বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোতে গড়ে ৬ মাস বা তার বেশী কাজ করার পর, কোন রেগুলার কর্মচারীর কাজ চলে গেলে, সেই কর্মচারী নতুন করে চাকুরী পাওয়া অবধি, কিংবা গড়ে ৬ মাস অবধি বেকার ভাতা পেয়ে থাকেন। বেকার ভাতার পরিমাণ চাকুরীর মুল বেতনের অনুপাতে পেয়ে থাকে; আবার উহাতে সর্ননিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমান থাকে; আমেরিকায় সর্বোচ্চ ৬০০ ডলার। বিশ্বের মাঝে সবচেয়ে বেশী সময় ও পরিমাণে বেশী বেকার ভাতা দিয়ে থাকে ফ্রান্স, এবং সবচেয়ে কম পরিমাণে ও কম সময়ের জন্য দেয় আমেরিকা।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশী মানুষ কাজ করেন চীনে ও ভারতে; চীনে বেকার ভাতা আছে, ভারতে নেই; অবশ্য, বর্তমান পরিস্হিতিতে চীনে কাউকে বেকার ভাতা দেয়ার দরকার হয় না; কারণ, সাধারণত মানুষের চাকুরী হারানোর সম্ভাবনা কম; ভারতে, করোনার কারণে কমপক্ষে ৭/৮ কোটী মানুষের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, এদের কারো বেকার ভাতা নেই; যেই দেশের মানুষ বেকার ভাতা পায় না, তাদের জীবনযাত্রার মান নীচু; ভারতের মানুষের জীবন যাত্রার মান চীনের থেকে অনেক নীচু, কিন্তু তাদের দক্ষতা চীনের মানুষের বেশ কাছাকাছি।
বাংলাদেশে বেকার ভাতা নেই; ফলে, ধরে নিতে পারেন যে, এই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নীচু, এইচডিআই বেশ নীচে। বাংলাদেশ সরকার, সরকারীভাবে দেশের বেকারত্বের হারও প্রকাশ করে না; আসলে তাদের কাছে এই ব্যাপারে সঠিক ডাটাও নেই। দেশে বেকার ভাতা চালু না হওয়ার কারণ হচ্ছে, সরকারে ও প্রশাসনে ফাইন্যান্স ভালোভাবে বুঝে, সেই রকম লোকজন নেই।
আমেরিকায় বেকার ভাতাকে "আন-এমপ্লয়মেন্ট ইন্স্যুরেন্স" বলা হয়; আসলে, ইহা ঠিকই এক ধরণের ইন্স্যুরেন্স; সরকার ব্যবস্হা করেছে যে, চাকুরীরত মানুষ তার বেতন থেকে সামান্য পরিমাণ টাকা ইন্স্যুরেন্স একাউন্টে প্রিমিআম হিসেবে দিবে, মালিক পক্ষও উহাতে সামান্য পরিমাণ দিতে পারে; এই ইন্স্যুরেন্স সরকারের পক্ষ থেকে গ্যারান্টি দিয়ে ম্যানেজ করা হয়; অর্থাৎ, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর যাই হোক না কেন, চাকুরী চলে গেলে "বেকার ভাতা"র গ্যারান্টি আছে, সরকারই উহা দিয়ে থাকে; কঠিন কিছু নয়।
বেকার ভাতা পাওয়া একটা চাকুরের নাগরিক অধিকার; ইহা একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ও ফাইন্যানসিয়াল পদক্ষেপ; সভ্যতার উন্নতির সাথে মানুষ এই দরকারী নিয়মগুলো আবিস্কার করেছেন, চালু রেখে মানুষের কষ্টের সময় সাহায্য করছেন; এগুলো কঠিন কোন কাজ নয়!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৮