somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উচিত-অনুচিত জ্ঞান এবং ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৬ সালের কথা, এইচ এসসি বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষার আগের দিনের ঘটনা। বাসার গেট খুলে রাস্তায় তাকিয়েই দেখি দুজন মানুষ রাস্তায় পড়ে আছে ২০ থেকে ২৫ হাত দূরত্বে। মাঝখানে বিদ্যুতের তার। সামনের জনের গলা কেটে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। পিছনের জনের কোন নড়াচড়া কিংবা কোন গোঙ্গানী ও শোনা যাচ্ছে না। ঘটনা হলো, দুজন ছিলো এক বাসের ছাদে। কোন এক বাসায় বিদ্যুতের কাজ করার কারনে তারগুলো স্বাভাবিকের থেকে ছিলো নিচে। দুজনের কেউই হয়ত সেটা খেয়াল করেনি, অথবা খেয়াল করলেও কিছু করার ছিলো না। একজন স্পট ডেড, অন্যজনকে হাসপাতালে নেয়ার পরের ঘটনা আমার জানা নেই।

কাহিনী শুরু এরপর। যারা বিদ্যুৎ লাইনে কাজ করছিলো, তারা সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার, অভিযোগঃ দ্বায়িত্বে অবহেলা। বিকালে এদের ই একজন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আক্ষেপ করতে করতে বলছিলো, "আমার বিরাট বাশ হয়ে গেছে রে। পুরো এক সপ্তাহ বহিঃষ্কার"

দুঃখের বিষয়, তার দ্বায়িত্বে অবহেলার কারনে যেই লোকটা মারা গেলো, সেটা নিয়ে তার কোন অনুতাপ নেই। এমন কি সেই লোকটা তার পরিবারের একমাত্র আর্নিং মেম্বার জানানোর পরেও তার কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না।

আমরা জাতিগত ভাবেই একরোখা হতে পচন্ড পছন্দ করি। বিশেষত আমাদের ড্রাইভার সম্প্রদায় এই ব্যপারে সব থেকে এগিয়ে। তাদের কথা শুনলে মাঝে মাঝে মনে হয় আইনের সৃষ্টি হলো এই দুনিয়ার সব থেকে ভুল সিদ্ধান্ত। একদল মানুষের জীবন যে তার চার হাত-পায়ের মাঝে বন্দী সেটা এতোই তুচ্ছ একটা বিষয়, যে সেটা নিয়ে ভাবার চাইতে আমেরিকাতে কোন গ্রাম আছে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা করা বেশি গুরুত্বপূর্ন।

যাইহোক, আমি এখন ড্রাইভারের দোষ ধরতে আসিনি। এই দেশে বুদ্ধিমান এবং দুঃসাহসী মানুষের পরিমান আশংকা জনক হারে বেশী। দুঃসাহস দেখাতে দেখাতে কখন যে সাহস দেখানো উচিত আর কখন ধৈর্য্য ধরা উচিত, সেই জ্ঞান অনেকের ই থাকে না। তাই, সব সময় ড্রাইভারের কিছু করার ও থাকে না।

আমাদের দেশে আরেক শ্রেণীর ভয়ানক মানুষ আছে, যারা কিনা যে কোন ধরনের সমস্যার সমাধান করতে অসম্ভব পটু। যেমন ধরা যাক ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার কথা। হঠাৎ একদিন একজন আবিষ্কার করলেন, এই গাড়ির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের প্রতিকার হচ্ছে। কিভাবে? কারন হলো, এই গাড়ি থেকে ধোয়া বেরোচ্ছে না।
কিন্তু এটা চিন্তা করলেন না, আপনি রিচার্জ করতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, সেই বিদ্যুৎ পরিবেশ দূষণ করেই তৈরী হচ্ছে।
যাক সে কথা। বিদ্যুৎ তো লাগবেই। কিন্তু এই ব্যাটারি যারা ব্যবহার করছেন, ব্যবহার শেষে এই ব্যাটারিকে কোথায় পরিত্যাগ করতে হবে, তা কি তাদের কে শেখানো হয়েছে? এই ব্যাটারিকে যেখানে সেখানে ফেললে এর মধ্যে থাকা জিংক ও সীসা যে মিউনিসিপ্যাল ওয়েস্টের ধোঁয়ার সাথে মিশে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে আপনার আমার শ্বাষ-প্রশ্বাস বন্ধ করে দেবে না তার গ্যারান্টি কি দিতে পারেন? এই দূষন যে এখনকার অবস্থার থেকে অনেক বেশী বাজে অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে তা কি চিন্তা করতে পারছেন?

এরপরে আসছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা। ব্যাটারি সম্মন্ধীয় সকল সমস্যা তো আছেই। তার উপর দ্রুতযানের যেমন ব্রেকিং সিস্টেম থাকা উচিত, তার কিছুই নেই। নেই কোন Rear view সিস্টেম। যার ফলে এক্সিডেন্টের ও কোন কমতি নেই এই রিক্সার। তারপরও সেই মূলার দিকে আমাদের চোখ। পরিবেশ দূষণ কমাচ্ছি আমরা।

বাংলা একটা প্রবাদ আছে না, কেমন জানি, "সামনে এক টাকা আর পিছনে হাজার টাকা"

একটা অনুরোধ, এই 'সকল সমস্যা সমাধানকারী' মানুষগুলো থেকে একটু সাবধান থাকুন। নিজের চোখ-কান খোলা রাখুন। সাময়িক লাভের আশায় আত্মহুতি দেবেন না।

পরিশেষে, আমরা কেউ ই সাধু পুরুষ নই। দ্বায়িত্বে অবহেলা আমরা সবাই করি, কম আর বেশি। কিন্তু আমার অবহেলা যেনো কারো মৃত্যুর কারন না হয়ে দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। কথায় বলে, একজন ডাক্তার কিংবা উকিল একবার ভুল করলে মারা যায় একজন করে মানুষ। আর একজন প্রকৌশলীর এক ভুলে মারা যেতে পারে এক দল মানুষ। সে যাই হোক, সকল মানুষের জীবন ই মূল্যবান। সে একজন হোক আর একদল।

সচেতন হোন, অন্যের জীবনের কথা ভাবতে ইচ্ছা না হলে নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবুন। আপনার একরোখা স্বভাব কিংবা সেচ্ছাচারিতায় দ্বায়িত্বে অবহেলা আপনার নিজের ও জীবন কেড়ে নিতে পারে, সেকথা অন্তত চিন্তা করুন। রেলগাড়ি কোন এক টনী প্রাইভেট কার নয় যে হুইসেল দিয়ে দুই গজের মাঝখানে থেমে যাবে। তাই নিজের জীবন বাঁচাতে নিজে সচেতন হোন। সেই সঙ্গে আসুন দেশের সকল লেভেল ক্রসিঙ্গের নিরাপত্তা জোরদারের দাবী তুলি।

বিগত কয়েকদিনে রেল দুর্ঘটনায় যারা প্রান হারিয়েছেন, তাদের পরকালীন শান্তি কামনা করছি ও তাদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×