কোন এক কালে, ছড়াগুলো সব ছড়িয়ে পড়লো রাজ্যে। রাজা পড়লেন চিন্তায়। রাজার চিন্তা দেখে মহাচিন্তায় অস্থির যতো পারিষদ।
কী করা যায়? রাজা উচ্চারণ করলেন নিচুস্বরে, আনমনে।
সাথে সাথে পারিষদের বজ্রনিনাদ, তাইতো! কী করা যায়?
পারিষদের বজ্রনিনাদে ভীষণ বিরক্ত হলেন রাজা। গলা সপ্তমে তুললেন তিনি, বললেন উপস্থিত পারিষদের উদ্দেশ্যে রাগতস্বরে, কী করা যায় সেই কর্তব্য স্থির করার জন্য আপনারা রয়েছেন। তা না করে আমার কথার সুরে সুর মেলালেন কোন সাহসে? কোতয়াল গর্দান নাও সকলের।
কোতয়াল গর্দান নেবার জন্য তো এক পায়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু সমস্যা হল দেশের সমস্ত তরবারি উড়িয়ে নিয়ে গেছে দুষ্টু ঝড়!
কোতয়াল মুখ কাঁচুমাচু করে সে কথা জানাতেই রাজা ক্ষিপ্ত হলেন ভীষণ। তিনি তৎক্ষণাৎ আদেশ দিলেন, দুষ্টু ঝড়টাকে এখুনি বেঁধে আনো, যাও।
দেশের সমস্ত সৈন্যসামন্ত নিয়ে ঝড়কে বেঁধে আনতে ছুটলো কোতয়াল। হন্যে হয়ে সকলে খুঁজতে লাগলো ঝড়কে। কিন্তু ঝড়কে কেউ খুঁজে পেলে তো! অথচ খালি হাতে ফেরা যাবে না রাজার কাছে।
কী করা যায়? ঘর্মাক্ত কোতয়াল বাধ্য হয়ে বললেন শেষপর্যন্ত, হাতের কাছে যাকে পাও তাকেই ধরো।
সৈন্যসামন্তরা হাতের কাছে পেলো গোঁফদাড়িতে মুখ ঢাকা একজন মানুষকে।
তাকেই ধরলো তারা। ধরে বেঁধে নিয়ে এলো রাজদরবারে।
রাজা তো বেজায় খুশি! আচ্ছা! এই বুঝি সেই দুষ্টু ঝড়?
গোঁফদাড়িতে মুখ ঢাকা মানুষটা মিটিমিটি হেসে জবাব দিলো, না, আমি ঝড় নই, আমি হচ্ছি ‘পর’।
‘পর’ মানে! বিস্মিত রাজার জিজ্ঞাসা।
পর মানে, আপন নই কারো। তবে সমস্যা যদি থাকে দেশে, সমাধান দিতে পারি নিমেষে।
রাজা বললেন, সাধু! সাধু! বিশাল সমস্যায় আছি রে ভাই। সমাধান চাই।
আমাদের ছড়াগুলো সব ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্য জুড়ে। কী করি বলো তো এখন?
গোঁফদাড়িতে মুখ ঢাকা মানুষটি মুচকি হাসলো আবার, বললো, সমাধান সোজা। ছড়াগুলোকে থাকতে দিন ছড়িয়ে। কোন সমস্যা তো হবেই না, বরং মন ভাল হবে সকলের।
আরে! এতো সহজ সমাধান! এতো সহজে বাঁচলো দেশের মান!
খুশি রাজার মন। খুশি পারিষদ, সৈন্যসামন্তগণ।
থাক তবে ছড়িয়েই থাক ছড়াগুলো।
সেদিন থেকে রাজ্য জুড়ে ছড়া আর ছড়া।
যাকে বলে একেবারে ছড়ার ছড়াছড়ি!
প্রকাশক: আগামী প্রকাশনী
প্যাভিলিয়ন ১০
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: রাজীব দত্ত
সকলের আশীর্বাদ এবং ভালোবাসা প্রার্থনা রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৫৫