somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিতুর কোমল বিড়াল

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সিড়ি ঘরের এককোনে একগাদা মেয়াদ উত্তির্ণ, ব্যবহৃত জিনিসের স্তুপ। এক পা ভাঙ্গা ঘুনে খাওয়া টেবিলটার নিচে একপ্রস্ত পরিত্যক্ত শীতের পোষাক। হিমশীতল আবহাওয়ার মধ্য এ জায়গাটায় মোলায়েম একটা উষ্ণতা বিরাজ করে। পোয়াতি বিড়ালটা আপাতত সুন্দর এই প্রকোষ্টটা বেছে নিয়েছে রাত্রিযাপনের জন্য। আর দিনের বেলায় চলে যায় তিনতলায়, যেখানে মিতুদের পরিবার। আগে অবশ্য সারাদিন ই মিতুর ঘরে ঘুরঘূর করত, রাত হলে মশারির এককোন গুটিয়ে দিয়ে চুপিচুপি লেপের নিচে ঢুকে পড়ত। কিন্তু প্রশবের সময়টা ঘনিয়ে আসার সময়টায় মিতুর পাশে ঘুমানো নিরাপদ নয়, তাই ভেবে চিন্তে সিড়ি ঘরটা বেছে নিয়েছে সে। কিন্ত এখানে স্বস্তি হচ্ছেনা বিড়ালটার। মিতুর পায়ের ঘ্রান ছাড়া ওর ঘুম আসেনা। মোহনীয় একটা উষ্ণতা তাকে অপার্থিব মায়ায় ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

সিড়িঘরে বিড়ালটার একটা বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। আগে সে দিনের বেলায়এখানে ঢু মেরে যেত ইঁদুর, তেলাপেকার খোজে। ইঁদুরগুলি তার উপস্থিতে প্রাণভয়ে ওষ্ঠাগত হত দুরুদুরু বুকে। আজকাল এরা রাতের বেলায় নিবিঘ্নে ছুটাছুটি করছে, বিড়াল তাদের পিছু নিচ্ছে না। মাতৃত্বকালীন সময়টাতে বিড়ালটা বেশ সংলগ্ন হয়ে উঠেছে। কোন শিকারের নেশা বা তৃষ্ণা কাজ করছে না। ব্যাপারটা বোধ হয় ইদুরগুলোও আঁচ করতে পেরেছে, তাই ওরা ইচ্ছামত দৌরাদৌরি করে, দিনের বেলায় লিফটের গোড়ার খোপটিতে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
রাত পোহালে আড়মোড়া ভেঙ্গে তরতরিয়ে তিন তলা সিড়ি ভেঙ্গে সে মিতুর ঘরে চলে যায়। চুপচাপ, পা ছড়িয়ে দিয়ে, জানালা গলে আসা রোদে ঝিম মেরে বসে থাকে।
বিকেল বেলায় ক্লাস শেষ করে মিতু এসে ঘরে ঢুকে, কাপড় ছাড়ানের আগেই বিল্লিটা পা চাটা শুরু করে দেয়। ”আরে বাবা একটু দাড়া, হাত পা ধুযে ফ্রেশ হয়ে নেই”,বলে মিতু। নিজের খাবার শুরু করার আগেই পিরিচে করে দুধ ঢেলে দেয় বিড়ালটার সামনে।মুগ্ধ চোখে তৃষ্ণার্ত প্রাণীটার আহার উপভোগ করে মিতু। নিজের খাওযা শেষ করে লক্ষীটাকে কোলে তুলে নেয়, নিবিড় ভালবাসায় আগলে রাখে পোষা জীবটাকে। এরপর বিড়ালের জন্য বাছাই করা ইনস্ট্রুমেন্টাল প্লেলিস্ট চালু করে। এর ফাকে হাতের টুকটাক কাজগুলে সেড়ে নেয় মিতু। এটা তার নিত্যদিনের রুটিন।

কয়েকদিন পর মিতু খেয়াল করল, আজকাল তার ঘরে বিড়ালটা আসছে না । প্রথম দিন ব্যাপারটা অন্যরকম ঠেকতে পারত কিন্তু সেদিন তার তার বন্ধু কোমল বাসায় এসেছিল, ব্যাপারটা নজর এড়িয়ে গেছে। অসাধারন ব্যাক্তিত্ববান একটা ছেলে, প্রতিপত্তির অভাব নেই, কিন্তু কিন্তু চলেফেরায তা মোটেই প্রকাশ পায়না। শাণিত কথার ফল্গুধারায় যেন মায়ার ঝলসানি। ছেলেটার গাল থেকে চোয়াল লম্বিত একটা একটা কাটা দাগ, নোংরা রাজনীতির স্মারক বয়ে বেরাচ্ছে।অদ্ভুত ছেলেটা হঠাৎ করেই বাসায় এসেছে। বাসায় মিতুর মা শেফালী বেগম, মিতু ছিল মামার সঙ্গে শপিংয়ে। মা ছেলেটিকে যথেষ্ঠ যত্নআত্তি করে, গল্প গুজব করে বিদায় দেয়। কোমল গেট পেড়িযে রাস্তায় পা দিবে এমন সময় মিতুর সাথে দেখা।

-কিরে বাসায় আসবি আমাকে বলিস নি কেন? বাসা চিনলি কি করে? আর খোজ নাই কেন? ফোন কি ফকির কে দান করে দিয়েছিস? ঘড়বড় করে প্রশ্ন করল মিতু।
জবাব না দিয়ে কোমল বলল, তোর বার্থতে গিফ্ট বাসায় দিয়ে এসেছি, ”হেপি বার্থডে” । বলেই পটাপট বাইকে স্টার্ট দিয়ে দিল। মিতু মোটেই অবাক হলনা । ওর কাজকর্ম সবই অবাক করা, অদ্ভুত সব আচরনগুলো এখন স্বাভাবিকই ঠেকে। হমম....আওয়াজ করে, তাকিয়ে থাকল বাইকের শেষ বিন্দু পর্যন্ত।....
একটা উদাস ভঙ্গিতে লিফটে উঠল। আশ্চর্য , ফ্লোর নাম্বার চাপতে গিযে দুই বার ভুল করল- আমার অ্যালজেইমার হয়ে গেল নাকি? বয়স তো সবে বাইশ।
বাসায় পা দিতেই মায়ের অগ্নিমূর্তিঃ ঘর কাঁপানো বকুনি- কী সব আজেবাজে ছেলেদের সাথে মেলামেশা করিস? আজ বার্থডে গিফট নিয়ে আসবে , কার প্রপোজ করে বসবে, ছেলেমানুষ চিনিস না? ধাড়ি মেয়ে হয়েছিস, আজকাল কার সব ছেলে বাদরামদি নস্টামি করে বেড়ায।
যত্তসব! !
মিতুর ইচ্ছা করছিল গিফটা ড্রেনে ছুড়ে দেয়। কিন্তু নিখুত মেড়ানো, চোখ ধাঁধানো মোড়কটা দেখে লোভ সামলাতে পারলোনা । কাঁপা কাঁপা হাতে একটা একটা মেড়ক খুলল। সুদৃশ্য তিনটা পেকেট।
একটায়
পরীক্ষার সময় ধার নেওয়া, ক্ষয়ে আধটা হয়ে যাওয়া, কার্বনের কালি পরা ইরেজার।
দ্বিতীয়টায়
একটা গলে যাওয়া আইক্রিম।
তৃতীয়টায়
একটা পাতাসমেত গোলাপের ডাল, ফুল নেই।
উপহার গুলো মিতুকে যথেষ্ঠ ভাবনায় ফেলে দিল। -ধার নেয়া ইরেজারটা সে ফেরত দিতেই পারে , তাই বলে জন্মদিনে।
কিন্তু আইসক্রিম আবার প্যাকেটে দেয় নাকি? বোকার হদ্দ!!
এবার গোলাপের পাতা নিয়ে ভীষন দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এটা কী কোন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে? নাকি শ্রেফ দুষ্ঠুমি ! !

তিন দিন পর, মিতু আচমকা অনুভব করল বিড়ালটা তার ঘরে আসছে না। নিশ্চয় চুরি হয়ে গেছে, নতুবা কোন বিপদ হয়েছে। ঘরে বাইরে খুজে দিশোহারা। হঠাৎ করে কী হয়ে গেল! ! সারা বাড়ি তন্ন্ তন্ন করে খোজা হল।সানশেডে, আলমারির নিচে, ওয়ার্ডড্রোবে, কিচেনে, ছাদে কোথাও পাওযা যায়নি। কোথাও না। এদিকে মিতু মুখে দানা পানিও ডুকছে না। মুখ শুকনো হয়ে গেছে, চোখ দুটো শুষ্ক আর লালছে, অশ্রু আপাত ফুরিয়ে গেলে যেমন হয়। আহা! দবদবে সাদা বিড়ালটা। আশেপাশের ফ্ল্যাটগুলোতে নোটিশ টানানো হল-”মাঝারি সাইজের , সাদা, গর্ভবতী বিড়াল নিখোজ” যোগাযোগঃ******”
পরের দিন সন্ধ্যা, বাইরে থেকে ফিরছে মিতু, গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঢুকল মিতু। চিঁ চিঁ চিঁ আওয়াজ শুনা গেল। অন্ধকার রূম। কয়েকপা এগুতেই একটা উদ্ভট গন্ধ নাকে এল, নাড়িভুড়ি উগরে যাওয়ার উপক্রম। মিশমিশে আধাঁরে, ঢিপ ঢিপ করতে লাগল বুকের মাঝে।আচমকা তারকাটাঁ বিধাঁ একটা কাঠের মধ্য হোচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল মিতু। ডান হাতটা বিধল জং ধরা তারকাটাঁয়।আর বোঁটকা গন্ধে অজ্ঞানপ্রায়। গার্ডরা চেচামেচি করে ছুটে এল। চোর ভেবে ডান্ডা দিয়ে সজোরে বসিযে দিল মাথার উপর।
ক্লিনিকের বেডে পড়ে আছে মিতু, মাথার কাছে শেফালী বেগম হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মায়ের দরদভরা পরশ পেয়ে কিছুটা প্রশান্তি অনুভুত হল তার। মিতু ভাবছে। ঘটনার আদ্যোপান্ত কোন কারন ছাড়াই, এই দুর্ভোগ! রহস্যটা কী ! এমন একটা দুর্ঘটনা হল কেমন করে ? হঠাৎ মাথা ব্যাথাটা চিনচিন করে বাড়ছে।আবার ঘুমিয়ে পরে অ্যানেস্থেশিয়ার প্রভাবে।
এক সপ্তাহ পর, বাসায নিযে আসা হল মিতুকে। বন্ধুরা চারপাশে ঘিরে আছে। কেউ ভাবছে –সুইসাইড করতে যাচ্ছিল কিনা!
কেউ ভাবছে- হয়ত পারিবারিক সহিংসতার শিকার সে।
কোমল পড়ল মহা দুঃশ্চিন্তায়-ফান করতে গিযে সিরিয়াস কিছু হয়ে গেল কিনা............... !

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বন্ধুরা চলে গেলে আবারো মনে পড়ে ফুটফুটে বিড়ালটার কথা। নোটিশের কোন রেন্সপন্স পাওয়া গেলনা। হঠাৎ কী ভেবে সে নিচে নেমে এল গার্ডরুমে। ওদের কাছে জানা গেল- বিড়ালটা প্রশব করতে গিয়ে মারা গেছে। দুটি বাচ্চা হয়েছিল- একটি কাল, একাট সাদা।কালটা দুই দিনের মাথায় মারা পড়ে।সাদা বাচ্চাটা দুর্বল হয়ে পড়ে আছে গার্ডরুমে। চিনি-পানি ভেজানো কাপড় দিয়ে মাঝে মাঝে খাবার দেয়া হচ্ছে। গভীর মমতায় বাচ্চাটার দিকে তাকায় মিতু। গার্ডদের বলে বিল্লীছানাটাকে নিয়ে যায় নিজের ঘরে। এখনো ছানাটার চোখ ফোটেনি। তড়িঘড়ি করে একটা ইনকিউিবেশন কুশন কিনে আনে, সার্জিক্যাল কটন দিয়ে বেঁধে দেয় চোখগুলো।

তিন মাস পর।
বিড়ালের বাচ্চাটা অবিকল মায়ের মত হয়েছে। মিতু এটিকে ইশারায় বশে আনার চেষ্টা করছে।---
হাত তালি দিলেঃ কাছে আসবে।
তুরি বাজালেঃ দুরে চলে যাবে।
চু চু করলেঃ খাবার খাবে।
ট্রোপ ট্রোপ করলেঃ খাবারে মুখ দেবেনা।
শিস বাজালেঃ কোলে উঠে আসবে।
মিউ মিউ করলেঃ বিছানায় উঠে আসবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিড়ালটা বাইরে গেলেই মিতুর মধ্য একটা শূণ্যতা কাজ করে । বিড়ালের জন্য কমন খাদ্য বানিয়েছে আঙুর, নিউট্রিশনে প্রফেসর এটি শিখিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন ক্লাস শেষে ফেরার সময় খাবার নিয়ে আসে , ছোট মাছ, চিংড়ি, দুধ, আঙ্গুর। ইতোমধ্যে বিড়াল বেশ আদরে আর নাদুস নুদুস হয়েছে।
এর মধ্যে মিতু আর কোমলের বন্ধুতা চুকিয়ে গেছে । যোগ হয়েছে ভালবাসা । অন্ত্যহীন ভালবাসা। শুরুটা ছিল একদম বাস্তবতা বর্জিতঃ
কোমলঃ এই তোর সাথে জরুরী কথা আছে।
মিতুঃ তোর জরুরী কথা আমার সাথে??....... ! আচ্ছা বল...
কোমলঃআমি তোকে ভালোবাসি।
মিতুঃ তাই?? তো আমি এখন কি করতে পারি?
কোমলঃ তুই ও বাসবি।
মিতুঃ আচ্ছা বাসলাম।
ব্যাস এইটুকুই এর পর বন্ধুত্ব গাঢ় হল। অন্যদের চোখে প্রেম, আর ওদের চোখে শুধু বন্ধুতা আধুনিকতাবর্জিত বন্ধুতা।
অনেকেই মন্তব্য করে- কী দোস্ত, ভালই তো জমাইতাসো........অথবা আরো আপত্তিকর কিছু আড়ালে আবডালে।
ওরা মনে মনে বলে-”পাছে লোকে কিছু বলে, মানুষ তো কথা বলবেই” ।

মিতু-কোমলের সব মতের ঐকমত্য হলেও , কিছু ফারাক থেকেই যায়, কোমল পছন্দ করে ঘুরে বেড়াতে, আর মিতু শপিং করতে
একজন চটপটি তো আরেকজন চায়নিজ, । বড় একটা ফারাক অন্য জায়গায়---- বিড়াল, কুকুর যেন কোমলের চোখের বালি। দেখলেই গা শিরশির করে।
কোন একদিন।
মিতু আজ একাকী বাসায়। হঠাৎ কোমলের ফোন
-কি করছ?
-সমরেশ পরছি,
-চল আজ বাইরে কোথাও যাই, ঘুরতে ইচ্ছে করছে অঁলিয়েস ফ্রঁজেস এ নাইস একটা এক্সিবিশন হচ্ছে।
-ওখানে অন্যদিন যাওয়া যাবে। আজ বাসায় আসনা জান, আমি বাসায় একা। মা-বাবা বেড়াতে গেছে।
-আজকে তো এক্সিবিশনের শেষ দিন
-না না , তুমি বাসায় আস, নিজে রান্না করে খাওয়ব। আচ্ছা তুমি খাবে?
- সিদ্ধ ডিম।
-ধুর হাদা, এটা কোন খাবার হল?
-আচ্ছা, তুমি চলে আস,আমি ততক্ষনে রান্না সেরে নেই।
-এই দেখ নুডুল্স তৈরী। নাও টেস্ট কর
-হু রান্না চমৎকার হয়েছে, কিন্তু তুমি মনে হয লবন দিতে ভ’লে গিযেছো
- ওমমম এ তো মুখেই দেয়া যাচ্ছে না আবার তৈরী করতে হবে?????
-নো প্রবস্ , গরম পানিতে লবন মিশাও, তার পর উপর দিয়ে স্প্রে করে দাও।
-ও নাইস আইডিয়্,া দারুন টেস্ট হযেছে তো।
-জান্ তুমি আজ খুব রিলাক্স লাইফ লিড করছো, তাই না?
-কেন হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
-ব্যাস্ত থাকলে দিন দিন এত সুন্দর হওয়া অসম্ভব।
-যাও, তেল দেওয়া হচ্ছে , না?
-বিশ্বাস না হলে আমার চোখের দিকে তাকাও, দেখ আলোতে অপ্সরা ।
-যাও, হইছে। এবার বল তোমার প্রমোশনের কি খবর, এবার হচ্ছে তো?

( হঠাৎ করে মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল) –আর ছ’মাস লাগবে। ফার্মের মালিকানা বদল হওয়ায় আপাতত কোন প্রমোশন দিচ্ছে না।
-ও। ধৈর্য রাখ, সব ঠিক হয়ে যাবে।
-তবে একটা সুখবর আছে- শুনবে?
মিতুর চোখ তির্যক হল-
- গতকালের কনফারেন্সের একটা এচিভমেন্ট আছে। আমরা পাতায়া যাচ্ছি। মাস তিনেক পর। ষোলই নভেম্বর।
-ওয়াও, পাতায়া, থাইল্যন্ড। সত্যি? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।...........

এমন সময় কুচ্ছিত বিড়ালটা কোমলের পায়ের কাছে এসে ঘুর ঘুর করতে লাগল। ওর মাথায় রক্ত উঠে যায় বিড়াল দেখলে। টেবিলের নিচ থেকে মিতুর চোখ ফাঁকি দিয়ে, জোড়ে সোড়ে একটা লাথি মারে বিড়ালের বুক বরাবর। বিড়ালটা সরাসরি হৃদপিন্ডে আঘাত পেয়েছে। আর্তচিৎকার করতে করতে ঘরময় রোল তোলে, মিনিট দশেক পরে মারা পড়ল মিতুর আদরের বিড়াল। মিতুর শূণ্য চোখ তাকিয়ে আছে মৃত প্রাণির দিকে। কোমলের চোখমুখে অপরাধীর কাচুমাচু ভঙ্গি। আচমকা স্তব্ধতা ভাঙ্গে মিতুর। হাতমুখ ডাইনির মত করে, টেবিলে রাখা কাচের জগটা নিয়ে, সজোড়ে ছুড়ল ফ্লোরের মাঝে। ”তুমি এই মুহুর্তে এখান থেকে বেরিয়ে যাও”।

অনুশোচনার বাক্যগুলো ভুলে গিয়ে, কোমল ধীর পায়ে বের হয়ে আসে।

ষোলই নভেম্বর। এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন গেট অতিক্রম করছে কোমল। ফ্লাইট সিঙ্গাপুর হয়ে থাইল্যান্ড। আশ্চর্য, তার কোলে একটা বিড়াল। ঘৃনার অবাক রূপান্তর ভালবাসায়। ওর অজান্তেই মিতু এসেছে, উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে, মানবিক টানে। কোমল তাকে দেখেনি। ইনভেস্টিগেশন সেন্টার থেকে রিপার্ট আসল ভ্রমনে কোন প্রাণি সঙ্গে রাখা যাবে না। কোমলের চোখের কোনে জল। অথরিটি বিড়ালটি নিয়ে গেল।
প্লেন ছেড়ে গেল। কোমলের পাশের সিটটা খালি। মিতুর সিট ছিল ওটা। কোমল ওর সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি, মিতুও না।
মিতু অথরিটির সাথে যোগাযোগ করে, আটকে রাখা বিড়ালটা নিয়ে নিয়ে নিল, হাজার খানেক টাকা ঘুষের বিনিময়ে। একবুক নিসঃঙ্গতা নিয়ে বাসায় ফিরছে একটি দুটো প্রাণি। একটি মিতু। একটি বিড়াল।


গল্পটি সিকৃবি’র সাহিত্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘মৃত্তিকা’য় প্রকাশিত।।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৫:০৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×