somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং আমার ভাবনা...[ রিপোষ্ট ]

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান আওয়ামী সরকার তাদের নির্বাচনী ইসতেহারে ঘোষণা দেয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার। ডিজিটাল বাংলাদেশ তাদের নির্বাচনী ইসতেহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা। কেমন হবে ২০২১ সালের সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ?
ডিজিটাল বলতে আসলে কি বোঝানো হয়েছে তা পরিষ্কার না হলেও, “বাংলাদেশ” এর পূর্বে “ডিজিটাল” বসিয়ে সরকার যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে তা পরিষ্কার। প্রকৃত অর্থে ডিজিটাল বলতে ০ এবং ১ এর সমন্বয়ে গঠিত কোন তথ্যকে বোঝায়। ডিজিটালের বিপরীত শব্দ হল এনালগ।
যাই হোক ডিজিটাল নিয়ে বেশি গবেষনা না করে আসা যাক সরকারের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কি করা উচিত বা কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন সম্ভব তার প্রসঙ্গে।
যেহেতু আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে বুঝে নিয়েছি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ, তাই তথ্যপ্রযুক্তি চর্চা, আর তথ্যের সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করি। আর এর জন্য সবার প্রথমে যে বিষয়টির দিকে সরকারের গুরুত্ব দেয়া উচিত তা হল ইন্টারনেট সেবা। বর্তমানে ইন্টারনেটের গুরুত্ব একজন মানুষের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সচেতন মানুষ মাত্রই জানে। বর্তমানে সব কাজ কম্পিউরাইজড হবার পাশাপাশি অনলাইন ভিত্তিক সেবার সংখ্যাও চালু হয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিং, বাজার, সংবাদপত্র পাঠ এবং আরো অনেক কিছুর সাথে সরকারের সাম্প্রতিকতম প্রশংসনীয় পদক্ষেপ “অনলাইনে টেন্ডার”। কিন্তু অনলাইনে এত কিছুর পরও যে কাজটি কোন সরকারই করে নি তা হল ইন্টারনেটের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তা ছড়িয়ে দেয়া। আমাদের দেশের সব কর্মকান্ড হয়ে উঠেছে রাজধানী কেন্দ্রিক। রাজধানী ঢাকায় ইন্টারনেট যতটা সহজলভ্য, ততটা হয়ে উঠেনি অন্যান্য বিভাগীয় বা জেলা শহরগুলোতে। আর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এখনো ইন্টারনেটের ব্যাবহার সম্পর্কে জনগণ অজ্ঞ। কিন্তু আমাদের আছে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইন, যার ব্যান্ডউইডথ এর বেশির ভাগই আছে অব্যাবহৃত। তারপরও দেশের ইন্টারনেটের সংযোগের জন্য উচ্চমূল্য গুনতে হচ্ছে ব্যাবহারকারীদের। বার বার দাম কমানো হলেও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কোন কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমানোর কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। উপরন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার, আর লাভ করছে কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী আই এস পি। তত্ত্ববধায়ক সরকার আমলে ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে লাইসেন্স দেয় কিছু ওয়াই ম্যাক্স অপারেটরের। শুরুতে লাইসেন্স প্রতিযোগীতায় লাইসেন্স জিতে নেয় দুইটি দেশি কম্পানি। কিন্তু তারা উচ্চমূল্যে লাইসেন্স নিলেও গ্রাহক পর্যায়ে এখনো আসতে পারে নি। এরা শুধু আমাদের স্বপ্ন দেখিয়ে চলছে এখনো। কবে নাগাদ যে এরা মাঠপর্যায়ে কাজ করতে পারবে তা এখনো বলা যায় না। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নেয়া কিছু ভুল পদক্ষেপ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে ভিওআইপি নিষিদ্ধকরণ। বাংলাদেশী আইনে ভিওআইপি অবৈধ হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই ভিওআইপি বন্ধ করতে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়, আর তা হল ভিস্যাট এর লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করা এবং বর্তমানে যেসব ভিস্যাট চালু আছে তা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া। নিঃসন্দেহে এটা ছিল একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ আমাদের দেশে সাব মেরিন কেবল আসার পর থেকে তা বহুবার কাটা পড়েছে। আর আমাদের দেশের বিকল্প কোন সাবমেরিন কেবল নেই। যেকোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে সাবমেরিন কেবল কাটা পড়া স্বাভাবিক। আর দেশে যদি কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়( আল্লাহ না করুক ) তবে তো আমাদের বহিঃবিশ্বের সাথে সংযুক্ত হবার একমাত্র মাধ্যম থাকবে সাবমেরিন কেবল। আর এটা যদি কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে বহিঃবিশ্ব থেকে আমরা হয়ে যাব বিচ্ছিন্ন। তাই অন্ততঃ নিজেদের স্বার্থে আমাদের সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত। আর ভিওআইপি? বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। আর এসব বেকারের কর্মসংস্থানের জন্য একটি উপায় হতে পারে ভিওআইপি ব্যাবসা। আর এজন্য প্রয়োজন সহজ শর্তে ঋণের ব্যাবস্থা করা, আর নামমাত্র লাইসেন্স ফি। তাহলে মনে হয় না সরকারের খুব একটা লোকসান হবে, বা দেশের জন্য কোন ক্ষতি হবে। এ ব্যাপারে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে ভিস্যাট কে বলির পাঠা না বানিয়ে ভিওআইপি বৈধ করণের মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধান এবং বহিঃবিশ্বের সাথে যোগাযোগ আরো সহজ করা সম্ভব। আর নতুন ভিস্যাটের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইন্টারনেট সেবা বৃদ্ধির দিকেও সরকারের নজর দেয়া দরকার। শুধু তাই নয়, সাবমেরিন কেবলের যে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথ, তারও সুষ্ঠু ব্যাবহার দরকার। যদি দেশের মানুষকে কম দামে ভাল ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা যায় তবে তা দেশের উন্নতি এবং অর্থনীতিতে বেশ ভাল ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।
ইন্টারনেট সহজলভ্যতা থেকে এবার দৃষ্টিপাত করি বিদ্যুতখাতে। যদি দেশের জনগণের জন্য ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতসেবা নিশ্চিত না করা যায় তবে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদেখা হবে “গাছের গোড়া কেটে গাছের আগায় পানি ঢালা” -রই নামান্তর। যদি বিদ্যুতের নিশ্চয়তা সরকার না দিতে পারে তবে দেশের উন্নতি যে ব্যাহত হবে তা বলার অবকাশ রাখে না। বিএনপি-জামাত জোটের শেষভাগে শুরু বিদ্যুত নিয়ে ভোগান্তি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছরেও হয়নি বিদ্যুত সমস্যার সুরাহা। বর্তমান সরকার ১বছর পার করতে চলল। ডে লাইট সেভিং পদ্ধতিতে যে অবস্থার উন্নতি হয়েছে তাও চোখে পড়ে না। সরকার আবার সমুদ্রের গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলন করে বিদ্যুত তৈরি করতে চায়। সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস ইস্যু নিয়ে আলোচনা সমালোচনা কম হয়নি। ২০% গ্যাস নিজের জন্য রেখে ৮০% গ্যাস অন্যকে দিয়ে দেয়া যে কত বোকামি তা সহজেই বোঝা যায়। আসলেই সরকার এত বোকা, না এর পিছনে অন্য কোন শক্তির হাত আছে তা বোঝা না গেলেও গ্যাস থেকে বিদ্যুত -সত্যিই খুব বোকামি। কারণ বিশ্ব যখন জ্বালানি সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে, ঠিক তখনই আমরা আমাদের মজুদ গ্যাসের সিংহভাগ বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে যে অল্প অংশ হাতে পাব তা দিয়ে বিদ্যুত তৈরি করব। বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে পারমানবিক শক্তি থেকে বিদ্যুত প্রস্তুতির দিকে, সৌরশক্তি থেকেও যেখানে বিদ্যুত প্রস্তুতের প্রচেষ্টা স্বার্থক করা হচ্ছে, সেখানে আমরা পড়ে আছি সেই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত প্রস্তুতে। যদিও এই পারমানবিক জ্বালানি অত্যন্ত ব্যায়বহুল, তবুও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় এটাই সবচেয়ে কার্যকর। আজ আমরা গ্যাস দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা কতখানি পূরণ করব? কিছুদিন পর গ্যাস শেষ হলে? তখন আমরা কি অন্ধকারে থাকব? আর এখনই পারমানবিক জ্বালানি থেকে বিদ্যুতে গেলে আমরা বাঁচাতে পারব আমাদের মূল্যবান গ্যাস, যা আমরা অন্য কাজে লাগাতে পারি। তাই বিদ্যুতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত খুব ভেবে চিন্তে নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। আর গ্যাসের ব্যাপারে সকলের অংশগ্রহনে সরকার কার্যকর একটি পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।
বিদ্যুতের পর আসা যাক শিক্ষার দিকে। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার গুরুত্ব যে জাতি গঠনে কতটুকু তা শিক্ষিত মানুষ মাত্রই জানে। কিন্তু আমাদের দেশের ঘুনেধরা শিক্ষাব্যবস্থা দেশের অগ্রগতিতে কতটুকু ভূমিকা পালন করে? এখানে শিক্ষাব্যাবস্থা পরিবর্তনের নামে ছাত্রদের উপর চালানো হয় গবেষণা। ছাত্ররা যেন গিনিপিগ। শুধু ইংরেজির ক্ষেত্রেই বিগত বছরগুলোতে এত ঘন ঘন কারিকুলাম পরিবর্তন করা হয়েছে যা শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারী অদুরদর্শীতার ফল।তাই শিক্ষার জন্য চাই সরকারী কার্যকর শিক্ষানীতি। শিক্ষা নিয়ে আজ আর কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। পোষ্টটির সমস্ত মতামত আমার ব্যাক্তিগত। আমার চিন্তা চেতনার কোন ভ্রান্তির সুস্থ সমালোচনা কাম্য।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×