সখী তোমারে মনের কথা বলি কেমনে? ভালোবাসি তোমায়, তুমি জানো না বোঝ না। মনের ভেতর তোমাকে নিয়ে হাজারো শব্দ, ধ্বনি, প্রতিধ্বনি। কিন' সেগুলো বলতে পারি না। কেমনে তোমারে জানাই আমার মনের কথা। প্রেমে পড়ে অনেক প্রেমিকেরই এমন দফারফা অবসস্থা হয়। ব্যাপারটা এমন- ‘গুরু উপায় বলো না?’ উপায় আছে একটাই মনের কথা মনের মানুষকে লিখে জানিয়ে দেওয়া। মাধ্যম একটাই চিঠি। একালের টেলিফোন, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট আসার আগ পর্যনত্ম চিঠিই ছিল মনের কথা জানানোর সবচেয়ে সুবিধাজনক মাধ্যম। মনের মানুষকে যে কথা মুখে বলা যায় না সে কথা অনায়াসেই চিঠিতে লিখে জানিয়ে দেওয়া যায়। মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ছোট ছোট স্বপ্ন, আশা, অভিমান চিঠির গোট গোট শব্দ হয়ে সহজেই ঢুকে যায় প্রেমিক-প্রেমিকার মনের গভীরে।
চিঠি হয়েছে মনের ভাষা জানানোর আদি এবং ঐতিহ্যময় মাধ্যম। প্রাচীনকালে প্রেমিক-প্রেমিকাদের এই চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যম ছিল পায়রা। প্রাচীন অনেক প্রেমগাঁথায় আমরা চিঠির আদান-প্রদানে পায়রার কথা জানি। জানি রানার আর ডাকপিয়নের কথা। মরম্নপথের বুকে উটের পিঠে চড়ে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে একটি চিঠি, একটি সংবাদ পৌঁছানোর কথাও আমরা জানি। পত্রমিতালি করে বন্ধু হওয়ার কথাও কারো ভুলে যাওয়ার নয়। প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভালোবাসার চিঠি আদান-প্রদানের নানা রস গল্প আছে। বেশিরভাগ সময় প্রেমিকরা প্রেমিকাদের ভালোবাসার প্রসত্মাব দিতে ভীত থাকে। মাধ্যম তখন চিঠি। প্রেমিকার বান্ধবী, ছোট ভাই, বোন বা প্রেমিকের বন্ধু মাধ্যমে প্রেমিকা হাতে চিঠি পৌঁছে। প্রেমিকার সায় মিললে এরপর একই প্রক্রিয়ায় চলে চিঠির আদান-প্রদান। আবার মাঝে মাঝে গোপন স'ানে প্রেমিক-প্রেমিকা নিজেরাই চিঠির আদান-প্রদান করে। এই বাড়ির ছেলে পাশের বাড়ির মেয়েটি তার প্রেমিকার ঘরে এসে চুপিসারে বইয়ের ভেতর একটা চিঠি বা গোলাপ গুঁজে দিয়ে গেছে এমন কাহিনীও হরহামেশাই শোনা যেত। বাড়ির জায়গির মাস্টার তরুণী ছাত্রীর প্রেমে পড়ে শেষ পর্যন্ত হাতে তুলে দিয়েছেন একটি নীল খাম। চিঠির মাধ্যমে মনের কথা প্রকাশের এমনি গল্প অনেকের অভিজ্ঞতার ঝোলায় জমা পড়ে আছে। প্রেমে সফল হয়েছেন বা হননি কিনা' প্রেমের চিঠি লেখেননি এমন মানুষ খুঁজে মেলা ভার। সেই চিঠি নিয়ে কত গান কত কবিতা। ‘চিঠি দিও প্রতিদিন চিঠি দিও’, ‘ডাকপিয়নের হাজারো চিঠির ভিড়ে তোমার চিঠি আসবে কি গো আমার কাছে ফিরে’, ‘আজ তোমার চিঠি যদি নাই আসে হায়, আমি ভেবে নেব আজ আশার মরণ হয়েছে’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ’ বা ‘শেষ কথা কেন এমন কথা হয়, শেষ চিঠি কেন এমন চিঠি হয়’। শিল্পী রম্ননা লায়লা গেয়েছিলেন ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম’। এ গানের কথার কিছুটা এখন অন্যভাবে আসলেই সত্যি। টেলিফোন, পিয়ন, টেলিগ্রাম, পোস্ট অফিস সব থাকলেও তাদের গুরম্নত্ব প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে এখন নেই বললেই চলে। ডিজিটাল ভালোবাসার যুগে চলে এসেছি আমরা। মনের কথা এখন আর চিঠিতে নয় লেখা হয় মোবাইল ফোনের মেসেজে। ইন্টারনেট, ই-মেইল, মোবাইল ফোন প্রেমিক-প্রেমিকাদের মনের কথাগুলোকে খুব সহজেই পৌঁছে দিয়েছে একজন থেকে আরেকজনের কাছে। রাত জেগে মোবাইলে প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে গল্প করা যায় খুব সামান্য খরচে। আর কম্পিউটার বা মোবাইলে যদি ইন্টারনেট সংযোগ থাকে তাহলে তো পোয়াবারো। চটপট চ্যাটিং বা ই-মেইলে মনের কথাগুলো জানিয়ে দেওয়া যায়, মনের মানুষ সে পৃথিবীর যে প্রানেত্মই থাকুক না কেন। ই-মেইল বা চ্যাটিংয়ের পাশাপাশি সবাই এখন ফেসবুক জ্বরে ভুগছে। বিশ্বব্যাপী সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি প্রেমিক-প্রেমিকাদের সহজ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় কথা আদান-প্রদান মাধ্যম এখন ফেসবুক। খুব সহজেই মনের ভাষা প্রকাশ, একজনের সম্পর্কে জানার এর চেয়ে সহজ মাধ্যম এখন আর নেই। তবে আধুনিক সময়ে এসে মনের ভাষাগুলো কেমন যেন রোবটিক হয়ে গেছে। চিঠির ভাষায় একধরনের কাব্যময়তা ছিল। সেই কাব্যময়তা এখন আর নেই। মেসেজ অপশনে গিয়ে এখন কোনো প্রেমিক বোধহয় হয় খুব কাব্যময় কিছু লেখে না। সবকিছুই কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। প্রেমের কথার আদান প্রদানে রসবোধ এ প্রজন্মের কাজ করে খুব কমই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




