সকাল 8: 15 তে আমরা আমাদের আত্মাকে ঐ পাহাড়ী নদীর উপর লাল রঙের লোহার ব্রীজের গোড়ায় ফেলে দিয়ে আসলাম । চান্দের গাড়ির আদলের বাসটা পেছনের কাচ দিয়ে আমরা অপলক তাকিয়ে চিনে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম সেই জায়গাটাকে যেটা আমাদের আত্মাশূন্য করে ফেলেছিল। সামনের ডান দিকে সিটে সুমন (পদবী চৌধুরী) মুখে গম্ভীর ভাব এটে বসে আছে। ঘোড়া সেলিম (খালি ঘোড়ার ছবি আকতো বলে ওর এই নাম কিন্তু আমার ধারনা দাড়িয়ে ঘুমানোর মতই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নিখুত কাজ করতে পারতো বলে ওর এই নাম) স্বভাবমত সুরেলা নাকি ঢঙে বলে চলেছে চল নেমে যাই।
কিন্তু এই যুগে আত্মার চাইতে ধড়ের দামই বেশি। বাংলা সিনেমার ভিলেনের দেহ আর মনের সিই বিখ্যাত ফিলোসফিতে (দেহ পাবি মন পাবি না শয়তান/ সেটাই তো চাই সুন্দরী) আমরা মজে হয়ে গেছি আগেই। ধড়টা রেখে আসার বুকের পাটা যেহেতু নেই - কেবল কথায় কথার তাল মেলাই। বাসটা গোঙাতে গোঙাতে পাহাড়ী পথ ঠেলে এগুতে থাকে। রাঙামাটি তখনও বহুদুরের পথ। পেছনে পড়ে থাকে মুমুর বন্ধুত্ব, চিম্বুকের কটেজ, তাজিনডং আর কেওক্রাডঙের ভাসমান জোড়া শৃঙ্গ, রূপালী সরু ফিতের মতো বয়ে চলা শঙ্খনদী আর মুরুং পাড়ার টান। আর পাহাড়ের চেয়েও সবুজ সেই অচেনা পাহাড়ের মেয়েটি।
বান্দরবন থেকে রাঙামাটি যাওয়ার ঠিক 7:30 এর গাড়িটা ধরলাম আমরা তিনজন। মেয়েটি এসে বসেছিল সুমনের ঠিক সামনে। সাথে সাথে বাসটিতে যেন সমস্ত সৌন্দর্য্য ভর করলো। সেলিম বলে - দেখ। আমি বলি - দেখ। সুমন আমাদেও কান্ড দেখে নিজে কিছুই বলে না। বাস যাচ্ছে - চারদিকে অতল খাদ নাকি নাকি খাড়া পাহাড় কিছুই দেখি না। কিন্তু পৃথিবীর সকল আনন্দ 8:15 তে এসে থমকে যায় । মেয়েটা আমাদের আত্মাকে নিয়ে নেমে যায় ।আমিহীন আমি এবং আমরা এই জায়গাটায় ঠিক ফিরে আসবো বলে পণ করি। কিন্তু এই বেচে থাকার দিনে আত্মার প্রয়োজন হয় না বলে আমরা ফিরতে পারি না। বিকি- কিনির ঢাকার আগে অবশ্য তখনও বাকী থাকবে দুটো দিন। সেখানে আমাদের (আমার ও সুমনের, সেলিম সেখানে অতিথি) পৃথিবীর সরলতমা বন্ধু সুচন্দ্রা বসে আছে।
এসবই গল্পের মধ্যেকার গল্প। গল্পের শুরু ঢাকার কমলাপুর ষ্টেশনে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



