somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশাকরি, মেয়েটা সুখী হয়েছে

২১ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০১ সালে ব্রাজিলের একটি মেয়ের সাথে হঠাৎ করেই পরিচয় হয়েছিলো; গরীব ঘরের মেয়ে, পড়ালেখা করে একদিন সুখী হওয়ার আশা পোষণ করতো; আশাকরি, মেয়েটা সুখী হয়েছে।

তখন আমি নিউইয়র্ক শহর থেকে অদুরে, এক গ্রামে কাজ করতাম; এক শনিবারে ব্যক্তিগত কাজে শহরে এসেছিলাম; শহর থেকে ফেরার আগে, একজন পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাকে দেখতে গেলাম ব্রুকলীনে; বেলা ডুবে আসছে; মাঝারি ধরণের এপার্টমেন্ট বাড়ী, প্রথমবার এলাম, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে দেখি, বাদামী রং'এর ১৫/১৬ বছরের একটি মেয়ে সিঁড়ির মাঝখানে বসে, বিষন্নভাবে পটেটো-চিপস চিবাচ্ছে; আমি পাশ দিয়ে উপরে উঠতে গিয়ে বললাম,
-হ্যালো, তুমি কি খাচ্ছ?
মেয়েটা কোন উত্তর না দিয়ে, খোলা প্যাকেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলো; আমি ২/৩টা চিপস নিয়ে বললাম,
-এই অসময়ে চিপস কেন? ডিনারের সময় হয়ে আসছে! তুমি ক্ষুধার্ত?
-এটাই মনে হয়, আমার ডিনার! ডিনার নিয়ে আমি ক্লান্ত, আমাকেই রান্না করতে হবে।
-তুমি রান্না করতে পছন্দ কর না?
-পচন্দ করি; তবে, একই খাবার প্র‌তিদিন খেতেও ভালো লাগে না, রান্না করতেও ভালো লাগে না।
-তুমি কি খেতে পছন্দ কর?
-ম্যাকডোনাল্ড, বিগ-ম্যাক!
-আমি আসার সময়, পাশের রাস্তায়, কাছেই তো একটা ম্যাকডোনাল্ড দেখলাম, গেলেই পার!
-তা ঠিক, গেলেই হয়! সমস্যা হলো, আমার কাছে কোন সময় পয়সা ছিলো না!
-তাই? আমি কিনে দেবো?
-সত্যই? তোমার কাছে টাকা আছে?
-অবশ্যই আছে!
-আমার জন্য তুমি কিনতে চাও?
-চল, আমি কিনবো!
-তোমার সাথে কিভাবে যাবো, তোমাকে তো জানি না।
-ঠিক আছে, আমি নিয়ে আসছি, তুমি এখানে অপেক্ষা কর।
-আমাকে যদি এখানে না পাও, এপার্মেন্টে ১-সি'তে এসো।

আমি মুল দরজা থেকে বের হওয়ার পর দেখি, সে দৌড়ায়ে আসছে; বললো,
-চল, তোমার সাথে যাবো, ওখানে বসে খাবো, মানুষের সাথে খেতে আমার ভালো লাগে।

সে যা যা পছন্দ করে সবই অর্ডার দিতে বললাম। খেতে খেতে সে জানালো যে, সে ব্রাজিলের সান পাউলোর মেয়ে, ১০ম শ্রেণীতে পড়ে, নাম আনতোনিয়া; এই প্রথম আমেরিকা এসেছে নানীর সেবা করতে; আরো ২ মাস এখানে থাকবে, স্কুল খোলার আগে চলে যাবে। নানী বেশ বয়স্ক, এখানে একা থাকে, স্বামী নেই, বেশীরভাগ সময় অসুস্হ থাকে; আনতোনিয়ার মা আসে ব্রাজিল থেকে বছরে ২/১ বার; এবার সে ভিসা পেয়েছে। অসুস্হতার কারণে নানী তেমন রান্নাবান্না করতে পারে না, আনতোনিয়া রান্না করে। দেশে মা রান্না করে।

আমি বললাম,
-তোমার নানী যদি ম্যাকডোনাল্ডের খাবার খায়, তুমি নাও, আজ রাতে তোমাকে রান্না করতে হবে না, হয়তো!
-সে ম্যাকডোলান্ডের খাবার আমার থেকেও বেশী পছন্দ করে; কিন্তু আমি তোমার এত পয়সা খরচ করাতে চাই না।
-অসুবিধা নেই, আজকে তোমার সামান্য রেষ্ট হবে।

সে গাড়ীতে একটু ঘুরতে চাইলো, সমুদ্র দেখতে চায়; সমুদ্র সেখান থেকে ১০ মিনিটের পথ; সে পানির খুব কাছ দিয়ে অনেকটুকু হাঁটলো; আমি বললাম,
-পানিতে নেমে দেখ।
-আমি সাঁতার জানি না, সন্ধ্যায় পানিতে হাংগর আসতে পারে; অন্য সময়, একদিন নামবো।

তাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিলাম; মুক্তিযোদ্ধাকে দেখা সম্ভব হলো না, অন্যদিন আসবো। আনতোনিয়া বললো,
-তুমি সময় পেলে একদিন বিকেলের দিকে আসিও, আমি দিনের বেলায় আরেকটু সমুদ্র দেখতে যাবো তোমার সাথে।
-ঠিক আছে, আমি কালকে দুপুরে আসবো, সেই সময় নানী তোমাকে বাইরে যেতে দিবে?
-নানী আমাকে সব সময় বাইরে যেতে বলে, আমি যাই না; আমি আমেরিকান ছেলেমেয়েদের ভয় পাই; ওরা কেমন অন্য ধরণের। আমি ঠিক মতো পড়ালেখা করে, চাকুরী করে, আমার মাকে সাহায্য করতে চাই, আমরা আজীবন গরীব।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৮
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×