বিশাল বপু তার। চিবুকের নীচে ঝুলে পড়েছে বাড়ন্ত মাংস। নাকের ডগায় চশমা। শরীরের বিশালাকৃতির তুলনায় বেশ ছোট চেহাড়া। তার নাম ড· জিয়াউল হক- জেনারেল সার্জন।
আমার দ্বিবিধ সমস্যা। বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখের কোণার ইনফেকশন, যা আমাকে বছর খানেক ধরে ভোগাচ্ছে। আর ডান হাতের উপরের পিঠে একটি আদর্শ আকারের আচিল, যা আমার সুন্দর হাতের সৌন্দর্য হানি করছে। আমি দুটোই সার্জারী করে সরিয়ে ফেলতে চাই।
আজ আব্বাকে পোস্ট অপারেশন চেক আপের জন্য ডাক্তার দেখাতে গিয়ে নিজেও তাই একজন ডাক্তার দেখানোর মনস্থ করলাম। ভাবলাম আমার বোধ হয় একজন স্ড়্গিন স্পেশালিস্ট দেখানো উচিত। যেকোন স্ড়্গিন স্পেশালিস্ট আবার বিশেষ রোগেরও চিকিৎসক। আমার মাথায় ঢোকেনা স্ড়্গিনের সাথে এই বিশেষ রোগের কী সম্পর্ক আছে। এ বিষয়টা অনেকটা আমাদের ফোর্থ ইয়ারের ৪০৫ নং কোর্সের মতো, যার শিরোনাম ছিলঃ মলিকুলার বায়োলজি, ফরেনসিক ডিএনএ এন্ড সেল সিগনালিং। অনার্স শেষ করেও আমি বুঝতে পারিনি মলিকুলার বায়োলজির সাথে সেল সিগনালিং এর কি সম্পর্ক।
যাই হোক স্ড়্গিন স্পেশালিস্ট এর কাছে যাওয়া হয়নি আমার। আমি গেলাম ডা· জিয়াউল হকের কাছে।
ভরাট কণ্ঠে তিনি ফোনে কথা বলছেন একজনের সাথে। পুরনো ঢাকার স্টাইলে কথা বলেন- চোখ বুজে। কি হইছে? কি করছো? হ, আমি দেইখ্যা দিমুনে- এসব হচ্ছে তার ভাষা। তার টেবিলে একটি এসট্রে, এক প্যাকেট সিগারেট এবং সিগারেটের প্যাকেটের ওপর একটি লাইটার।
আমাকে বললেন, কও কি সমস্যা? আমি বললাম বৃত্তান্ত। তিনি আমার নখ দেখলেন। হাতের আচিল দেখলেন। বললেন, এগুলো এহনই আমি অপারেশন করতে চাইনা। তুমি মিয়া বাইচা গেছো। নখের অবস্থা এহন অনেক ভালো। রাতে পাঁচ মিনিট পা ভিজাইয়া পরিষ্ড়্গার করবা।
আমার বাবা সাথে বসা। প্রায় শেষের দিকে তিনি বললেন, ডাক্তার সাহেব, আপনার ব্যবহার আমার খুব ভালো লেগেছে।
ডাক্তার বললেন, না আমি এত ভালো না। বহুত রাগ আমার। আমার লগে যদি কোন রোগী পন্ডিতি করতে আহে তাইলে অরে আমি থুইনা। একেবারে বাপ মা তুইলা গাইল দেই- হালার পো হালা···তোর মায়রে আমি···( আমি যদিও জায়গা শূন্য রেখেছি··ডাক্তার কিন্তু পুরোটাই বলছে)- এই সব কই।
আমি অবাক হওয়ার সকল লেভেল অতিক্রম করে গেলাম। এমন কথা কোন সুস্থ মানুষ বলতে পারে? তা-ও কোন ডাক্তার?
ছোটবেলায় কবিতায় সফদার ডাক্তার-এর কথা পড়ে ভেবেছিলাম এমন ডাক্তার কি আদৌ থাকা সম্্ভব? আজ প্রমাণ হলো সফদার ডাক্তার এখনো আছে, তখনতো ছিলোই।
পুনশ্চঃ ডাক্তার আমার পায়ের জন্য একটি এন্টিবায়োটিকের নাম লিখে দিয়েছিল। আমি এখানো কিনিনি- কিনবো বলে মনে হয়না।
ক্লিন
রাত ১০·২২, ৭-৫-০৮