আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য ইবাদাতের ২টি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত
ইবাদাত ততক্ষণ পর্যন্ত সৎ-আমলে পরিগণিত হবে না যতক্ষণ না তাতে দুটি শর্ত পাওয়া যায়ঃ
প্রথম শর্তঃ (الإخلاص) বা একনিষ্ঠতা , অর্থাৎ ইবাদাত করা হবে একমাত্র আল্লাহ তা’লার উদ্দেশ্যে, একমাত্র তাকে খুশি করার জন্য।
দ্বিতীয় শর্তঃ (المتابعة) বা শরীয়ত মোতাবেক হওয়া, শরীয়ত সম্মত হওয়া, আর ইবাদাত ততক্ষণ পর্যন্ত শরীয়ত সম্মত হবে না যতক্ষণ না নিন্মলিখিত ছয়টি বিষয় ঐ ইবাদাতে শরীয়ত সম্মত হবে।
1. (السبب) কারণ বা উপলক্ষঃ কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর ইবাদত করে এমন একটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে যা শরীয়তে নেই, তাহলে সেটা বিদআত হবে এবং পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হবে।
যেমনঃ কিছু কিছু মানুষ হিজরি রজব মাসের সাতাইস তারীখের রাতে জাগরণ করে ইবাদাত করে থাকে, কারণ হিসেবে তারা বলে এ রাতে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর মিরাজ হয়েছিল। “তাহাজ্জুদ” এর নামাজ ইবাদাত, কিন্তু যখন এই “তাহাজ্জুদ” কে মিরাজের রাত উপলক্ষে পড়া হবে তখনই সেটা বিদআত বলে গণ্য হবে। কেননাঃ সে এই ইবাদাতকে এমন কারণের উপর ভিত্তি করেছে, যা শরীয়তের দিক সাবস্থ নয়। উপলক্ষের ক্ষেত্রে ইবাদতটা শরীয়ত মোতাবেক হতে হবে। আর এই বৈশিষ্ট্যটি অত্যন্ত গুরুত্যপূর্ণ । যার মাধ্যমে অনেক বিদআতকে চেনা যায়। যেগুলোকে অনেকে মনে করে সুন্নাত কাজ অথচ প্রকত পক্ষে তা সুন্নাত নয় ।
2. (الجنس) বা শ্রেণীঃ অবশ্যই ইবাদাত শ্রেণীগত দিক দিয়ে শরীয়তের সাথে মিলতে হবে । যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত করে এমন ইবাদাতের মাধ্যমে যে ইবাদাতের ধরণটি শরীয়তে উল্লেখ হয়নি তা গ্রহণযোগ্য হবে না ।
যেমনঃ কোন ব্যক্তি যদি ঘোড়া কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি হবে না । কেননাঃ প্রকারের ক্ষেত্রে সে শরীয়তের খেলাফ করেছে । শরীয়তে (بهيمة الأنعام) বা চতুষ্পদ জন্তু যার গোস্ত খাওয়া হালাল করা হয়েছে, শুধু সেগুলোর কোরবানি বৈধ করা হয়েছে। যেমনঃ উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি । আর ঘোড়া এর অন্তর্ভুক্ত নয় ।
3.(القدر) বা পরিমাণঃ যদি কোন ব্যক্তি একটি নামাজ বৃদ্ধি করে এই মনে করে যে, নামাজ ফরজ, আমরা বলব এটা বিদআত, অগ্রহণযোগ্য । কেননাঃ এটা পরিমাণের ক্ষেত্রে শরীয়তের বিরোধী। আর যদি কোন ব্যক্তি জোহরের নামাজ চার রাকআতের পরিবর্তে পাঁচ রাকআত পড়ে (বেশি পূন্য পাওয়া যাবে মনে করে) তাহলে তার নামাজ সর্বসম্মতি ক্রমে স্থিক বলে গণ্য হবেনা।
4.(الكيفية) বা পদ্বতিঃ পদ্ধতিগত দিক দিয়ে “আমল” শরীয়তের মোতাবেক হতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি ওজু করে এই ভাবেঃ প্রথমে দুই পা ধৌত করল, অতঃপর দুই হাত ধৌত করল, অতঃপর মুখ-মন্ডল ধৌত করল, তাহলে আমরা বলব তার ওজু হ্লনা। কেননাঃ পদ্ধতিগত দিক দিয়ে সে শরীয়তের বিরোধীতা করেছে।
5.(الزمان) বা সময় / কালঃ সময়ের দিক দিয়েও ইবাদাত শরীয়ত সম্মত হতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি হিজরী যুলহজ্জ্ব মাসের প্রথম তারিখে কোরবানি দেয় তাহলে তার কোরবানি হবেনা। কেননাঃ সময়ের ক্ষেত্রে সে শরীয়তের খেলাফ করেছে। (কোরবানির সময় হ্লঃ ১০ই যিলহজ্ব এর ঈদের নামাজের পর)।
6. (المكان) বা স্থান ক্ষেত্রঃ কোন ব্যক্তি যদি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও (إعتكاف) “এতেকাফ” করে তাহলে তার “এতেকাফ” সঠিক বলে গণ্য হবে না। কেননাঃ “এতেকাফ” মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও হয়না। যদি কোন মহিলা বলে যে আমি আমার বাড়িতে যেখানে নামাগের জায়গা আছে সেখানে “এতেকাফ” করব । তার “এতেকাফ” সঠিক হবে না, জায়গার ক্ষেত্রে শরীয়তের খেলাফ হওয়ার কারণে।
উপরোক্ত ছয়টি বিষয়ে কোন ব্যক্তির ইবাদাত শরীয়ত সম্মত না হলে তা সঠিক পন্থায় করা হয়নি বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এখলাসের সহীত সঠিকভাবে ইবাদাত করার তৌফিক দান করুন।
---------------------------------------------------------------অনুবাদকৃতঃ
মুলঃ মুহাম্মদ সালেহ আল-উসাইমিন
من كتاب: الإبداع في كمال الشرع وخطر الإبداع
المؤلف: محمد بن صالح العثيمين –رحمه الله-.
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




