অবশেষে, দীর্ঘ সাধনার পর মীনজীবন পেলাম আমি। এখন আমি মাছ, তবে যে আকার প্রকারে সচরাচর দেখতে অভ্যস্ত আপনারা, সে দৃষ্টিতে বিচার করলে বোঝা যাবে না সেটা, আর তেমনটা নয়ও ঠিক বাহ্যদৃশ্যে, কিন্তু দৃশ্যের অন্তরালে যে সব দৃশ্য লুকিয়ে থাকে, অদৃশ্যে দৃশ্যমান, সেই অতিলৌকিক দৃশ্যপটে অভূতপূর্ব পরিবর্তনটুকু ঘটে গেছে, ভাবে স্বভাবে এখন মাছ আমি, আমার শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ঘটে গেছে অবাক রূপান্তর, আমার ফুসফুস রপ্ত করেছে ফুলকোর কর্মপদ্ধতি ইতিমধ্যে, শ্বাসযন্ত্র শিখে গেছে কী করে শ্বাস নিতে হয় জলের ভেতর, এবং দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকু শুষে নিয়ে কীভাবে পরিত্যাগ করতে হয় অবশিষ্ট জলটুকু জলের ভেতরেই। এটা রপ্ত করাটাই শ্রমসাপেক্ষ, যা একটু কষ্টের, আর বাদবাকিটা অভ্যেসের, যেমন, চোখের পাতা বন্ধ না করে দিনের পর দিন অবলীলায় থাকতে পারা, এটা নিরবচ্ছিন্ন চর্চার ফল, চোখের পাতাগুলোকে অক্ষিকোটরের যতোটা সম্ভব ভেতরে ঢুকিয়ে নেবার চেষ্টা করলেই চোখের মণি দুটো স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামনে এগিয়ে আসে অনেকখানি, এটা হয়তো জানা নেই আপনাদের, এবং না জানাটা স্বাভাবিক, যদিও বেশ ধীরে ধীরে ঘটে সেটা, তবে সেটা ঘটেই একসময়, যেমন ঘটেছে আমার ক্ষেত্রে, ১৮০ ডিগ্রি কৌণিক বিস্তারে আমার দেখার জগত এখন অনেক বড়, যেটা ধারণাতীত, এবং কল্পনাকে হার মানানো।
মীনজীবন নিয়ে আমার ভাবনাটা এসেছিলো অবশ্যই ডারউইনের বিবর্তনবাদ পড়তে গিয়ে, পড়ছিলাম, এবং পড়তে পড়তে হঠাত্ আমার ইচ্ছে হলো বিবর্তনবাদের সীমা পেরিয়ে ভাবনাকে আরও এগিয়ে নেবার, অথবা আরও পিছিয়ে নেবার বিবর্তন সীমাকে, আমি ধরে নিলাম বানর থেকে মানুষ, অর্থাত্ মানুষ হচ্ছে উত্কৃষ্ট ক্রমবিবর্তনের ফল, এবং বানর হচ্ছে বিবর্তনের শুরুটা, এই শুরুটাই কি শেষ কথা? প্রতিটা শুরুর আগে আরেকটা শুরু আছে, যেমন, কথনের আগে থাকে প্রাক কথন, সেভাবে ভাবলে 'বানর'ই-বা কি ছিলো আগে? 'বানর'ই-বা বিবর্তিত হয়েছে কোন প্রাণী থেকে? কি ছিলো এই বন্যপ্রাণীটি আদিতে, যখন কোনো বনভূমিই ছিলো না, তখন? অথবা যখন কোনো প্রাণীই ছিলো না স্থলভাগে, তখন? যখন স্থলভাগই ছিলো না পৃথিবীতে, তখন? যখন জলে জলে পরিব্যাপ্ত ছিলো পৃথিবী, তখন? সব প্রাণীর আদি উত্স কি জলই ছিলো তাহলে? মানুষ? মানুষের আদি উত্স কি জলই তাহলে? বিবর্তনের আদিম ধাপে মানুষ ছিলো জলজ জীব?
আমি প্রাণের বিকাশ নিয়ে ভাবলাম না আর, ভাবলাম না এককোষী থেকে বহুকোষী প্রাণের রূপান্তর, প্রবেশ করলাম না অমেরুদণ্ডী মেরুদণ্ডী প্রাণের বিকাশ তত্ত্বের গভীরে, জল, আমি স্থির হলাম জলে, কোনো না কোনো জায়গায় তো স্থির হতে দিতেই হয় ভাবনাকে, আমি স্থির হলাম, মীনজীবনের প্রতি আকর্ষণ আমার দুর্বার, সেই থেকে আমি শুরু করলাম সাধনা, লক্ষ্যে পৌঁছবার কঠোর তপস্যা, যার ফল এই যে আমার মাছ হয়ে ওঠা, যার ফল দীর্ঘ কাঙ্খিত এই জলবাস, এই মীনজীবন।
ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৬