somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চোরাবালি-
পোষাক তৈরীর কারখানায় মাসিক বেতনে কামলা দেয় মাস শেষে মাইনের আশায়, যে মাইনে দিয়ে চলবে নিজের পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু একটা করার প্রচেষ্টা মাত্র। নিতান্তই সাদামাঠা গ্রাম থেকে আসা স্বল্প শিক্ষিত মানুষ।

পুলিশ কেন দুর্নীতিতে জাড়িয়ে গেছে।

১০ ই আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অভিমত মাত্র।

বাংলাদেশে দুর্নীতিতে জড়িত এমন কারো নাম উঠলে প্রথমেই নাম আসে পুলিশের, কিন্তু কেন? কারণ পুলিশ কাজ করে সাধারণ জনগণ নিয়ে, আর সাধারণ জনগনের সাথে সামান্যতম অন্যায়ও ব্যাপক আকারে প্রচার পায়। আর সাধারনের কথা অধিক ছড়ায়। অন্যান্য সরকারী ডিপার্টমেন্টের বিবেচনা যদি করা হয় তা হলে পুলিশ বিভাগ নিছকই ছেচড়া দুর্নীতিবাজ হিসেবে দেখা যাবে। যেমন ধরুন কাস্টমস বিভাগে একজন ছিপাহি’র সম্পদও কয়েক কোটি টাকা কিন্তু কোটিপতি হাবিলদার খুজে পাওয়া মুশকিল। অধিকাংশ হাবিলার খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করে, তাদের না আছে কোন আর্থিক স্বচ্ছলতা, না আছে কথা বলার স্বাধীনতা, না আছে কোন সামাজি মর্যাদা। পুলিশ বলতেই বর্তমান সমাজ তাদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে শুধু রাজনৈতিক নোংড়া নিদের্শশনা বাস্তবায়নের ফলে। রাজনৈতিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে পর্যায়ে যারা কাজ করে তাদের কোন হাত থাকে না, তারা শুধু উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বাস্তবায়ন করে মাত্র।

এত ব্যাপক হারে দুর্নীতিতে কীভাবে জড়ালো?
১৯৯৯-২০০৩ পর্যন্ত আমরা কমপিউটার কম্পোজ ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম সেসুবাদে আমাদের সরকারী দপ্তরের সঙ্গে ব্যাপক যাতায়ত ছিল কেননা তখন সরকারী দপ্তরে কমপিউটারের ছোয়া লাগে নাই, কোন কোন দপ্তরে কমপিউটার থাকলেও সেখানে যোগ্যতা সম্পন্ন লোকের অভাব থাকায় কম্পোজের দোকানই ছিল ভরসা। মাঝে মধ্যেই থানা থেকে ড্রাফট দিয়ে যেত আমরা কম্পোজ করে সেগুলি পৌছে দিতাম কেননা উনাদের কাজগুলি কিছুটা গোপনীয়তায় করার নির্দেশ ছিল তাদের যদিও তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। সে সুবাদে পরিচিত হয় থাকার উর্দ্ধতন থেকে এ এস আই লেভেলের লোকদের সাথে। সম্পর্ক হয়ে যায় ২/১জনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যার পর যেতে হল একটা দরখাস্তের ড্রাফট দেখানোর জন্য। এলাকায় কলেজে কী নিয়ে দুই পক্ষ মারামারি হয়েছে যেটা থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে। একটু অপেক্ষা করলাম দেখার জন্য। দুই পক্ষই ছাত্র লীগের সঙ্গে জড়িত। সব শেষে থানায় ঢুকলেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাহেব গালি দিতে দিতে। ওসি সাহেবের রুমে ঢুকেও চলল তার গালিগালাজ চেয়ারে বসেই। আমি বেচার এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছি আবুল হয়ে, শুধু দেখে যাচ্ছি তামশা। এবার প্রসঙ্গ ক্রমে সেই ছাত্র লীগের মেধা নিয়ে বলা দরকার। উনি আমার প্রতিবেশি, সম্ভবত ১৯৯২ সাথে ও ১৯৯৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েও ফেল করে, শেষ মেষ ১৯৯৪ সালে ২য় বা ৩য় ডিভিসনে পাস করে। যারা সে সময়ের শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত আছেন তারা জানেন ১৯৯২-১৯৯৫পর্যন্ত প্রশ্ন ব্যাংক পদ্ধতিতে পরীক্ষা হত, সাবজেক্ট অনুযায়ী ৫০০ প্রশ্ন ৯ম ও ১০শ্রেণীতে মুখস্ত করলেই অনন্ত পাশ। কলেজেও পরীক্ষা দিয়ে যায় কিন্তু পাশ করে না, ইচ্ছাকৃত নয় মেধার ফলেই। লাফালাফি ফালাফালি শেষে তারা যখন চলে গেল, থানার কর্মকর্তা সাহেব মাথা তুলে বললেন, এটা হল আমাদের অবস্থা। কলেজের ইস্যু, দুইজনকে ডেকে দুইটা ধমক দিলেই মিটে যায় সেখানে থানা পর্যন্ত এসেছে এবং আমার সামনেই গালিগালাজ করে যাচ্ছে আর আমাদের হজম করতে হয়।
মূলত এসব নেতারা এসব ছোটখাটো বিষয়কে পুজি করেই বাণিজ্য করে। থানা পর্যন্ত গড়িয়ে তারা থানাতে টাকা লাগবে বলে দুই পক্ষ থেকেই টাকা নিয়ে থাকে এবং থানায় এসে বলে এমপি সাহেব বলেছেন, সভাপতি সাহেব বলেছেন বলে বিনে টাকায় কাজ করিয়ে নেয় বা মিমাংশা করিয়ে নেয়।
হাবিলদারদের কষ্টের জীবন প্রসঙ্গে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা বলি। আমি টিউশনি করাতাম হাবিলদারের ছেলেকে। বেচারার ৩টা ছেলে নিয়ে রেশনের মোট চাল আটা খেয়ে কোনরূপ জীবনযাপন করতেন। মাস শেষে আমার টাকা চাইতেও লজ্বা লাগত তাদের নাজুক অবস্থা দেখে। এবং পুলিশ ব্যারাকে গিয়ে তাদের খাবার মুখ দিয়ে নামে নাই আমি কৃষকের ছেলে হয়েও, অনেক কষ্ট করে খাবার নারাচারা করেছি সবার দিকে তাকিয়ে।

ফিরে যাই মূল প্রসঙ্গে। পুলিশ একটা সময় দেখতে পেল তাদের ব্যাবহার করে নেতাকর্মীরা টাকা আদায় করে অন্যদিকে তারা মানবেতর জীবন যাপন করে সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের গোলামী করতে হয়। যখন তারা দেখল তাদেরই ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতারা টাকার পাহাড় বানাচ্ছে তখন তারাও কম যাবে কেন, তারাও শুরু করল, থানার অভিযোগ থেকে অর্থ আদায়, এরপর শুরু হল তাদের উদ্ধতনদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন। উর্দ্ধতনরা যখন দেখলেন দেশের অন্যান্য দপ্তরে চাকরী করে সবাই টাকার পাহাড় বানাচ্ছে তারা রাত জেগে জনগনের সেবা করে কেন পিছিয়ে থাকবে। সব থেকে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পরে ২০০৮পরবর্তী রাজনৈতিক বিবেচনায় পুলিশ নিয়োগের ফলে। পুলিশ তখন আর ক্ষমতাসীন ছাড়া কাউকে তোয়াক্কা করে কথা বলে না, কোন কোন পুলিশ রাজনৈতিক পরিচয় দিত প্রকাশ্যে। সব থেকে খেলা শুরু হয় রাজকার ট্যাগের সময় থেকে, যাকে তাকে ধরেই তুই রাজাকারের বাচ্চা থানায় নিয়ে যাব বাঁশ ডলা দিব ইত্যাদিও বলেও প্রভাব খাটাতে শুরু করল রাজনৈতিক সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্তরা। তাদের উদ্ধতনরা থানায় থানায় বেঁধে দেয়া শুরু করল তাদের ডিমান্ড। প্রতিটি এলাকার ওয়ার্ড পর্যায়ে গঠিত আওমী কমিটি যার ফলে সমাজ ভরে গেল সভাপতি আর সহ-সভাপতিতে। এসব সভাপতি আর সহসভাপতিরা পুলিশকে তাদের বাড়ির চাকর ভাবা শুরু করল, ব্যবহার করা শুরু করল তাদের ইচ্ছে মত, পুলিশও চলা শুরু করল তাদের ইচ্ছে মাফিক। কেননা রাত যেগে কোন অপরাধিকে ধরে আনার সাথে সাথে থানায় এসে হাজির সভাপতি বা সহসভাপতি সে আসামিকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য। এর পর থেকেই আন্দোলন আসলে পুলিশ আরো খুশি, সারাদিন আটক করে, সন্ধ্যা হলে খাতা নিয়ে বসে নাম ঠিকানা লিখে ছেড়ে দেয় ৫হাজার থেকে ১/২লাখ পর্যন্ত নিয়ে।
যানবাহনের দিয়েত্বে থাকা পুলিশেরাও কম যায় না, রাজনৈতিক নেতারা কেও কেও নেমে পরলেন ব্যাটারি অটো, সিএনজি ব্যাবসায়। শহর দাপিয়ে বেড়াতে লাগল তারা, তারা অটো প্রতি নির্ধারণ করে দিল তাদের প্রতিদিনের ডিমান্ড। মোরে মোড়ে ভ্যানগাড়ির বসে গেল পসরা নিয়ে, সেখানেও রাজনৈতিক পাতি নেতারা শুরু করল বাণিজ্য। প্রতি ভ্যানে প্রতিদিন ১শ থেকে জায়গা বুঝে ১হাজার পর্যন্ত। সেটা দেখে পুলিশও শুরু করল, তাদের ডিমান্ড। সব শেষে সততা, আদর্শ সব ছুড়ে ফেলে মিলেঝিলে শুরু হল এক মহা অর্থনৈতিক বিপ্লব, কে কার থেকে কত টাকা কামাবে, কে কত সম্পদ গোছবে, কে কোন দেশে বাড়ি বানাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সরু চিকেন নেক করিডর সমস্যা এবং সমাধান

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭



সরু চিকেন নেক করিডরের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্তের ব্যাপারে ভাবছে ভারত

ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের রেল সংযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাকীত্ব: আত্মার ঘুণপোকা ও আধুনিক সমাজের অদৃশ্য মহামারী

লিখেছেন মি. বিকেল, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৫



‘একাকীত্ব’ সাধারণ বিষয় নয়। একা থাকা মানে অজস্র চিন্তার স্রোত মাথায় প্রবাহিত হওয়া। একা থাকা মানে নিজের সাথে থাকা। নিজের চিন্তা ও স্মৃতির সাথে একাকীত্ব আমাদের বেশি করে পরিচয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠকানোটাই ভাল শিখেছি আমরা

লিখেছেন ফেনা, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭



এই বিশাল মহাকর্ষীয় বস্তু সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেয়—এমনকি আলোও পালাতে পারে না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে কী ঘটে? সেখানে সময় ও স্থান কেমন আচরণ করে? এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরব বিশ্বে নারীরা অপমানিত? আমার অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বহুদিন ধরে একটি কথা শুনে আসছি—“নারীরা আরব দেশে অসম্মানিত অবস্থায় থাকে।”
কিন্তু আমি আরব দেশে গিয়েছি, থেকেছি, এবং প্রায় দুই মাস ধরে একাধিক জেলায় ঘুরেছি।
সত্যি বলছি—আমি সেখানে কোথাও নারীদের অসম্মানিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা : অরাজকতার পালে নতুন হাওয়া!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০৩


বাংলাদেশে আজকাল দাবি না জানালে কেউ আর মানুষ থাকে না—ছাত্র, শিক্ষক, গৃহিণী, পুলিশ, পিয়ন, কবি, কুস্তিগির, সবাই 'অধিকার' চায়। তবে অধিকার মানে এখানে মোটেই দায় বা কর্তব্য নয়, বরং ছিনিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×