"প্রিয়া সাহা টেষ্টে" বাংগালীরা সফলতার সাথে উর্তীণ হয়েছেন; প্রিয়া সাহা পুরো বাংগালী জাতির বিপক্ষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে নালিশ করেছে, জাতি একযোগে বলেছেন, "অভিযোগ মিথ্যা", দেশ প্রেমের পরীক্ষায় জাতি উত্তীর্ণ হয়েছেন! জাতীর পক্ষে, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, উনার বিপক্ষে ব্যবস্হা নেয়া হবে; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলেছেন; সাহার বাড়ীর সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে, ফেইসবুকে আগুন ধরেছে, ব্লগ উত্তপ্ত হয়েছে, সংবাদ পত্রের বিক্রয় বেড়েছে, টেলিভিশনে দেশ প্রেমিক বাংগালীরা সাহাকে কিভাবে শুলে চড়ানো হবে, সেটা নিয়ে কথা বলছেন!
১৯৭১ সালে, বাংগালী মুসলমানদের সবাই স্বাধীনতার পক্ষে ছিলো না, একাংশ বৃহত্তর পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; প্রতিটি হিন্দু মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলো; মুক্তিযুদ্ধের সময়, গ্রাম ঘেরাও করে, প্রথমে হিন্দুদের খোঁজা হতো: পুরুষদের লুংগি খুলে নুনু দেখা হতো, কলেমা পড়তে বলা হতো; তারা সব হারায়েছে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, গত ৪৮ বছরে ওদের একাংশ বাংগালীদের ভয়ে পালিয়ে গেছে, এটার বিপক্ষে নালিশ করার দরকার ছিলো।
২০১৭ সালে রোহিংগারা প্রাণ বাঁচাতে যখন বাংলাদেশে ঢুকছিল, আমরা সবাই তা সমর্থন করেছিলাম; এখনো রোহিংগাদের নিয়ে ব্লগে গড়ে প্রতিদিন ১টা করে পোষ্ট আসে; প্রতিটি পোষ্ট বার্মা জাতির বিপক্ষে নালিশ। যেই ১১/১২ লাখ রোহিংগা বাংলাদেশে আছে, তারা প্রত্যেকে, প্রতিদিন মগের মুল্লুকের বিপক্ষে নালিশ করছে; আমরা এই নালিশের পক্ষে, নাকি বিপক্ষে? যাক, আমরা যেই পক্ষে থাকি না কেন, মগের মুল্লুকের লোকেরা বলছে, "রোহিংগাদের অভিযোগ মিথ্যা"!
রোহিংগারা যখন পালাচ্ছিলো, আমরা বার্মার গণতন্ত্রের মানসকন্যা সু চী'কে গালি দিচ্ছিলাম, কেন উনি কিছু করছেন না? বার্মার সরকার ফেলে, আমরা কেন সু চী'কে গালি দিচ্ছিলাম? কারণ, আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, মগের মুল্লুকে রোহিংগারা এই ভয়ংকর অন্যায়ের বিপক্ষে একমাত্র সু চী'র কাছে নালিশ করতে পারে, এবং সু চী'র কিছু একটা করা উচিত। যাক, সু চী'র কাছে নালিশ করা হয়নি, বা নালিশ করলেও উহাতে কাজ হয়নি!
বাংলাদেশ হওয়ার সময়, যারা বৃহত্তর পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো, তাদের কাছে ১৯৭১ সালে হিন্দুদের ভুমিকা কি ধরণের ছিলো? বাংলাদেশ হওয়ার পর, বাংলাদেশ বিরোধীরা ক্ষমতায় ছিলো কিনা? থাকলে, তারা হিন্দুদের কোন চোখে দেখেছে? কোন চোখে দেখেছে, সেটার কিছুটা দৃশ্য আপনারা ২০০১ সালের ভোটের পর দেখেছেন। ২০০১ সালের দল, ও সেসব মানুষ এখনো আছে কিনা? হিন্দুরা ওদেরকে আজও ভয় পায়; কিন্তু নালিশের যায়গা নেই।
একটা ভালো দিক হচ্ছে, ওবায়দুল কাদের প্রিয়া সাহার বিপক্ষে চলে যাওয়ায়, মির্জা ফখরুল ও জামাত অবশ্যই প্রিয়া সাহার পক্ষে চলে গেছে; মির্জা ফখরুল মুখ খুললে, সাহার জন্য ভালোবাসার নহর বইবে; জামাত হয়তো ফুল কিনে এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে!
ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে থেকে অন্য ধর্মীরা চলে গেছে, মুসলমানেরাও চলে যাচ্ছে! এই নিয়ে নালিশ করার মতো যায়গা নেই। ঢাকা শহরে ও চট্টগ্রাম শহরে হাজার হাজার মানুষের জমি জোর করে, কম দামে কিনে নিয়েছে বসুন্ধরা, আফতাব গ্রুপ ও হাজার হাজার ভুমি দস্যুরা, এদের বিপক্ষে নালিশ করা সম্ভব হয় নাই! দেশের নাগরিক যদি আক্রান্ত হয়, নালিশ করার মতো একটা যায়গা থাকার দরকার। ঢাকা, চট্টগ্রামে জমি হারানোর পর, যারা কোর্টে গেছে, তারা হয় পরাজিত হয়েছে, কিংবা আগামী ২০/৩০ বছর পর, কোর্টের রায় পাবে; এগুলোকে নালিশ বলা মুশকিল!
ভয়ে দেশ ছাড়ার আগে হিন্দুদের জন্য নালিশের একটা যায়গা থাকার দরকার ছিল; রোহিংগাদের জন্য একটা যায়গা থাকার দরকার ছিলো। আপনারা দেশ প্রেমের পরীক্ষায় উত্তর লেখার আগে, প্রশ্নপত্রটা পড়ে দেখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৬:০৪