লিখছি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্টফোর্ড কলেজের এমসিআর প্রেসিডেন্ট-এর রুম থেকে। দিনভার শ্রান্ত শ্রম শেষে কোনমতে সব নিয়ে রাত একটায় থিতু হওয়া গেলো। সহযোগিতা করলো জাকি।
সারাদিন আচ্ছামতো সুন্দর আবহাওয়া ছিলো। রৌদ্রজ্জ্বল। সকালে এক দফা টুকটাক করে জিনিসপত্র রেখে গিয়েছিলাম। এরপর বাংলাদেশ কমিউনিটির অনুষ্ঠানে যেতে হলো। সেখান থেকে এসে বাকিটা করা হলো। একটা ট্যাক্সি ডাকলাম। প্রতিবারই বাসা বদলাবার সময় ট্যাস্কিওয়ালার সাথে একটা কথা বার্তা হয়। এবারো হলো। ভদ্রলোক বাংলাদেশের এবং ঢাকার। এবং সেকারণে এখানাকার সিলেটি বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে খুব একটা সদ্ভাব নেই। কথা বার্তায় লাভ যেটা হলো সেটা হচ্ছে সে মিনিমান পনের টাকা ভাড়ার বদলে দশ টাকা নিলো। যে দূরত্ব এসেছি তাতে অবশ্য ৫ টাকার বেশি ভাড়া হয় না। কিন্তু তাদের নিয়ম হচ্ছে কমপক্ষে পনের টাকা দিতে হবে যদি বাসা বদলাবার সময় ট্যাক্সি ভাড়া করা হয়। সেটা সে কমিয়েছে আমার জন্য।
সন্ধ্যা থেকেই প্রায় পুর্নিমার চাদের আলোয় সব ভেসে একাকার। ব্রড স্ট্রিটের প্রাণকেন্দ্রে বডলিয়ান লাইব্রেরির উপরে রাত একটায় সেই চাদঁটা একটা গোল চাকতির মতো ঝুলছিলো। সেটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি শেষবারের মতো কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসলাম। তারপর বেডশিট আর বেড কভার ইস্ত্রি করে বিছানা প্রস্তুত করলাম গা এলানোর জন্য।
এই রুম থেকে প্রথম মেইলটা করলাম বিশেষ একজনকে। ওর জন্য যে কী অশেষ মায়া জন্মে গেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। কিছুতেই ঘোর এবং মায়া কোনটাই কাটে না। আর কাটাতেও ইচ্ছে করে না।
দ্বিতীয় মেইলটা করলাম এমসিআর এর সদ্যসাবেক প্রেসিডেন্ট কে। সুইডিশ ছেলেটার উৎসাতেই এই পদে আমার নির্বাচনে আসা। খুবই উন্মুক্ত হৃদয় ওর। ওকে ধন্যবাদ নিয়ে মেইল করলাম।
এখানে দুই রুমের ফ্ল্যাট। একটা বসার ঘর আরেকটা শোবার। কাল বিকেল নাগাদ হয়তো বসার ঘর থেকে জিনিসপত্র সব গোছগাছ করতে পারবো। এখন একটা ঘুম দেয়া যেতে পারে। নতুন জীবনের পথে ক্লান্তিহানির প্রথম ঘুম হোক আজ ঘণ্টা চারেকের জন্য।
এনবি-৭.৩
হার্টফোর্ড কলেজ
ক্যাট স্ট্রিট অক্সফোর্ড।