মধ্যরাতে হঠাৎ ধুম ধাম, ফুটুস ফঠাস। ঘুম ভেঙে গেল সবার। সবার মাঝে চাপা উদ্বেগ, আশঙ্কা, এই মধ্যরাতে না জানি কোথায় কি ঘটল। কোথায় কোন সর্বনাশা ব্যাপার ঘটছে। হায় হায়!
ঘটনা ঘটছিল একটি গভীর গ্রামে। আমরা কোন এক উপলক্ষ্যে গ্রামে গিয়েছি, আমি মা ভাই বোন.....এখন এই বিপদ। আমার বয়স তখন ৭/৮? মনে হয় আরেকটু বেশি বা কম। বুদ্ধিসুদ্ধি তেমন হয় নি, তবে গুলি করলে যে মানুষ মারা যায় তা বেশ বুঝতে পারি। ফলে আমিও কিছুটা কৌতুহল কিছুটা উৎসাহ নিয়ে কোন এক সংবাদের অপেক্ষা করতে থাকি, রাত জেগে, সবার মত। রাত তখন ১২.০০টারও পর।
আমাদের এক দাদী, তিনি গ্রামেই থাকেন জীবনভর, অসম্ভব সাহসী মহিলা। তার সাহস প্রদর্শনের বিভিন্ন উদাহরণ আছে। সেদিন সবাই যখন (বাড়িতে পুরুষ কেউ ছিল না) ভয়ে জড়সড়, যথারীতি এগিয়ে এলেন তিনি। হাতে লন্ঠন, একটু কুজো, চব্বিশ ঘন্টা মুখে পান (মধ্য রাতে উঠেও পান খান) কাপড়টা হাঁটু ঠিক নীচ পর্যন্ত পরা। ছুটলেন। অনেকে বাধা দিল, এই সব বাধা যেন তার উৎসাহে আরো বাড়িয়ে দেয়।.....তিনি ছুটলেন।
দরজা বন্ধ করে সবাই (নারী ও শিশুরা) অপেক্ষা করে আছে কী সংবাদ আনেন তিনি। (গ্রামে প্রায় সবাই সবাইকে চেনে, ফলে মধ্যরাতেও তেমন বিপদের আশঙ্কা আমলে না নিয়েই তিনি ছুটতেন)। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। সুসংবাদ আনলেন। না তেমন কোন মারপিটের ব্যাপার নয়। সবাই নাকি "শহীদ মিয়া"রে মালা দিচ্ছে। তাই এই ফুটুস ফাটুস।
শহীদ মিয়া কে?
জানি না।
গোলাগুলি কেন?
গুলি নয়, বাজি ফুটাচ্ছে।
সবাই ওকে এত রাতে মালা দিচ্ছে কেন?
কি জানি!!
........ঘটনা জেনেছি পরদিন। মালা দেয়া হয়েছিল স্থানীয় একটি স্কুলে। তাও "শহীদ মিয়া"রে নয়, দেয়া হয়েছিল শহীদ মিনারে। কানের গন্ডগোলে ভুল সংবাদ শুনেছেন। পরের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি। শহীদ দিবস।
কিন্তু বাজি ফুটেছে কেন? ওটা শোক দিবস। আসলে গ্রামের ছোট ছোট ছেলেরা বুজতে পারে নি শহীদ দিবস শোক দিবস, আনন্দ করা যাবে না। তাই কেউ কেউ কিছু পটকার ব্যবস্থা করেছিল, যাতে যথাযথ (!) ভাবে শহীদ দিবস উদযাপন করা যায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



