গল্পটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছে। এই গল্পে প্রেম ভালোবাসার ব্যাপারটাই মূখ্য। নরনারীর প্রেমভালোবাসার সম্পর্কে যৌনতা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এই গল্পে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যৌনতা বেশ সাবলীল ভাবেই স্থান পেয়েছে। যারা গল্পে যৌনতার সামান্য গন্ধ পেলেই সেটিকে “চটী গল্প” উপাধী দিয়ে দেন সেই সমস্ত রুচিশীল পাঠকদের এই গল্প না পড়ার অনুরোধ করব। এই গল্পের মাধ্যমে আমি একটা মেসেজ দিতে চাই। আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আশা করছি।
সেই কখন থেকে সেজেগুজে বসে আছে নীলা। অর্কের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ সারাটা দিনই রান্নাবান্না করেই কাটিয়েছে সে। নীলার প্ল্যান ছিল অর্কের প্রিয় ডিসগুলো রান্না করে অর্ককে একটু চমকে দিবে আজ। নাহ নাহ আরেকটা কারনও আছে। নিজের জন্মদিনে পরিবারের সবার জন্য নিজ হাতে রান্না করা ছোটবেলা থেকেই নীলার একটা শখ। আজ নীলার জন্মদিন। ঘড়িতে প্রায় দশটা বাজে অথচ অর্কের তখনো পাত্তা নেই। অর্কের উপর অবশ্য কখনো রাগ হয়না নীলা। হতে পারেও না। তাছাড়া নীলা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং ম্যাচিউর একটা মেয়ে। ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে মান-অভিমান, ঝগড়া-জাটি নীলার খুবই অপছন্দ। অর্ক একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে উচ্চ পদে চাকুরী করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে কাজের উপরই থাকতে হয়। আজ যে নীলার জন্মদিন তা হয়ত অর্কের মনেও নেই। মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। কাজের চাপে অনেক সময় নিজের নাম ও ভুলে যায় সে। নীলার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় অর্ককে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসে। কিন্তু সেই সময় বা সুযোগ অর্কের কখনো হয়না। এই নিয়ে অবশ্য তেমন একটা আক্ষেপও নেই নীলার। সপ্তাহে যে একটা দিন অর্কের ছুটি থাকে সেই দিনটাতেই ভালোমত পুষিয়ে নেয় সে। মেয়ে হিসেবে অতি মাত্রার রোমান্টিক নীলা। নীলার অদ্ভুত-মিষ্টি-পাগলামীগুলো দারুন উপভোগ করে অর্ক। যদিও অর্ক পুরোপুরিই নীলার বিপরীত। নীলার মত পাগলামী অর্ক কখনোই করতে পারেনা। তাছাড়া ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ সবাই একভাবে ঘটাতে পারেনা। সবচেয়ে বড় কথা, নীলা অর্কের মাঝে অসাধারন একটা বোঝাপড়া ছিল। তাদের ভালোবাসার ভিত্তি ছিল অত্যন্ত মজবুত।
কলিংবেল বাজছে অনেকক্ষন থেকে। অর্কের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে চোখ লেগে এসেছে নীলা টেরও পায়নি। চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলল সে। আট-দশটা দিনের মত অতি স্বাভাবিকভাবেই গৃহে প্রবেশ করল অর্ক। হাতমুখ ধুয়ে ড্রেস চেঞ্জ করল। নীলাও প্রতিদিনের মত অর্কের জন্য খাবার রেডি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অর্ক যখন ড্রয়িংরুমে বসে অতি মনোযোগ সহকারে খবর দেখছিল, নীলা হুট করে এসে টিভিটা বন্ধ করে দিল। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল, “আসেন মশাই এবার খেতে আসেন”। অর্ক অবাক দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে রইল। নীলাকে সাজলে যেন একটু বেশীই সুন্দর লাগে।
--আজকে হঠাত এত সাজুগুজু করলা, কাহিনী কি?
--ইচ্ছা করল তাই সাজলাম। কেন আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে?
--নাহ খুব একটা খারাপ লাগছে না। মুচকি হেসে বলল অর্ক।
অর্ক যদি এখন বলত, “তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে নীলা। তুমি কি জানো নীল শাড়ীতে তোমাকে কতটা মানায়?” তাহলেই হয়ত নীলা অবাক হত।
--ওমা আজকে তো দেখি আমার সব প্রিয় খাবারগুলা রান্না করেছ। দাড়াও একটু একটু করে টেস্ট করি। হুম সেইরকম হইছে কোরমাটা। তোমার রান্নার হাত আসলেই আমার মায়ের মত!!
খাবার দাবার শেষ করে ওরা দুজন গল্প করছিল। হঠাত করেই অর্ক নীলাকে বলল চোখ বন্ধ করতে। নীলার মাথায় কোনভাবেই কাজ করছেনা কেন হঠাত করে অর্ক এই আবদার করছে। নীলা তেমন একটা গেজালো না। চোখ বন্ধ করে ফেলল।
--এবার চোখ খোল।
চোখ খুলে তো নীলার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অর্ক নীলার আঙ্গুলে খুব সুন্দর একটা ডায়মন্ডের রিং পড়িয়ে দিল।
--ওহ মাই গড! হাউ বিওটিফুল! নীলার যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না।
--হেপী বার্থডে জান! তুমি কি ভাবছিলা আমি ভুলে গেছি?
খুশীতে নীলার চোখে পানি এসে পড়ল। গিফট পেয়ে নীলার যতটা না খুশী লেগেছে তার চেয়ে লাখ লাখ গুন বেশী খুশী লেগেছে এই ভেবে যে অর্ক তার বার্থডে’র কথা মনে রেখেছে।
--শয়তান...এত ঢং কর কেন তুমি? এই বলে নীলা হাসতে হাসতে অর্ককে কয়েকটা ঘুষি দিল।
--এবার তোমার চোখ বন্ধ করার পালা। চোখ বন্ধ কর বলছি!
--কেন আমাকে কি কোনো গিফট দিবা নাকি?
--আগে চোখ বন্ধ কর তো। কোনো কথা নাই!
চোখ বন্ধ করতেই নীলা অর্ক জড়িয়ে ধরে নিবিড়ভাবে কিছুক্ষন কিস করল। অর্কও ওকে জাপটে ধরে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগল। ভালোবাসার গভীর সমুদ্রে ওরা আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকল।
(নীলার বর্ণনা হয়ত এই গল্পে আর আসবেনা। মজার ব্যাপার হল নীলা এই গল্পের তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন চরিত্র না)
অফিসে একজন তুখোড় এক্সিকিউটিভ হিসেবে অর্কের বেশ সুনাম রয়েছে। প্রচন্ড মেধা, কাজের প্রতি একাগ্রতা এবং আকর্ষনীয় ব্যাক্তিত্বের কারনে বসের সবচেয়ে আস্থাভাজন ইম্পলয়ী অর্ক। আর তাইতো বস তার একমাত্র মেয়ে সিমিনের সাথে সবার প্রথমে অর্ককেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সিমিন কয়দিন আগেই হার্ভাড থেকে এমবিএ শেষ করে দেশে ফিরেছে। দু-একদিনের মধ্যেই কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে সে। অত্যন্ত আকর্ষনীয় মুখশ্রী এবং শারিরিক অবয়বের অধিকারী সিমিন। সিমিনের মায়াবী চেহারার ফাঁদে পড়ে যেকোনো পু্রুষই কুপোকাত হতে বাধ্য। তবে সিমিন অবাক হল তার প্রতি অর্কের নির্লিপ্ততা দেখে। অর্কের ব্যাক্তিত্ব কেন যেন প্রচন্ডভাবে আকর্ষন করল সিমিনকে। সিমিন কখনো কোন পুরুষকে দেখে এতটা আকর্ষন অনুভব করেনি। কত পুরুষই তো পাগল ছিল সিমিনের জন্য! কিন্তু আজ সিমিনের কেন যেন মনে হচ্ছে অর্কই সে সপ্নপুরুষ যাকে সে এতটা দিন ধরে খুজে বেড়িয়েছে।
প্রথম পরিচয়ের পর থাকেই অর্কের জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠে সিমিনের। অর্কের সাথে একটু কথা বলার জন্য একটু কাছ থেকে দেখার জন্য খুব দ্রুতই ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ফেলল। দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই একদিন অর্ককে তার রুমে ডেকে আনলো সিমিন।
--আসুন মিঃ অর্ক। কেমন আছেন আপনি?
--জ্বী ম্যাডাম ভালো। আপনি ভালো আছেন? আর অফিস কেমন লাগছে?
--একটু নারভাস। মনে হচ্ছে বেশ কঠিন দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছি। অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।
--আস্তে আস্তে সবকিছুই বুঝে উঠবেন ম্যাডাম।
--হুম। তবে আপনার হেল্প আমার দরকার। ডেডের কাছে আপনার অনেক প্রসংশা শুনেছি। আমার মনে হয় একমাত্র আপনিই আমাকে এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী হেল্প করতে পারবেন। আপনি কি আমাকে হেল্প করবেন প্লিজ?
--হা হা হা! অবশ্যই ম্যাডাম। আমি আমার সাধ্যমত আপনাকে হেল্প করার চেষ্টা করব। তাছাড়া এটা তো আমার জন্য বিশাল সৌভাগ্যের ব্যাপার!
--থ্যাংক্স এ লট অর্ক সাহেব। ইফ ইউ ডোন্ট মাইণ্ড আমরা কি আজ একসাথে লাঞ্চ করতে পারি?
এই প্রস্তাবে অর্ক কিছুটা অবাক হল। তবে সাথে সাথেই তার সম্মত্তির কথা জানিয়ে দিল।
সেদিন লাঞ্চের সময় অনেক কথা হল সিমিন ও অর্কের মধ্যে। অর্ক খুবই প্রফেশনাল। কাজের কথার বাইরে কোনপ্রকার টূশব্দটিও করছে না সে। লাঞ্চের ফাকেই সিমিনকে তাদের কোম্পানীর স্ট্রাটেজী, পলিসি এবং ফিউচার একশন সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারনা দিল অর্ক।
--অনেক ধন্যবাদ অর্ক সাহেব। অনেক কিছুই জানতে পারলাম আপনার কাছ থেকে। বাই দ্যা ওয়ে কাল তো উইকএন্ড। কালকে প্ল্যান কি আপনার?
--তেমন কিছু না। উইকএন্ডটা বউ-এর সাথে ঘোরাঘুরি করেই কাটিয়ে দেই। আপনার কি প্লান ম্যাডাম?
সিমিন কেমন যেন অনুভুতিহীন হয়ে গেল অর্কের কথা শুনে। প্রচন্ড শক খেলে হয়ত মানুষ অনুভুতিশুন্য হয়ে পড়ে। সিমিন মনে মনে ভাবতে লাগল একটা বারের জন্যও কেন তার মনে হল না যে অর্ক বিবাহিত হতে পারে! অর্ককে পাওয়ার তীব্র আখাঙ্কাই কি তাকে বাস্তব থেকে এতটা দূরে সরিয়ে রেখেছিল?
--আর ইউ আপসেট ম্যাডাম?
--নাহ আই এম ওকে। আসলে উইকএন্ড আমার কাছে স্পেশাল কিছু না। তবে আপনার উইকএন্ড প্ল্যান শুনে ভালোই লাগল। বেস্ট অব লাক!
চলবে (গল্পের বাকি অংশ শীঘ্রই প্রকাশ করব) ২য় পর্বের লিঙ্ক সম্পূর্ণ গল্পের লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:১৪