীল স্বপ্নে বিভোর ছিলো উষা যার কাছে সব সত্যি মনে হচ্ছিল | ভালবাসা র তীব্রতা আর উষ্ণতায় পরম সুখের সাগরে ভেসে যাচ্ছিল উষা|এই অপরিপক্ক আবেগই উষাকে নেত্রকোনা থেকে টেনে এনেছিল এই কঠিন শহর ঢাকায় আবিরের বাসায় | ফোনে কথাবলা কালিন আবির ঠিকানা এবং নিজের সম্পর্কে সব সত্যি কথা বলেছে| শুধু ভালবাসা ভালবাসা ব্যাপারটাই মিথ্যা ছিল|আবির মজার ছলে বলেছিল উষাকে তার কাছে চলে আসতে দুজন মিলে টুনটুনির সংসার পাতবে| বেচারী উষা ভুত ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে তল্পিতল্পা গুছিয়ে চলে এসেছে ভালবাসার আবির পেতে| আবির. উষার এভাবে আসাটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না | আর উষা! আবিরের এই সহজ প্রত্যাখ্যান তাকে ভেংগে চুর চুর করে দিচ্ছিল |উষার মোবাইলে রিং হচ্ছে একবার দুইবার তিনবার| উষার পরিবারের কেউ হবে হয়তো |উষা ফোন কেটে দিলো চুপচাপ | উষার দুচোখ বেয়ে জলের ধারা আর তারও গভীরে অনেক বেশি শুন্যতা | উষা বিদায় নিল সেদিনের পর আবিরের সাথে আর কথা হয়নি| আবিরের ও সাহস হয়নি|

শুনেছিল বিবেকের দংশন বড় দংশন বিষাক্ত সাপেরও ছোবল তার কাছে কিছুইনা| সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ তাইপান যার ছোবলে প্রান নাশ হতে সময় লাগবে মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিট | কিছুক্ষণ বিষের জ্বালা তারপর মৃত্যু সুধা| কিন্তুু আবির এই জ্বালা থেকে কিভাবে পরিত্রান পাবে| যে ঘটনা ঘটে যায় তাতো বদলানো যায়না কেবল ভুলে থাকা যায়| আবির ব্যাপারটা ভুলে থাকতে পারছেনা |অনুশোচনা করা ছাড়া তার কিছু কি করার আছে| আজ এতদিন পর এভাবে কেন ঘটনাটা তার মনে পড়লো ?? নাকি প্রকৃতি তাকে তার নিজস্ব পদ্ধতি তে শাস্তি দিল|অথবা তার ঘুমিয়ে থাকা বিবেক জাগিয়ে দিয়ে গেল........


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×