করোনার ফলে নিউইয়র্ক শহরে খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে; আশপাশের বেশীর ভাগ ছোট প্রোসারী বন্ধ হয়ে গেছে, সাপ্লাই নেই; কিংবা কর্মচারীর করোনা ধরা পড়েছিলো, হয়তো; পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে! বাংগালীদের অনেক গ্রোসারী পুলিশের নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি দীর্ঘ সময় নিউইয়র্কের গ্রামে কাজ করেছি; গ্রামগুলোতে ছোট গ্রোসারী নেই, আছে বড় সুপার মার্কেট ও ফারমার মার্কেট, এবং বেশ দুরে দুরে। আমি নিউইয়র্ক শহরে চাকুরী নিয়ে আসার পর, বাংগালী এলাকায় উঠেছি, যেখানে আমার এলাকার লোকজন আছেন, সেটা আড্ডার জন্য। বাংগালী দোকানে আমাকে খুব একটা যেতে হতো না, কাছেই গায়েনীজদের একটা পরিচিত দোকান ছিলো, সেটা এখন নেই। আমাদের পাশেই তুর্কীদের একটা বড় দোকান আছে; কিন্তু দোকানটার ভেতরে চীনাদের দোকানের মতো গিন্জী, এত বেশী জিনিষপত্র; উহা এখনো খোলা আছে, গিন্জী দেখে আমি ভেতরে যেতে চাই না। একটা সুপার মার্কেট আছে মাইল খানেক দুরে; করোনার মাঝে ওখানে রাত ২টায় একবার বাজার করেছি, তখনও প্রচুর লোকজন, ভেতরে প্রায় শ'খানেক মানুষ ছিলো।
সাপ্লাই না থাকাতে খাবারের কিছু কিছু আইটেমের দাম অনেক অনেক বেড়ে গেছে, শাক-সবজী ও ফলমুলের দাম আকাশচুম্বী; এই দেশের অনেক সিনিয়র সিটিজেনের আয় একেবারেই সীমিত, এরা কি করে যে চলছে কে জানে। নিউইয়র্কে অনেক অবৈধ ও সরকারী ন্যুনতম সাহায্য-পাওয়া বয়স্ক রিফিউজী (পুর্ব ইউরোপ থেকে) আছেন; এরা কিভাবে চলছেন, কে জানে। ভালো সময়েও এরা চলতে পারতো না। অনেক মানুষ নিউইয়র্ক ছেড়ে চলে গেছে।
কয়েক বছর আগের কথা, এক সুপার মার্কেটে বাজার করার সময় দেখি, ২ জন বয়স্ক মহিলা তাদের ভ্যানিটি ব্যাগে ক্যানড-ফিশ ঢুকাচ্ছে চুরি করে নিয়ে যেতে; আমি কৌশলে কাছে গিয়ে ইংরেজীতে বললাম যে, তোমাদেরকে ক্যামেরার মাধ্যমে সিকিউরিটি দেখছে, এগুলো রেখে তাড়াতাড়ি দোকান ত্যাগ কর। কথা শেষ হওয়ার আগেই মাঝারি বয়সের একজন আফ্রিকান আমেরিকান সিকিউরিটি এসে উপস্হিত; সে বললো,
-তোমারা যে যেখানে আছ, সেভাবে থাক, নড়বে না।
সে ওয়ারলেসে আরেকজনকে এখানে আসতে বলে, আমাকে বললো,
-এই মহিলা ২টি তোমার লোক, এদের চেন?
-না, আমার লোক নন।
-তা'হলে তুমি যাও।
আমি বললাম,
-এরা দরিদ্র মানুষ, খাবারগুলো রেখে এদেরকে চলে যেতে দাও।
-তোমাকেও পুলিশে দেবো, দাঁড়াও; এদের সাথে তুমিও জেলে যাবে।
-শোন, এরা দরিদ্র হলেও সাদা; এরা জেলে যাবার আগে, তোমার জেলে যাবার সম্ভাবনা ২০০ ভাগ।
এই সময়, আরকজন সিকিউরিটি এলো সে সাদা; সে যথাম্ভব সবকিছু দেখেছে ক্যামেরায়; প্রথম সিকিউরিটি মহিলাদের ব্যাগগুলো নিয়ে নিলো। পুলিশ কল করে কথা বলার শুরু করলো; আমি সাদা সিকিউরিটিটাকে বললাম,
-এরা গরীব মানুষ, পারলে পুলিশে দিওনা, আমি যাচ্ছি।
কালো মিয়া সাদাটাকে বললো,
-ওকে যেতে দিওনা, পুলিশ আসছে।
কালো মিয়াকে লক্ষ্য করে বললাম,
-আমার আগে তোমার যাবার সময় এসে যাবে; দেখ প্যারোল মেরোল ভংগ করে বসে আছ কিনা! পুলিশ এলে, তোমার আইডি দেখবে।
ভাবছি, এই ধরণের দরিদ্রদের কি হচ্ছে! তারপরও এটা নিউইয়র্ক শহর, খাবার না থাকলে বলার মতো যায়গা আছে, টেলিফোনে বলা যায়; টেলিফোনে জানালে মাঝ রাতেও এসে খাবার দিয়ে যাবে; কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কাকে জানাবে, আফ্রিকার মানুষ কাকে জানাবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭