সবাই কল্পনায় সারিকাকে দেখে।
ছিপছিপে শ্য্যামাঙ্গিনী মেয়েটাকে নিয়ে ভাবে নাই এমত ছেলেবুড়ো এ অঞ্চলে নাই। মন চোখের অনুগামী, ন্বপ্ন মনের। গেলবার দাশ পাড়ায় হ্যাজাক জ্বেলে কৃষ্ণ নামকেত্তন হয়েছিল সারারাত ধরে। সাগরপাড়ের মানুষেরা অস্টপ্রহর বুদ হয়ে কৃষ্ণ কৃষ্ণ করে চোখের জল বুকে করেছে। ভক্তিপতির বউ কাদতে কাদতে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটায়ে পড়লে সবাই হুড়মুড় করে তার নেক খবরদারীতে ব্যস্ত পড়লে সবাই অবাক হয়ে শোনে তার নিঃশ্বাস দিয়ে কৃষ্ঞ নাম বের হচ্ছে। এরপর কৃষ্ণ মহিমা আর একবার বুঝতে পেরে সবাই তার উদ্দেশ্যে লুটিয়ে পড়ে। সমবেত উলুধ্বনি সাগরের শব্দের সঙ্গে মিলে চরিদিক এক স্বর্গীয় মহিমায় ঢেকে ফেলে। সেই নিঃশংশয় আত্মসমর্পনের দিনের কথা মনে করতে গেলেও গায়ের পুরুষকুল বুকের ভেতওে একটা কাটা অনুভব করে। কৃষ্ণ নামে নত হওয়ার মূহূর্তেও সারিকার দিকে চোখ চলে যায় .. সারিকা কৃষ্ণ নামে কেমন দুলে দুলে উঠছে, সারা শরীরের গোপন আগুন দুচোখ জোড়ায় ভর করেছে। সারিকার চোখের তারার ইশারায় তারাও দুলতে খাকে। পরে এ নিয়ে যুবকদের মধ্যে আলোচনা হয় ।
সারিকা আসর ছেড়ে চলে গেলে কৃষ্ন নামজপে রসভঙ্গ হয় এক এক করে যুবকের দল আসর ছেড়ে পাড়ে উঠানো ভাঙা নৌকার গলুই এ বসে জটলা পাকায়। সমুদ্রের নোনা হাওয়ায় তারা বিড়ি ফুকে আর বাতাসে আগুনের ফুলকী ছোটায়। সাধন দাশই প্রথম কথাটা ওঠায়। ওদলু পূজার দিনে সে কি চাবে তা আর কেও জানে কি না জিজ্ঞেস করে।
তোর মনের কতা .. মুই জানবো ক্যামনে .. মুই মোরটার কথা বলতে পারি কিন্তু কমু না। অন্যরা হল্লা করে ওঠে - ক্যানে ক্যানে-
সমুদ্রের এ অঞ্চলটা সনাতনী হিন্দু হলেও সাগর পাড়ে বাস হওয়ার কারনে অন্যএলাকা থেকে স্বতন্ত্র লোকাচার গড়ে উঠেছে। উম্বুশা নামে এক মাঝি কোন আদিকালে নৌকাডুবিতে মাঝসমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার একশত তেরদিন পর মাঝসমুদ্রেই ভেসে উঠেছিল। সঙ্গীরা তাকে দানো মনে করে নৌকা ছুটিয়ে পালিয়ে তীরে আসার তিনদিন পর উম্বুসাও তীরে এসে হাজির হয়। সে নেকৈা জলে যে রেখা রেখে যায় সেই পথ ধরে উম্বুসা সাতরে এতটা পথ পাড়ি দেয়। দরিয়ার এক নতুন দেবতার সে গল্প বলে। সনাতনী হিন্দু আর নতুন মুসলমান সবাই সেই অলৌকিক দেবতার নাম অগ্রাহ্য করার সাহস পায় না। ওদলু নামে সেই দেবতা একশত তেরদিন পর পর উম্বুসার উত্তরপুরুষদের বাসনা পূরনে এই দ্বীপাঞ্চলে আসেন। তার তুষ্টিতে সে দিন সবাই মৌনতা অবলম্বন করে মনপ্রান ঢেলে আরাধ্য জিনিষের জন্য প্রার্থনা করে।
কৃষ্ণ জপের চেয়েও ওদলুর পূজা অনেক বৈচিত্রময়। ভক্তির সাথে এখানে মেশে রহস্য, নিবেদনের বদলে এখানে জেগে ওঠে অপূর্ণ কামনার চিত্র। ফলে কৃষ্ণ বেচে থাকলেও ওদলু এখানে অনেক জনপ্রিয়। অন্তত যুবাদের কাছে। তাদের সামনে বিস্তীর্ণ জীবন অনেক অপূর্ণ কামনা আর বাসনার রসে সিক্ত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



