৩য় বিশ্বে বেকারত্বের একটা বড় কারণ হলো "ক্যাপিটেলের অভাব"; তৃতীয় বিশ্বের দেশসমুহে শিল্পয়ানের শুরুতে সরকারী ক্যাপিটেলের দরকার হয়; সরকার ও প্রশাসন যদি ক্যাপিটেলটাকে চোর-ডাকাতদের হাতে তুলে দেয়, তখন দেশে চরম বেকারত্বের সৃষ্টি হয়। প্রথমত, বাংলাদেশের শুরুতে, দেশের মাথাপিছু আয় হিসেবে, ক্যাপিটেলের খুব একটা অভাব ছিলো না; তদুপরি, বাংলাদেশ এমন সময় জন্ম নিয়েছে, যখন বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ থেকে খুবই কম সুদের হারে অগাধ পরিমাণ ঋণ পাওয়া যেতো ; তারপরেও এই অবস্হা কেন? কারণ, প্রশাসন ও সরকারের মদদে "ক্যাপিটেল ডাকাতী"।
ক্যাপিটেল ডাকাতীর দিকগুলো হচ্ছে: ঋণখেলাপী, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ক্যাপিটেল লুকিয়ে রাখা, দরকারের বেশী ক্যাপিটেল যোগাড় করে ক্যাপিটেল সমস্যার সৃষ্টি করা, ভুয়া কোলেটারেল দিয়ে ঋণ নেয়া, আইপিও'র ক্যাপিটেল একই ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করা, লাভ হিসেবে সরায়ে ফেলা। বাংলাদেশে শুরু থেকেই এগুলো চলে আসছে, এখন ইহা চরম আকারে বিরাজ করছে।
বাংলাদেশের শুরুতে প্রাইভেট ক্যাপিটেল ছিলো ৩/৪টি পরিবারের হাতে: (১) এ,কে খান, (২) রনদা সাহা (৩) কনষ্ট্রাকশন কন্ট্রাক্টর জহিরুল ইসলাম (৩) শক্তি ঔষধালযয়ের নতুন বাবুদের। নতুন বাবুকে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা করার পর, উনার পরিবার ব্যবসা বাণিজ্য গুটিয়ে নেয়; রনদাসাহার পরিবারও ব্যবসা না বাড়িয়ে, ক্যাপিটেলকে জন-হৈতষী কার্যকলাপে বিনিয়োগ করেন।
বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের অনেকগুলো আধা সরকারী ও প্রাইভেট শিল্পকারখানা, ব্যাংক ও রিয়েলষ্টেটের মালিকানা পান; শুরু জন্য এগুলো ভালো নিয়ামক হতে পারতো। এ'ছাড়া শেখ সাহেব শিল্প উন্নয়নে ঋণ দেয়ার জন্য একটা শিল্প ব্যাংক স্হাপন করেন। শেখের মৃত্যুর পর, এগুলো মোটামুটি চোর-ডাকাতদের হাতে চলে গেছে। শিল্প ব্যাংক, সোনালী, রূপালী, অগ্রনী ব্যাংকগুলো চোর-ডাকাতদের ক্লাব; রাষ্ট্রয়াত্ত শিল্প-কারখানাগুলোতে ঐতিহাসিক ডাকাতী চালানো হয়েছিলো।
ব্যবসা বাণিজ্যকে সম্প্রসারণ ও সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের জন্য আধুনিক ক্যাপিটেলিষ্ট অর্থনীতি ষ্টক-মার্কেটের জন্ম দিয়েছে; বাংলাদেশে ইহাও চোর-ডাকাত-লুটেরাদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে; প্রশাসন ও অর্থমন্ত্রীগুলো খুবই বেসিক নিয়ম-কানুনগুলো চালু রাখতে পারেনি এই শক্তিশালী ক্যাপিটেন যোগানোর মেশিনের। অর্থমন্ত্রী মাল মুহিত ষ্টক-মার্কেট না বুঝতে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ৩৫ বিলিয়ন টাকা হারায়েছে; যারা ডাকাতী করেছে, তারা এখন বাংলাদেশের বড় বড় শিল্পপতি।
ক্যাপিটেল ডাকাতীর আরকটা বড় অস্ত্র হচ্ছে, চাইনীজ রেষ্টুরেন্টের মতো প্রাইভেট ব্যাংক খুলতে দেয়া; এরা জামানতকারীদের টাকা ডাকাতী করে, উহা সরকারের ঘাঁড়ে চাপিয়ে দেয়। সরকারের লোকদের পরিবারের লোকেরা ও দলের লোকেরা এই কাজ করেছে।
আরেকটি ডাকাতীর কারখানা হলো প্রাইভেট বিনিয়োগ; প্রশাসন ও সরকারের মদদ নিয়ে এসব লোকেরা "পনজিস্কীমের" সাহায্যে কয়েক'শ বিলিয়ন ডাকাতী করেছে; এদের মাঝে যুবক, ডেসটিনি ও মাঝারি ধণরণের কয়েক'শ ডাকাতী গ্রুপ আছে; হালে, ইভ্যালি, মিভ্যালী এই দলে যোগ হচ্ছে। এ'ছাড়া ধর্মীয় প্রতারকেরাও এটা সেটা করে কয়েক বিলিয়ন হাওয়া করে দিয়েছে; সম্প্রতি এই গ্রুপে নাম লেখায়েছে এহসান, নাকি ইনসান গ্রুপ।
বাংলাদেশে বেকারত্বের বড় একটি কারণ কারণ হচ্ছে, এসব ক্যাপিটেল ডাকাতী।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৯