somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“নূর হোসেনের নামায শিক্ষা”

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এলাকার সবাই নুর হোসেন কে মনে মনে ভিষণ অপছন্দ করে| এক মাত্র কারণ নুর হোসেন মুরুব্বী মানুষ কিন্তুু নামায আদায় করেনা| পেছনে তাকে নিয়ে সবার মধ্যে সমালোচনা ঝড় বয়ে যায়|নুর হোসেন রাজ উকের চতুর্থ শ্রেনির কর্মকর্তা | তার এইসব ব্যাপারে কোন মাথা ব্যাথা ও নেই| কে কি বলল তাতে তার কি এসে যায় সে এই নীতিতে চলা একজন মানুষ | তবে দান খয়রাতের বেলায় সে আবার এলাকায় অন্য দশ জন থেকে এগিয়ে |ভালো টাকা জীবনে আয় করেছে যে পথেই হোকনা কেন সুক্রাপুরে ঝকঝকে তকতকে পাচ তলা বাড়ি বানিয়েছেন | সবাই আয় করলেও অনেকে দান খয়রাত করেনা নুর হোসেন করে| বিপদ্গ্রস্ত অসহায় মানুষদের নুর হোসেনের কাছে আসলে সে কখনো খালি হাতে ফেরত দেয়না| তার গ্রামের বাড়ির লোকজন নুর হোসেনের এই দানশীলতার কথা যানে তাই মনে মনে যত অপছন্দ আর পেছনে যত সমালোচনা করুক বিপদের সময় চলে আসে সাহায্যের আশায় |নুর হোসেনের ছেলে মেয়ে বাবার এইসব কর্মে খুব বেশী সন্তুষ্ট না বরং বিরক্তি প্রকাশ করে| কারন তারা জানে তাদের বাবাকে এইসব লোক অপছন্দ করে | পাড়ার মানুষের পেছনে হাসাহাসি বাবাকে নিয়ে তামাশায় ছেলেমেয়েদের খারাপ লাগাই স্বাভাবিক| মাকে তারা জানায় তাদের কষ্টের কথা| ছেলেমেয়ে কষ্ট পেলে অসহায় হলে মার কাছেই ছুটে আসে|ছেলেমেয়েগুলো যত বড় হচ্ছে ততই আত্নসম্মান বোধ বেড়ে যাচ্ছে | মা বেচারি অসহায় |একদিকে এক রোখা স্বভাবের স্বামী নুর হোসেন অন্যদিকে ছেলেমেয়েদের আত্নসম্মান |

বিয়ের পর নুর হোসেনের বউ বিলকিস বেগম তাকে অনেকবার করে নামাযের তাগিদ দিয়েছেন কিন্তুু বিলকিস বেগমের কোন কথাই নুর হোসেন গুরুত্ব দেন নাই| বিলকিস বেগম সংসারের সকল চাহিদা মোতাবেক জিনিস স্বামীর কাছ থেকে পেয়েছেন তাই স্বামীর সাথে কোন ব্যাপার নিয়ে কখনও কলহ করেন নাই নামায নিয়ে ও না। তবে নিজে পারত পক্ষে কখনও নামায কাজা করেন নাই|আমাদের সমাজে নারীরা চাহিদা পুরোনে স্বামী নির্ভর এবং কিছুটা যেন অসহায়| অথচ তাতো দুজনেরই সংসার |নারী, সর্বদা দোষ হলে যে তার ঘাড়েই সব আসবে|এই ভঁয়ে আগেই কুকড়ে যায়।সংসার গুছাতে গুছাতে বিলকিস বেগমের সময় পার হয়ে গেছে| স্বামী কে আর সেভাবে হেদায়েত এর পথে আনার চেষ্টাও করেন নাই| কিন্তু এখন ব্যাপারটা ভিন্ন ছেলেমেয়েদের মান ইজ্জতের বিষয় | সমাজে মাথা হেট হবার বিষয় |তাছাড়া যতদিন সংসার করেছেন বিলকিস বেগম দেখেছেন তার স্বামী নুর হোসেন অতিব ভাল একজন মানুষ শুধু নামায না পড়া বড় দোষের একটা|

সাধারণত দেখা যায় যেসব মানুষ অল্প বয়সে নামায পড়েন না তারাও বয়স বাড়ার সাথে সাথে নামায পড়া শুরু করেন আল্লাহ ভীতি প্রবল হয়ে যায়|মৃত্যু চিন্তা মাথায় ঢুকে যায়।তখন আর এই ভুবনের কোন চিন্তা তাদের মাথায় থাকেনা পরকালের ভঁয়ে জুবুথুবু। কিছুদিনের মাঝেই কপালে দুই ভ্রুর মাঝে কালো একটা বৃত্ত হয়ে যায| কপালের কালো দাগ অবশ্য সবার পড়েনা যাদের সামনের কপালের হাড় একটু উচু তাদের আগে আগে কালো হয়ে যায়| কিছু থাকে অল্প বয়সে বাবা মা শখ করে মাদ্রাসাতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে কিন্তু বাপধনের তো মন বসেনা সে পড়বেনা আর মাদ্রাসায়।তারপর ও নিরুপায় কিছু করার নাই।কেউ কেউ আছে মেনে নিয়ে নিজেকে সেভাবে গড়ে নেয় আর কেউ আছে “না ঘারকা না ঘাটকা “ এমন অবস্থা হয়ে যায়। ছোটবেলায় নিজের মতামত দামটা পরিবার দেয়নি তাই বড়বেলায় এসে সুদে আসলে সব মাসুল করে নেয়।
হঠাৎ করেই নুর হোসেন এলাকার মানুষের হাসির খোরাক আরও দিগুন বাড়িয়ে দিলেন।তিনি তার মোবাইলের রিং টোন সেট করলেন আযানের ধবনি।মোবাইল তার ব্যাক্তিগত সম্পদ তিনি সেখানে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন সেটা তার ভাবনা। ব্যাপারটা আসলে সবার কাছে ততটা সহজ স্বাভাবিক নয়।যে ব্যাক্তি নামায পড়েনা সে যদি তার মোবাইল রিং টোন দেয় আযানের ধ্বনি স্বভাবতই আসেপাশের মানুষের কাছে টা বিরক্তিকর লাগবেই।মোড়ের চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে গল্প কালিন নুর হোসেনের মোবাইলে যখন কল আসে বেজে উঠে আল্লাহ হু আকবর...।। পাশে বসে থাকা মুরুব্বি গন বেজায় বিরক্ত আর দূরে দাঁড়িয়ে অল্প বয়সী যে ছেলে গুলো গল্প করছে তারা চাপা হাসি দিয়ে গড়া গড়ি খাচ্ছে আর ফিস ফিস করে কথা বলছে।নুর হোসেনের ছেলেমেয়েদের মাথা ঠিক নেই বাবার এই কর্মে তারা হতভম্ব।তাদের ধারনা বাবার মাথা পুরাই গেসে।
বিলকিস বেগম টেনশনে পড়ে গেছেন জামাইকে কিভাবে এই রিং টোন নিয়া কথা বলবেন।সরাসরি বলতে তিনি পারবেন না স্বামী রাগ হতে পারেন।ভাবছেন এভাবে বলাও যায়না আবার না বলে উপায় নেই তার স্বামী যা শুরু করেছেন মানা যায়না।কোথায় এই বয়সে নামায পড়বে তা নয় নামায নাই কলেমা নাই মোবাইলের রিং টোন দিয়া রাখসেন আল্লাহ হু আকবর! স্বামীর উপর রাগ হল বিলকিস বেগমের।সিদ্বান্ত নিলেন মনে মনে স্বামীর সাথে কথা তুলতে হবে ভিন্ন ভাবে।রাতে খাওয়া শেষে শুইতে গেলে স্বামীর মেজাজ মর্জি দেখে বিলকিস বেগম বললেন –

ঘুমাইছেন?

-না!

দুইদিন পর রোযা শুরু আপনি নামায টা পড়া শুরু করেন।
-হুম

হুম না।শুরু করবেনই।এর আগেও বহুবার বলছি হুম বলেও শুরু করেন নাই। কয়দিন পড়ে আবার আগের যে সেই কাজ। বিলকিস বেগম একটু জোর খাটানোর সুযোগ পেলো। সুযোগ পেয়ে বলে ফেলল আপনি এইসব কি শুরু করছেন।নামায পড়েন না মোবাইলে রিং টোন দিয়া রাখসেন আযানের সুর।আপনার মাথা ঠিক আছে?ছেলেমেয়েরা পাড়ায় মুখ দেখাতে পারেনা লজ্জা পায়।নুর হোসেনের বউয়ের এই কথায় তার খুব আত্নসন্মানে লাগলো তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলেন একটু রেগেও গেলেন তবে রাগের সাথে ব্যাথা ও ছিল বউ তাই ভয় পেলনা।নুর হোসেন একটু রাগ নিয়ে বলতে লাগলেন রেগে গেলে আঞ্চলিক ভাষা চলে আসে-

হামি বগড়ার ছল।হামার মনডা খুবি লরম।মাথা কলে ঠিক আছে।বাকিগুলার মাথাত সমস্যা।নামায না পড়লে গুনা হবি সেডা হামি জানি।তাই বল্যা মোবাইলত আযানের রিংটোন দেওয়া যাবিনা এডা কোন হাদিসত আছে?

তারপর আরও একটু কাতর হয়ে বলল-

মা যকন মরযা গেছল তার এনা পরেই ফজরের আযান দিছলো।আযানের ধ্বনি হামার খুবি ভাল্লাগে।মনডা ক্যাংকা জানি করে।আযানের ধ্বনি ভাল্লাগা কি অপরাধ?মা মরযা যাওয়ার পর হামাক কেউ নামায শিকাইনি।হামু আগগোরোহো লিয়া শিকিনি।

নুর হোসেনের চোখের কোনায় অশ্রু জমা হয়েছে।নারীর হৃদয় অতি অল্পে গলে যায়।আল্লাহ তায়ালা বিশেষ সময় নিয়ে কোমলমতি মেয়েদের বানিয়েছেন।স্বামীর চোখ দিয়ে যে কোন কারণে দুফোটা জল কি ঝরে পড়লো স্ত্রীর চোখ দিয়ে দু ফোটা নয় দশ বার ফোটা অবলীলায় ঝরে পড়ে।স্বামীকে এভাবে কাঁদিয়ে বিলকিস বেগম নিজেই যেন অনুতপ্ত,তারপর বললেন আপনি নামায পড়েন আল্লাহর কাছে মার জন্য দোয়া করেন তিনি যেন আপনার মাকে বেহেশত নসিব করেন ।
পরদিন ভোরবেলায় প্রথম রোযায় সেহেরী খেয়েই নুর হোসেন ওযু করে মসজিদে রওয়ানা হলেন।মসজিদে তার আশেপাশে পরিচিত মরুব্বীগন মধ্যবয়সী সবাই আড় চোখে তাকে দেখছেন অবশ্য তাতে নুর হোসেনের ভ্রুক্ষেপ নেই তিনি নামায আদায় করলেন মনের সচ্ছতা নিয়ে।মায়ের জন্য আল্লাহর দরবারে কাদলেন দোয়া চাইলেন-

“রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সগীরা”


**এই রমযানে আল্লাহ সব মানুষকে আলোরপথে নিয়ে আসুক**



৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×