somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন, সাথে মানব মনের পরিবর্তন

১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস এ বসে রসিকতা করার সময় আমার বন্ধু এই বিষয়ে লেখার কথা বলেছিলো।প্রযুক্তির ব্যাবহার মানুষের চিন্তা ভাবনা কে কিভাবে পরিবর্তন করেছে তাই লেখার চেষ্টা করছি।

প্রথমে মিউজিক থেকে শুরু করিঃ গান আমরা সবাই শুনি, যদিও সবার পছন্দ এক নয়।প্রথম যে রেকর্ডিং মেশিন ছিলো তার স্পীড ছিলো মাত্র ৭৮ rpm. যা সবমিলে ধারন করতে পারত ৪ মিনিট ২১ সেকেণ্ড।অপেরা রেকর্ডিং এ শিল্পি কে সকল মেশিন থেকে দূরে থাকতে হতো, কারন, ডিস্ক রিভলভিং এর শব্দ ও রেকর্ডিং এ চলে আসতো।ক্লাসিকাল মিউজিক এর অ্যালবাম বের হতো ৮ টা ডিস্ক এ।তার উপর ছিলো সারফেস নয়েজ, আমাদের জন্য চিন্তা করাই কঠিন। তখন মানুষের পছন্দ ছিলো সেগুলো যার মধ্যে গলার কাজ বেশি। চার মিনিটে তো এখনকার একটা গানই শেষ হয় না। অর্থাৎ প্রতি গানের শেষে টেপ পরিবর্তন করতে হত। একবার চিন্তা করে দেখি সেই যুগে থাকলে আমাদের ডিজে পার্টি সহ অন্যান্য পার্টিগুলোর কি দশা হত !!!!

এরপর কালের পরিক্রমাতে যখন সিডি আবিষ্কার হলো, মানুষ প্রথম পেলো সারফেস নয়েজ বিহীন গান। বিংশ শতাব্দির শেষ ভাগে যোগ হলো hip hop. মানুষের চিন্তাধারা কতটা পরিবর্ত্অন হয়েছে যে এখন অনেক গান আছে মিউজিক সর্বস্ব। এখন আমরা মডার্ন মিউজিক প্লেয়ার এ কোনো নয়েজ ছাড়া গান উপভোগ করি, যা ৪০ বছর আগে ছিলো কল্পনার ও অতীত। আগেকার মানুষেরা আশপাশের শব্দ বাদ দিয়ে গলার আওয়াজ শুনতে চাইতেন। আর আমরা অনেক সময়ই শুধু বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজই শুনতে চাই।


এবার মুভি'র কথাতে আসা যাক। দ্যা 'বার্ডস' এর কথা মনে আছে? সে ই যে আলফ্রেড হিচককের বিখ্যাত মুভি 'দ্যা বার্ডস' । প্রথমে এই ছবি'র শুটিং এর জন্য যান্ত্রিক পাখি তৈরী করা হয়, যা দেখে আর্ট ডিরেক্টর নিজেই হতাশ হয়ে যান। কারন প্রথমত, সেইসব যান্ত্রিক পাখির আকৃতি মোটেও পাখির মত ছিলো না, ছিলো বাক্সের মত। দ্বিতীয়ত, এদের চলাচলও ছিলো একেবারে যান্ত্রিক।অনেক হিসাআব নিকাশ এর পর তারা কিছু পাখি কে প্রশিক্ষন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, এবং প্রিজম ব্যবহার করে resonance তৈরী করেন।এটা ছিলো সেই সময়ের সর্বোচ্চ বাজেট এর মুভি।
আসল ঘটনা হলো, হিচকক এই ছবিতে আসল পাখি ব্যবহার করতে চাননি। কারন এটা তার কাছে অমানবিক মনে হয়েছিলো।

এখন আর মানুষকে এসব বিষয়ে ভাবতে হয় না।এখন অনেক পথ খোলা আছে। পাখিকে ট্রেনিং দেয়া তো যায়ই, এনিমেটেড পাখির চেহারাও প্রায় বাস্তব পাখির কাছাকাছি করে নেয়া যায়। এনিমেশনের ক্ষমতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা দেখেছি, এনিমেশনের মাধ্যমে টিনটিনের কাল্পনিক চেহারাকেও বাস্তবের অনেক কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়েছে।

যখন প্রথম মুভি দেখানো শুরু হয়, মানুষের কাছে থিয়েটার ই বেশি প্রিয় ছিলো। আজ আমরা থিয়েটার কে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর মুভি'র মধ্যে ও প্রযুক্তি না থাকলে ভালো লাগে না।

এবার আসা যাক মানব কল্যানের বিষয়ে। 'উরুগুয়ে ফ্লাইট ৫৭১' এর কথা আমরা অনেকে ই জানি। ১৯৭২ সালে এই বিমানটি ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে আন্দেজে বিধ্বস্ত হয়েছিলো। ৩ দিন পর যখন উদ্ধার অভিযান পরিত্যাক্ত করা হয়, তখনো অনেক যাত্রী বেচেছিলেন, কিন্তু পৃথিবীর মানুষ তা জানতে পারেনি, কারন চিলিতে তখন গনবিদ্রোহ চলছে। চিলির মানুষ তাদের মুক্তির জন্য সারা পৃথিবী থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলো, তারা মুক্তি পেয়েছিলো, কিন্তু অনেক যাত্রীর প্রান বাচেনি।

এখন আর মানুষের মনোভাব এরকম নেই।বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করাকে স্বর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়, অবরোধ থাকলে তা শিথিল করা হয়, খবর এর মাধ্যমকে সকল অবরোধ এর উপরে রাখা হয় এবং প্রয়োজন এ অন্য প্রানী কে ব্যবহার করা হয়, যেমনটি হয়েছিলো জন এফ কেনেডি জুনিয়র এর লাশ খুজতে।

পরিশেষে একটা মজার তথ্য দিয়ে লেখা শেষ করি। ফ্লাইট ৫৭১ এর একজন যাত্রী (নামটা মনে নেই ) প্রযুক্তির ভুলে ফ্লাইট মিস করেন। তিনি রাতে ঘুমানোর আগে ফোন অপারেটর কে বলে রাখেন, সকালে যেন তাকে ডেকে দেয়া হয়। অপারেটর তা ভুলেই হোক আর প্রযুক্তির ভুলেই হোক, খেলোয়াড়ের ঘুম ভাঙ্গে ২ ঘন্টা দেরীতে। তাকে পরের ফ্লাইট এ চিলি যেতে হয়, এবং সেখানে আটকে পড়েন, বন্ধুদের নিখোজ সংবাদ নিজের দেশে দিতে ব্যর্থ হন। আধুনিক টেলিফোন এ ধরনের ভুল হবার সম্ভাবনা নেই। কারন এখন সবই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত। বিটিসিএলের ল্যান্ড ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখলে একেবারে সময়মত বেঁজে উঠবে ফোন। ফোনের মালিক ঘুম থেকে উঠে ফোন না ধরা পর্যন্ত বাঁজতেই থাকবে।

প্রসঙ্গত, অনেকেই জানেন না বিটিসিএল নাম্বার এ অ্যালার্ম দেয়া যায়, সেই সময় ওরা গ্রাহককে ফোন করে জাগিয়ে দেয়। নিয়ম হলঃ *৫৫*৪ ডিজিট এ কাঙ্খিত সময়#

মনে রাখা বাঞ্চণীয়, সময় কে অবশ্যই চার ডিজিটে ২৪ ঘন্টা আকারে ইনপুট দিতে হবে। যদি সব ঠিক থাকে, যান্ত্রিক কন্ঠ জানিয়ে দেবে, "আপনি যে সেবার জন্যে অনুরোধ করেছেন, তা কার্যকর করা হয়েছে।"


এই বিষয়বস্তুতে আমার লেখা প্রথম ব্লগ পোষ্ট প্রকাশিত হয়েছিলো 'টেকনোলজি টুডে ব্লগ' এ। লেখাটির পরিমার্যিত সংস্করণ আজ প্রকাশ করলাম। তারপরও কোন ভুল থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×