ছোটকাল থেকেই সমাজ শিক্ষা বইতে পড়ে আসছি, ‘মানুষের মৌলিক চাহিদা ৫ টি। যথাঃ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা।’ এগুলো নাকি আবার সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত নাগরিক অধিকার। সত্য কথা বলতে কি, এগুলো যে আসলে অধিকার নাকি আদর্শ বস্তু, তা আমার মাথায় আজও ঢুকেনি। ছাত্রজীবনের শুরু হতে আজ পর্যন্ত যা জেনেছি তা হলো, ‘আদর্শ এমন এক শব্দ যা কিনা কখনোই নেচার বা প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, তবে আদর্শের কাছাকাছি কিছু বস্তু মাঝে মাঝে পাওয়া যায়।’ প্রশ্ন উঠতে পারে, আমি কেনো এই অধিকারগুলোকে আদর্শ বস্তু বললাম? তাহলে কি রাষ্ট্র আমার অধিকার হরণ করেছে?
না, তা সরাসরি করেনি।
কিন্তু যখন যে দলই সরকারে থেকেছে, সে বলেছে হরতাল খুব খারাপ, দেশের জন্যে ভয়ানক ক্ষতিকর। আবার যে দল বিরোধীপক্ষে থেকেছে, সে বলেছে হরতাল তার গনতান্ত্রিক অধিকার। আর তাদের এই বক্তব্যই আমার অধিকার হরণ করেছে।
আবারো প্রশ্ন উঠবে, “কিভাবে?”
- যখন আমি একজন প্রকৌশলী, আমার অনুপস্থিতি একটি বড় দূর্ঘটনার কারন। আপনি হরতাল দিয়ে এই দূর্ঘটনাকে তরান্বিত করছেন। এই দূর্ঘটনা হয়তো কারো প্রনঘাতী হয়েছে, কারো অঙ্গহানী ঘটিয়েছে। যারা দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে, তারা হারিয়েছে সকল মৌলিক চাহিদা আদায় করে নেয়ার ক্ষমতা।
- যখন আমি একজন চিকিৎসক, আমার সামান্য দেরী কয়েকজন মানুষের মৃত্যুর কারন। আপনি হরতাল দিয়ে এই মানুষগুলোকে খুন করছেন। কিন্তু আমি আপনার বিচার চাইতে পারছি না।
- যখন আমি একজন দায়িত্ববান সন্তান, আমার একদিনের আয় কমে যাওয়া মানে আমার গরীব বাবার কষ্ট দীর্ঘায়িত হওয়া। আপনি হরতাল দিয়ে আমার বাবা-মা এর সকল মৌলিক অধিকার হরণ করছেন।
- যখন আমি একজন শ্রমিক, আমার আর্থিক অবস্থা ‘দিন আনে দিন খায়', অথচ আপনি হরতাল দিয়ে আমাকে পরিবার -পরিজন সহ না খেয়ে থাকতে বাধ্য করছেন। যখন আমি খাদ্য আমার মৌলিক অধিকার মনে করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছি, আপনি/আপনারা আমাকে দলবদ্ধভাবে প্রহার করছেন, পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করছেন। আর যখন আপনার চেষ্টার সাফল্যের কারনে আমি মারা গেছি, আমার লাশ নিয়ে রাজনীতি করছেন।
- যখন আমি একজন রিক্সা বা ভ্যান চালক, নিরুপায় হয়ে হরতালের দিনেও নিজের অবলম্বন সাথে করে বেরিয়ে পড়েছি। আপনি আপনার গনতান্ত্রিক অধিকারের বলে আমার একমাত্র সম্বল ভেঙ্গে দিয়েছেন। তার ফলস্বরূপ আমি হারিয়েছি আমার সকল মৌলিক অধিকার আদায়ের উপায়। আমার সন্তানের মৌলিক অধিকার আজ হুমকির মুখে। বোঝা যায়, তাকেও থাকতে হবে আমার মত অশিক্ষিত। এবং বারবার শিকার হতে হবে আপনাদের তথাকথিত গনতান্ত্রিক অধিকারের।
- সবশেষে, আমি একজন সাধারণ নাগরিক। হরতাল যদি আপনার গনতান্ত্রিক অধিকার হয়, সেই হরতালে সমর্থন দেয়া না দেয়া আমার গনতান্ত্রিক অধিকার। আপনি কে আমাকে বাধ্য করার? যদি মনে করেন আপনি সঠিক, তাহলে শুনে রাখুন, আপনি আমার মৌলিক অধিকার হরণ করে সংবিধান লঙ্ঘণ করছেন।
এ কেমন গনতন্ত্র? এ কেমন গনতান্ত্রিক অধিকার? আপনি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সদস্য বলে আপনার অধিকার অবৈধ হলেও সঠিক? আর আমি আমজনতার কাতারে থাকায় আমার বৈধ অধিকার মূল্যহীন?
এই লেখাতে অনুগ্রহ করে কেউ কোন দলের প্রতি সমর্থন না তিরস্কার খুঁজতে যাবেন না। কারন, চেয়ারে বসা মানুষগুলো বদলায় বটে, কিন্তু তাদের কৃত কর্ম বদলায় না।
আরেকটি কথা না বললেই নয়, 'জনতার কথা কেউ ভাবে না। না সরকার না বিরোধীদল' এই কথা গুলো আর নতুন করে বলার দরকার নেই। যুগে যুগে এটাই সত্য যে জনতার অধিকার জনতাকেই আদায় করে নিতে হয়।