প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের গ্রামে গ্রামে চোখে পড়ে সুবিশাল সব অট্টালিকা। শহরে একের পর গড়ে উঠছে শপিংমল। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এখানকার ব্যাংকে পড়ে আছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা অলস টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ঝুঁকি না নেওয়ার প্রবণতা, অবকাঠামোগত অসুবিধাসহ নানা কারণে শিল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে না।
সিলেটের বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল অলস অর্থের কথা তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) বাংলাদেশ গ্রান্ডস প্রোগ্রামের অধীনে পরিচালিত এক সা¤প্রতিক গবেষণা বলা হয়েছে, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের মাত্র ২১ শতাংশ ঋণ আকারে সিলেট অঞ্চলে বণ্টন করা হয়।
এ অঞ্চলের ২০ লাখেরও বেশি প্রবাসী উৎপাদনশীল খাতে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারছেন না বলেও গবেষণায় বলা হয়।
এতে আরও জানানো হয়, ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৮ সালের আগষ্ট পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স আসে তিন হাজার আটশ' ৭৩ কোটি টাকা।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের বেশির ভাগই বাড়ি নির্মাণ, ফ্ল্যাট বা জমি কেনায় ব্যয় হয়।
রিপোর্টে সিলেটে বিনিয়োগ না হওয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতার অভাব, প্রবাসীদের ঝুঁকি নেওয়ার অনীহা, সুদের উচ্চ হার, বিনিয়োগ বিষয়ে জ্ঞানের অভাবকে দায়ী করা হয়।
এর ওপর অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাতো রয়েছেই।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে এ গবেষণায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফজলে এলাহী মো. ফয়সাল, সিলেট এমসি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমদ অংশ নেন।
ফজলে এলাহী মো. ফয়সাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভৌগলিক অবস্থান, বনজ ও জ্বালানি সম্পদ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারীদের আধিক্যের কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিলেট সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে বিবেচিত হলেও এ ক্ষেত্রে অঞ্চলটি অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।"
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ দীর্ঘ দিন ধরে সিলেটে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে উল্লেখ করে সংগঠনের প্রশাসক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে এটা অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রবাসীরা সহজে বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফারুক চৌধুরী বলেন, "এতে প্রবাসীসহ শিল্প উদ্যোক্তারা উৎসাহ পাবেন। বিনিয়োগ বাড়বে। আমদানি-রপ্তানির কাজ অনেকটা সহজ হবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের 'সেভেন সিষ্টারস' বলে পরিচিত রাজ্যগুলোতে এক বিশাল বাজার তৈরি হবে।"
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ মনে করেন, এখানে অনায়াসে গড়ে উঠতে পারে রফতানি নির্ভর সুগন্ধি শিল্প কারখানা, মৎস্য সংরক্ষণ ও হিমায়িতকরণ ও ফল প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা।
পর্যটন শিল্প ছাড়াও পোশাক শিল্পেরও অমিত সম্ভাবনা রয়েছে বলে তার ধারণা।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রস্ট্রিজের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসিম হুসাইন বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সিলেটে শিল্পখাতে বিনিয়োগের অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা নেই। এটাই বিনিয়োগে অনাগ্রহের মূল কারণ।"
চেম্বারের সাবেক পরিচালক এজাজ আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে প্রচুর আগ্রহী প্রবাসী বিনিয়োগকারী রয়েছে। তারা সিলেটের শিল্পায়নে অবদান রাখতে চান।
তবে মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্র চিহ্নিত করণে সমন্বিত প্রয়াসের অভাব রয়েছে।
এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে সিলেট বিনিয়োগ বান্ধব শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





