somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ছোট্ট একটা ক্ষত অথবা পাপবোধ"

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঠিক কতক্ষন এভাবে তাকিয়ে আছে হিসেব নেই।এখন সময় গুলো বেহিসেবে অমনযোগে এইভাবে তাকিয়েই কাটায় রুনা।জানালা দিয়ে তাকালে পশ্চিমের পুকুরের কালো জল দেখা যায়।এক দৃষ্টিতে মিশ মিশে কালো জলে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গহিনে নিজের অস্তিস্ত্ব প্রতিবিম্ব কিছুই খুঁজে পায়না। ছোট বেলায় এই পুকুরে তারা বোনেরা সবাই কত গোসল করেছে ।একটু বড় হবার পর বাবা ওদের দালানের পাশে বড় করে গোসল খানা বানালেন পুকুরে গোসল করাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলনে।মাঝে অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে ,এখন পুকুরের পানিতে শ্যাওলা জমে গেছে।শুনেছে পুকুরটা আর কিছু দিন পর মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে। পুকুরের পানিতে জমে থাকা শ্যাওলা পুকুর পাড়ের আগাছা গুলো প্রতিদিন কত টুকু করে বেড়েছে গত সাত মাসে রুনা সে খবর ও রেখেছে।
রুনার জীবনটা এমন ছিলনা কখনো ভাবেনি এমন হবে।উচ্ছাস আর আনন্দে ভরপুর ছিল।রুনারা পাঁচ বোন দুই ভাই।বোনে বোনে সারা দিন হাসি তামাশা করে সময় কাটানো ছাড়া ওদের তেমন কাজ ছিলনা।শহরে রুনার বাবার বড় ব্যবসা কঠিন ধার্মিক ফারুক উল্লাহ্‌। বড় ছেলে নেশায় ডুবে জীবন পার করছিলেন।ফারুক উল্লাহ্‌ ছেলেকে রিহেবে দিয়ে দিলেন।পাঁচ মাস থাকার পর ছেলে সুস্থ হলে তাকে এনে ব্যবসায় লাগিয়ে দিলেন সাথে সাথে বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে আনলেন।গরীব ঘরের রূপসী মেয়ে।রুনারা সবগুলো বোন পড়াশুনাতে একবারে কাঁচা।প্রথম চান্সে কেউ মেট্রিক পাস করতে পারেনা।দ্বিতীয় বার কেউ করেতো কেউ কেউ তৃতীয় বারেও পাস দিতে পারেনা।বড় বোন তৃতীয় বারেও মেট্রিক পাস দিতে পারলোনা বাবা ফারুক উল্লাহ্‌ তাকে ভাল পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিলো।

রুনার বড় দুবোন জেসমিন বিউটি অনেক কষ্টে মেট্রিক পাস দিয়ে ঘরে বসে অপেক্ষা করছে বাবা কখন ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে।রুনা প্রথম বার মেট্রিক দিলো অংক আর ইংরেজি খারাপ করল।দ্বিতীয় বার দিলো অংকে আবার খারাপ করলো।রুনার জন্য নতুন মাষ্টার রাখা হল।এই মাস্টারের বয়স আগেরটার চাইতে একটুকম।চেংড়া মাষ্টার রাখার ব্যাপারে সখিনার ঘোর আপত্তি আছে তারপর ও রুনার সহপাঠি একজন তার সাথে পড়বে এই মর্মে মা রাজি হলেন। সখিনা বেগম স্বামী ফারুক উল্লাহ্‌ র সাথে সংসার করতে করতে নিজেও কেমন জানি কঠিন প্রকৃতির হয়ে গেছেন।সংসারে তিন তিনটা কাজের মেয়ে আছে এদের সাথে সারাদিন কর্কশ স্বরে কথা বলতে বলতে এখন আর স্বাভাবিক স্বরে কথাও বলতে পারেন না তার উপর চার মেয়েতো আছেই। বাড়ির মাষ্টারের সাথে হাসি মশকরা করা তাদের সব বোনের প্রিয় বিষয়।মা প্রথম দিন ই মিজান কে জানিয়ে দিল মনযোগ যেন পড়ায় থাকে এদিক সেদিক নয়,সখিনা বেগমের গলার স্বর এমন কর্কশ যে কোন সবল চিত্তের মানুষ তার ঝারি শুনলে হৃদকম্পন বেড়ে যাবার কথা, মিজানের ও তার ব্যতিক্রম হলনা।

তারপরও রুনার ভুল হয়ে গেল এত কঠিন বাধার মাঝেও অবুঝ মন ভুল করে বসলো।কিছু বুঝে উঠার আগেই সময়ের স্রোত রুনার সব আনন্দ উচ্ছাস কে মুহূর্তেই থামিয়ে দিল টেনে ছিড়ে নিয়ে গেল সব সুখ।মা সখিনা বেগম চেয়েছিলেন ভ্রুন টা নষ্ট করতে পারেন নি দেরী হয়ে গেছে।তারপর থেকে মেয়েকে এই ছোট ঘরটাতে বন্দি থাকার শাস্তি দিয়েছেন।মিজান নামক সেই কাপুরুষ টা পালিয়েছে।

সখিনা বেগম বাড়ির পুরনো কাজের মেয়েটাকে রেখে বাকি দুজনকে বিদায় করে দিয়েছেন,এসব ক্ষেত্রে পুরনো কাজের লোক ঘরের মানুষ হয়ে যায় আর বাকিরা এই বাড়ি ও বাড়ি কথা লাগায়।যা নয় তার চেয়ে দুই লাইন বেশি লম্বা হয়ে যায় কথা।কথার ডালপালা গজায়।সখিনা বেগমের রাজত্বে সবচেয়ে বড় শক্তি হল বিপদে সবাই তার সিদ্ধ্বান্তে একমত পোষণ করে এবং সেই মোতাবেক কাজ করে যায়।মেয়েগুলো তার একেবারে বাধ্য হয়ে যায়।কঠিন সংকটে সখিনা বেগমের দায়িত্বশীলতা এবং বুদ্বিমত্তার সাথে তা মোকাবেলা করা সত্যই তারিফ পাবার মতন।

দেখতে দেখতে আরও দুমাস পার হয়ে গেল।রুনার ভয় ভয় হতে লাগলো।গত নয় মাস বড় দুইবোন তার অনেক যত্ন করেছে।কোন কমতি রাখেনি মায়ের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।কখনো দুকথা শুনায়নি বোন কে,যখন রুনা কেঁদেছে নিরবে বাকি দুবোন ও কেঁদেছে।মা সখিনা বেগম মাঝে মাঝে ঘরে এসেছেন রুনাকে দু একটা প্রশ্ন করেছেন যতক্ষন মা ঘরে থাকতেন মার কড়া দৃষ্টি থাকতো রুনার দিকে আর রুনা দুর্বল ঝাপসা দৃষ্টি থাকতো মেঝেতে।রুনার সেই দৃষ্টিতে কোন ভয় লজ্জা কিছুই নেই!!

গভীর রাত মেয়ে বিউটির ডাকে সখিনা বেগমের ঘুম ভাঙল।শরীরের সকল
নাড়ীভুঁড়ি ছিরে প্রাণটা বের হরে এল।সময় নিল নয় মাস তিন দিন।শরীর নিস্তেজ
হয়ে পড়েছে রুনার ।রুনা কাঁদছে এই কান্না কি মুক্তির কান্না নয়টা মাস শরীরে
ঝঞ্ঝাট টা বহন করেছে কাল থেকে আর করতে হবেনা নাকি দীর্ঘ সময় বহন
করতে করতে এই ঝঞ্ঝাট টাকেই সবচেয়ে বেশি আপন লাগছে।রুনার শরীরের
একটু একটু করে বেড়ে উঠা প্রাণটার সাথে মা কি করতে পারে সে ধারনা রুনার
আছে তারপর ও মার সাথে এই নিয়ে কথা বলার সাহস ও শক্তি কোন টাই নেই
রুনার।

দু বছর হল রুনার বিয়ে হয়েছে,স্বামীর সাথে রুনা ঢাকাতে থাকে।ফুটফুটে একটা
মেয়ে হয়েছে রুনার।সংসারে সুখের ছোঁয়া আছে তারপর ও মাঝে মাঝে প্রান কাঁদে
পুরনো দিনগুলোর কথা ভেবে সেই ছোট্ট প্রাণটার কথা ভাবে মা সখিনা ছোট্ট
প্রানটাকে গোসল খানার পাশে মাটি চাপা দিয়েছেন।রুনা বহুবার আড় চোখে
দেখেছে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠেছে তবে কাউকে কিছু কখনো বলেনি।মার
উপর কোন অভিমান হয়নি,মাতো তার ই ভালো চেয়েছে। নিজের উপর ঘৃণা
হয়েছে নিজেকে পাপী মনে হয়েছে নিরপরাধী সেই প্রানটার জন্য যাকে
একপলকের জন্য ও দেখা হলনা,যে পৃথিবীর কোন সুন্দর ই দেখে যেতে পারেনি
ভোরের স্নিগ্ধতা স্পর্শ করার আগেই রাতের অন্ধকার তাকে গ্রাস করেছে।!!!
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×